সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর চেষ্টায় আপত্তি যুক্তরাষ্ট্রের

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সাংবাদিকদের হয়রানি ও যেকোনো ধরনের ভয় দেখানোর চেষ্টার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি জানায় বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। মঙ্গলবার (২৫ জুন) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকতা নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর রাখা এবং সরকারের স্বচ্ছতার জন্য তারা মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন। সাংবাদিকদের তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা দিতে হয়রানি ও ভয় দেখানোর যে কোনো প্রচেষ্টার ব্যাপারে তারা আপত্তি জানান।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে বলেন, পুলিশের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করায় সম্প্রতি গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক দুর্নীতির তুলনায় এই প্রতিবেদনগুলো যৎসামান্য। নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম এসব দুর্নীতির ঘটনা প্রায়ই উপেক্ষা করে।
একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশ্যে বলেছেন, তারা দুর্নীতির নানা ঘটনা জানা সত্ত্বেও প্রকাশ করতে পারেন না। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি ও দুর্নীতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নেবে? এই প্রশ্নেরই উত্তর দেন ম্যাথিউ মিলার।
আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তরের এ মুখপাত্র বলেন, কার্যকর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বজায় রাখতে এবং সরকারের স্বচ্ছতা প্রচারে মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকাকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা, যেকোন হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি রয়েছে বলেও জানান মিলার।
ভারতে সরকারি সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক শেষে জারি করা যৌথ বিবৃতিতে অবাধ, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সুরক্ষিত এবং নিয়মভিত্তিক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিষয়ে উভয় দেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। বিবৃতিতে আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতায় উভয় দেশের অংশীদারির অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি কি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একই স্বার্থের প্রতিফলন কিনা প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক।
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ওই প্রতিশ্রুতিতে কী রয়েছে তা পড়া হয়নি। এমনকি বিবৃতি নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করি। এটি সেই অঞ্চলে আমাদের স্বার্থ ও সংশ্লিষ্টতার একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশের সাবেক ও বর্তমান পুলিশ সদস্যদের অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত-প্রচারিত হয়। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দেশের সব গণমাধ্যমের সম্পাদক বরাবর চিঠি দেয় বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, যা পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আকারে প্রকাশিত হয়। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠির শেষাংশে অনুরোধ জানানো হয় জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে। সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের জন্যও অনুরোধ জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
- পুলিশ সার্ভিসের বিবৃতি কি বেনজীর-আছাদুজ্জামান মিয়াকে ‘সুরক্ষা’ দেয়ার চেষ্টা?
- পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি প্রত্যাহারের দাবি
- পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বিএফইউজে ও ডিইউজের গভীর উদ্বেগ
- দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা: টিআইবি