মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
যেসব জটিলতার মুখে পড়তে যাচ্ছেন সাবেক সেনাপ্রধান

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪, ০৫:৫১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় সোমবার (২০ মে) মধ্যরাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে সাবেক জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে, পূর্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। এর ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হবেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, তার (আজিজ আহমেদ) কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে।
এদিকে এই নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক সুযোগ সুবিধা হারানোসহ আন্তর্জাতিকভাবে নানা জটিলতার মুখোমুখি হবেন আজিজ আহমেদ । দেখে নেয়া যাক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের কারণে নানা বাধা ও জটিলতাসহ তিনি কি কি হারাবেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন থেকে জেনারেল আজিজ আহমেদ আর ভ্রমণ করতে পারবেন না। শুধু তিনি নন, তার পরিবারের সদস্যরাও প্রবেশের ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এছাড়া তার যদি মার্কিন কোন ভিসা থেকে থাকে তাহলে সেটিও বাতিল হবে। একইভাবে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মার্কিন ভিসাও বাতিল করা হবে।
স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া যেকোনো ব্যক্তির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেসব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি থাকে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। তার যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোন বাসা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি থেকে থাকে তাহলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। যদি যুক্তরাষ্ট্রে তার ব্যাংক হিসাব অর্থাৎ ব্যাংক একাউন্ট থাকে তাহলে সেটিও জব্দ করা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র তা বাজেয়াপ্ত করবে। এছাড়াও তার পরিবারের কোনো সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকলে সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বাজেয়াপ্ত করা হবে।
ব্যবসা করতে পারবেন না
জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কোন বাণিজ্য করতে পারবে না। আজিজ আহমেদের কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো পণ্য রপ্তানি করতে চায় তাহলে তা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে এবং তা বারিত হবে। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনি কোন পণ্য আমদানি করারও সুযোগ পাবেন না।
মার্কিন বন্ধু রাষ্ট্রে ভিসা বিড়ম্বনা
নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যারা বিভিন্ন সামরিক এবং অর্থনৈতিক জোটে আছে সেসমস্ত দেশগুলোতেও জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রবেশে হতে হবে নানা বিড়ম্বনার শিকার । কারণ মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা থাকার ফলে যেসব দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন রকম জোটে আছে সেসমস্ত দেশগুলো তাকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। এর ফলে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি রাষ্ট্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও সরাসরি এ দেশগুলো মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রতিপালনে বাধ্য নয়। কিন্তু অতীতের রেকর্ড বলেছে ইতোপূর্বে যাদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিলো তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থক রাষ্ট্রগুলো যেমন, কানাডা, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলোতে প্রবেশ করতে পারেননি।
আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে কার্ড ব্যবহারে জটিলতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত যেসমস্ত ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড রয়েছে যেমন, ভিসা, মাস্টার কার্ড ইত্যাদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি জটিলতার মুখে পড়তে পারেন। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে বৈশ্বিক লেনদেন হয়। তার মানে সেসব ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। ফলে এসমস্ত কার্ড ব্যবহারে সমস্যার মুখে পড়তে পারেন সাবেক সেনাপ্রধান এবং তার পরিবারের সদস্যরা।
এছাড়াও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকার ফলে অন্যান্য দেশে যাওয়া ভিসা প্রাপ্তি এমনকি ঐ সমস্ত দেশে আর্থিক বা অন্য কোন বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রেও তিনি প্রশ্নের মুখোমুখিসহ হয়রানির শিকার হতে পারেন।