'জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি ২০২৪' একটি সময়োপযোগী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ মে ২০২৪, ০৯:০১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, 'জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি ২০২৪' একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গুরুত্বপূর্ণ নীতি বা দলিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ নীতি বা অভিধানে এমন কিছু নেই যা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা কোথায় আছি, কোথায় যেতে চাই- সে বিষয়ে সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সব দিকনির্দেশনা এতে দেয়া রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের কার্নিভাল হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত 'জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি ২০২৪' সম্পর্কিত অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি যেমন সঠিক সময়ে প্রণীত হয়েছে, তেমনি এটি অবহিতকরণের এটিই ছিলো উপযুক্ত সময়। সবকিছুতেই সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি ঘোষণা করেন যেটি ছিলো এর উপযুক্ত সময়। তিনি সঠিক সময়ে সঠিক দাবি তুলেছিলেন ও সঠিক কৌশল অবলম্বন করেছিলেন বলে এটি সার্থক হয়েছে।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানীসহ অনেক নেতাই এদেশের স্বাধীনতা চেয়েছেন। কিন্তু তারা কেউই জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু হতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দন বুঝতেন। তার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন হয়েছে।
আরো পড়ুন: চৌদ্দ দল আছে, থাকবে: শেখ হাসিনা
শিল্পমন্ত্রী বলেন, জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি ২০২৪ একটি 'বিজনেস কনস্টিটিউশন' বা 'ব্যবসা সংবিধান'। এ মূল্যবান দলিল এদেশকে অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশ ছোট হলেও সম্পদের কোনো ঘাটতি নেই। ভূমি, সড়ক অবকাঠামো, নদী, সমুদ্র ও আকাশপথসহ আমাদের সব ধরনের সম্পদ বিদ্যমান। প্রয়োজন এর সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
তিনি আরো বলেন, উৎপাদিত পণ্য দ্রুততম সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারসহ সারাবিশ্বে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে এ নীতি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি একটি ব্যতিক্রমধর্মী নীতি এ কারণে যে এখানে নীতি বাস্তবায়নে সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং একইসঙ্গে তা সমাধানের পথ বাতলে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ যুগোপযোগী নীতি প্রণয়নে ভূমিকা রাখায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন ফেডারেশন অভ বাংলাদেশ চেম্বারস অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক, বিশিষ্ট নারী ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও শিক্ষাবিদ ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ লিমিটেড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম উল হক এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।'জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি ২০২৪: এন ওভারভিউ' শীর্ষক উপস্থাপনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের মহাপরিচালক শাহিদা সুলতানা।
আরো পড়ুন: বিএনপির মুখে আন্দোলনের হাঁকডাক হাস্যকর
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি 'ভিশন ২০৪১' এর ভিত্তিস্বরূপ। এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি যাতে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর স্টেটম্যানশিপের বড় উদাহরণ। তিনি বলেন, প্রথাগত ধ্যানধারণার বাহিরে এসে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে। অল্প সময়ে নির্ভুলভাবে তৈরি এ নীতি একটি লিভিং ডকুমেন্ট। সবচেয়ে বড় কথা, এটি নিজের দেশ ও নিজেদের মেধায় প্রণীত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতি।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো 'জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি ২০২৪' বাস্তবায়ন। তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের মেয়াদ ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এ সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নীতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষ পণ্য পরিবহণ ও সেবা নিশ্চিতকল্পে প্রণীত 'জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি ২০২৪' গত ৮ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ সভায় অনুমোদিত হয়েছে। সর্বসাধারণকে উক্ত নীতি সম্পর্কে অবহিতকরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক এ অবহিতকরণ সভা আয়োজন করা হয়েছে।
পরে মন্ত্রী সম্মানিত অতিথি ও আলোচকবৃন্দের উপস্থিতিতে "লজিস্টিক্স" শীর্ষক প্রকাশনা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং 'লজিস্টিক্স বাংলাদেশ' এর ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।