ছাগলকাণ্ড
ইফাত মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে, জানালেন এমপি নিজাম

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ০২:০১ পিএম

রাজধানীর সাদেক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনা মুশফিকুর রহমান ইফাত আলোচনার তুঙ্গে। ছবি: ভোরের কাগজ
রাজধানীর সাদেক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনা মুশফিকুর রহমান ইফাত এখন আলোচনার তুঙ্গে। বলা হচ্ছে, তার বাবার নাম রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান। যদিও ইফাতের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই বলে জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী জানিয়েছেন, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই তার বাবা। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে তিনি এসব কথা বলেন।
নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, ইফাত এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে। ধারণা করছি রাগ করে মতিউর রহমান ইফাতের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন। মতিউর রহমান নিয়মিত দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এর আগে মতিউর রহমান বলেন, ‘ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল ওই ছেলেকে আমি চিনি না। সে আমার সন্তান নয়। আমার নাম জড়ানোয় আমি ও আমার পরিবার অনেক বিব্রত।’
ছাগলটি কেনা প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুরে অবস্থিত ‘সাদিক এগ্রো’ ফার্মের কর্ণধার মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন জানান, আলোচিত সেই তরুণ শুধু ১ লাখ টাকা দিয়ে ছাগলটি বুক করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পুরো টাকা পরিশোধ করে ছাগলটিকে খামার থেকে বাড়িতে নিয়ে যাননি এখনও।
সাদেক এগ্রোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, যে ছাগলের দাম নিয়ে এত জল্পনা কল্পনা, তা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতের ছাগল। এ জাতের নাম ‘বিটল’ এবং বাংলাদেশে এটি এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ছাগল।
আরো পড়ুন: সাদিক এগ্রোর ইমরানের বিরুদ্ধে পল্টি মারার অভিযোগ
আরো পড়ুন: ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনা ইফাত আমার ছেলে না
আলোচিত ওই ধূসর বাদামি রঙের ছাগলটির ওজন ১৭৫ কিলোগ্রাম এবং উচ্চতা ৬২ ইঞ্চি। প্রায় দুই মাস আগে এটিকে যশোরের একটি হাট থেকে ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় কেনা বলে সাদেক এগ্রোর দাবি। ফেসবুকের এই ছাগলের সঙ্গে ওই যুবক ছবি দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় সমালোচনা। এক রাজস্ব কর্মকর্তা কীভাবে এতো দামে ছাগল কিনলেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে। ১৫ লাখ টাকা দামের ছাগল ১২ লাখ টাকায় কিনে ভাইরাল হন ইফাত। পরে জানা যায়, তার বাবা রাজস্ব কর্মকর্তা। সরকারি চাকরি করে কীভাবে এত দামের ছাগল কিনলেন তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
রাজধানীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের ইমপেরিয়াল সুলতানা ভবনের পঞ্চম তলায় থাকেন ইফাত। তবে এখন সেখানে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ইফাত কয়েকদিন আগে এখান থেকে চলে গেছেন। তারা কয় ভাই-বোন আমি জানি না।
গত মঙ্গলবার মোবাইল ফোনে ইফাত জানান, তিনি ছাগলটি কেনেননি। সাদিক এগ্রোর মালিকের কথামতো শুধু কেনার অভিনয় করেছেন। ওই এগ্রোর মালিক ইমরান ভাই আমার খুব কাছের। তিনি আমাকে বলেন, ছাগলটাকে একটা থাপ্পড় দাও, দেখ সে কি করে। এরপর আমি এটি করেছি। এরপর ছবি তুলেছি এবং বলেছি ছাগলটি আমি কিনেছি। আসলে এটি কেনা হয়নি। আমার বাসাতেও আনা হয়নি।
সাদিক এগ্রো বলছে, ইফাত ছাগলটি কেনার জন্য ১ লাখ টাকা বায়না দিয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার পর আর নেননি।
ইফাতের কথিত বাবা রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান দাবি করেন, ভাইরাল ভিডিওতে থাকা যুবককে তিনি চেনেন না। তার একমাত্র ছেলের নাম আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব।
মতিউর রহমান বলেন, আমি আর্শ্চয হয়েছি। এমনভাবে ট্রোল হচ্ছে, যেটা আমার পরিবারে জন্য ক্ষতিকর। আমার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করে। এখন সে দেশে আছে। এসব কাজ ও কখনই করে না।
তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। এতে আমি বিব্রত। আমি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহায়তা চেয়েছি। এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপে নেব।
ইতোমধ্যে চাউর হয়েছে, এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমান দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর নাম লাইলা কানিজ। বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তিনি। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান মুশফিকুর রহমান ইফাত।