টিআইবি
তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে কোটিপতি ১০৬ প্রার্থী

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম

ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রায় ৬৭ শতাংশই ব্যবসায়ী এবং কোটিপতি প্রার্থী রয়েছেন ১০৬ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ৯০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন কোটিপতি।
সোমবার (২৭ মে) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের তথ্য (হলফনামার ভিত্তিতে) বিশ্লেষণ করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিশ্লেষণে উঠে আসা তথ্য ও পর্যবেক্ষণ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়েছে তারা।
টিআইবি জানিয়েছে, প্রার্থীদের হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের যে হিসাব দেয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতে কোটিপতির হিসাব করা হয়েছে। ভূমির মতো স্থাবর সম্পদের মূল্য নির্ধারণ কঠিন হওয়ায় তা কোটিপতির হিসাবে আনা হয়নি।
টিআইবির বিশ্লেষণে দেখা যায়, তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশই নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন কৃষিকাজ। পেশার ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন আইন পেশা (৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ) ও শিক্ষকতা (৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ)।
আরো পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় রেমাল: ১৯ উপজেলার ভোট স্থগিত
একইভাবে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদেরও ৬৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ নিজেদের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ গৃহিণী। গৃহস্থালির কাজকে তারা পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের প্রায় ৩২ শতাংশ পেশায় ব্যবসায়ী।
গত ২১ মে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ৭১ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি ছিলেন ১০৫ জন। এর আগে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ৭০ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় আসছেন কি না এবং মুনাফা করার উদ্দেশ্যে আসছেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। তথ্য বলছে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতায় থাকলে অনেকের আয় ও সম্পদ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ফলে জনস্বার্থের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে। অন্যদিকে কৃষিজীবী ও শিক্ষকতায় যুক্ত প্রার্থীদের সংখ্যা কমছে।
আরো পড়ুন: ঢাকা থেকে ১০ ফ্লাইট বাতিল
এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের অংশগ্রহণ থামাতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপেও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের ১৮ আত্মীয় অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগরের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে আহসানুল আলম, নওগাঁর রানীনগরের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেনের ছেলে রাহিদ সরদার ও নরসিংদীর শিবপুরের সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। এর আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপেও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের ১৭ আত্মীয় অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর ইকরামুল হক ও ডেটা ভিজুয়ালাইজেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর কে এম রফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। হলফনামা বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের ডেটা ভিজুয়ালাইজেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর রিফাত রহমান।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে আগামী বুধবার (২৯ মে) দেশের ৯০ উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। যদিও দ্বিতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলায় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় সব পদে একক প্রার্থী থাকায় ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। দুটি উপজেলায় ভোট আগে স্থগিত করা হয়। আর ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে ১৯টি উপজেলায় ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।