এইডস রোগীদের নি:সঙ্গ জীবন

রুমানা জামান
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৫ পিএম

ঢাকার কড়াইল বস্তিতে তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে বাস করেন অটো রিকসা চালক সুরুজ মিয়া। স্থানীয় বখাটে যুবক মিলনের পাল্লায় পড়ে বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন শুরু করেন সুরুজ। নেশার মাত্রা এতোটাই বেড়ে যায় যে এক পর্যায়ে শিরায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক না দিলে তার মরন দশা শুরু হয়। বছর দেড়েক মাদক নেয়ার পর ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে এসে হুট করেই বিছনায় পড়েন তিনি। রক্ত পরীক্ষায় এইডস ধরা পড়ে সুরুজের। ৪৪ বছর বয়েসী সুরুজ মিয়া পা রাখেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে।
এইডস আক্রান্তের খবর শুনে স্ত্রী-সন্তান তাকে ছেড়ে গেছে। ভাই-বোনেরাও আর খোঁজ নেয় না। প্রথমে প্রতিবেশিরা দেখলে দূর ছাই করতো; এখন আর বাড়িতে থাকতেই দেয় না। সেই থেকে রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালেই আছেন। গত তিন বছর ধরে সেখানেই আছেন তিনি। হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দিলেও দুই একদিন পর আবার ফিরে আসেন হাসপাতালে। তার দিন চিকিৎসক, নার্স-আয়ার সেবা ও সাহচর্যে হাসপাতালেই একাকী জীবন যাপন করছেন সুরুজ। সুরুজের মতই একাকী জীবন কাটছে দেশের অধিকাংশ এইডস রোগীর। সমাজ এখনো স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি এইডস রোগীদের। এইডস শনাক্ত হওয়ার পরই থেমে যাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক জীবন। কিছু এনজিও এইডস রোগীদের স্বাভাবিক জীবনের প্রচেষ্টায় কাজ করে তবে সে সংখ্যা খুবই নগণ্য।
চিকিৎসকরা বলছেন, এইডস আক্রান্ত হলেই মৃত্যু এমন ধারণার পরিবর্তন করতে হবে। যথাযথ চিকিৎসায় এইডস নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। অথচ সমাজ এখনো স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি এইডস রোগীদের। এইডস শনাক্ত হওয়ার পরই থেমে যাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক জীবন। অথচ প্রথম আক্রান্তের চার দশক পরেও আমরা অনেকেই জানি না, জানলেও মানি না যে, শুধু যৌন সঙ্গমই এইচআইভি সংক্রমণের একমাত্র কারণ নয়। অন্যান্য কারণেও মানুষ এইডসের নির্দোষ শিকার হতে পারে।
ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকেবলেন, সহায়ক পরিবেশ ও সুযোগ পেলে এইডস রোগীরাও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। এমনকি তারা বিয়ে করতে পারে এবং নন ইনফেকটেক সন্তান জন্ম দিতে পারে। তিনি বলেন, এইডস রোগীদের শুধু ওষুধ আর চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেই হবে না। তাদের একাকীত্বের খোঁজ নিতে হবে। তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা, ক্লাব গঠন, খেলাধুলা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে তা সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে এনজিওরা এগিয়ে আসতে পারে এইডস রোগীদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এইডস-এসটিডি প্রোগ্রামের (এনএএসপি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়। ধারণা করা হয়, দেশে এইডস রোগীর সংখ্যা ২০হাজারের মতো। প্রায় ৬ হাজার ৭২ রোগী এখনো শাণাক্তের বাইরে। দেশে একজন এইডস আক্রান্ত রোগীর পেছনে সরকারের মাসে বর্তমানে খরচ ৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা।
এইডস নিয়ে একুশ শতকেও মধ্যযুগীয় কুসংস্কার:
রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টটা দেখে ডাক্তারকে বেশ চিন্তিত মনে হলো। কয়েক সেকেন্ড তাকালেন মারুফের দিকে। চিন্তিত ডাক্তার ডেকে নিলেন মারুফের সঙ্গে আসা গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী নয়রকে। জানা গেল, মারুফের এইচআইভি পজিটিভ। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো তার। হিম হয়ে আসছে শরীর।‘জীবনে তো কোনো অনৈতিক কাজ করিনি। তাহলে কেন?’ বুকের ভেতর কান্নার রোল! বিচলিত হয়ে পড়লেন মারুফ। ডাক্তার এইচআইভি সম্পর্কে সব বোঝালেন। মনে পড়লো, মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসার মাস ছয়েক আগের কথা। একবার সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হয়েছিলেন। তখন ভারতীয় এক সহকর্মী তাকে রক্ত দিয়েছিল। নিশ্চয়ই সেই রক্ত থেকেই শরীরে মরণ রোগের জীবাণু বাসা বেঁধেছে।
এ ছুটিতেই বিয়ে করার কথা। কিন্তু শুরুর আগেই সব শেষ! মৃত্যুভয়ে বুকটা ক্ষয়ে যাচ্ছে আমজাদের। কীভাবে বাঁচবেন? ক’দিন বাঁচবেন? কী করবেন? কোথায় যাবেন? লোকে জানলে কী হবে? মালয়েশিয়াও তো আর যাওয়া হবে না! মনে দুশ্চিন্তার পাহাড়। এইচআইভি পজিটিভ হলেই মৃত্যু অবধারিত, এ ধারণা ভুল। নিয়মিত ওষুধ খেলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। মানসিক চাপমুক্ত থাকলে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা যায়। সংসার, কাজ, সবই করা যায়। ডাক্তারের কথায় মারুফের মনে কিছুটা আশা জাগলো।
এই দুঃসময়ে পরিবারের সদস্যরা পাশে থাকতে পারবে; কথাটা গোপন রেখে চিকিৎসাও চালিয়ে যাওয়া যাবে। এক বুক আশা নিয়ে বাড়ি ফিরলেন মারুফ। কিন্তু কথাটা জানাজানি হয়ে গেল। সেইসঙ্গে যেন অচেনা হয়ে গেলো চেনা পৃথিবীটাও। আপনজনরাও এমন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে, যেন অপরিচিত কেউ। আমজাদ ঘরবন্দি হযে পড়লেন।পঞ্চায়েতে সালিশ বসলো। পাড়ার লোকজন বলছে, মালয়েশিয়া গিয়া খারাপ কাজ করছে। সেই কারণেই তার এইডস হইছে। তারে গ্রাম ছাড়া করণ লাগবো। নাহলে তার থেইকা পুরা গ্রামে এইডস ছড়ায়া পড়বো। রাতের অন্ধকারে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হলেন মারুফ।
এরপর গড়িয়েছে অনেক জল। নিঃসঙ্গতার রাহু গ্রাস করেছে প্রতিটি মুহূর্ত। সেই সময় যেন ফেরেশতা হয়ে দেখা দিলেন এক ডাক্তার। তার পরামর্শে একটি এনজিওতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এইচআইভি পজেটিভ জেনেও তাকে বিয়ে করেছেন আরেক এইচআইভি পজেটিভ নারী। মারুফ জানান, তারা সুখে আছেন। নিয়মিত ওষুধ খেয়ে সুস্থ মানুষের মতোই জীবন যাপন করছেন।
আমাদের সমাজে এইচআইভি আক্রান্ত অনেক রোগীর পরিণতি মারুফের চেয়েও খারাপ হয়। এর কারণ এইচআইভি-এইডস সম্পর্কে সমাজের ভুল ধারণা। লোকজন মনে করেন, এইচআইভি খারাপ মানুষের রোগ। এ রোগ তাদেরই হয়, যারা অনিরাপদ যৌনতায় অভ্যস্ত। তাদের বিশ্বাস, এই রোগ হলে মৃত্যু অবধারিত। সুতরাং কারো শরীরে এইচআইভি ধরা পড়লে সর্ব প্রথমেই তাকে ঘিরে ধরে মৃত্যুচিন্তা। এরপর সমাজ তাকে কীভাবে গ্রহণ করবে সেই দুশ্চিন্তা। এসব দুশ্চিন্তা এইচআইভি আক্রান্তদের জীবনে যে যন্ত্রণা বয়ে আনে, তা তার মৃত্যুকে তরান্বিত করে। ম্লান করে দেয় বেঁচে থাকার আশা। তাই সমাজ ও স্বজন থেকে তারা আড়ালে বা নিভৃতে থাকার চেষ্টা করে। কেউ কেউ বেছে নেয় আত্রহত্যার পথ। আসলে একঘরে করে রোগীদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া হয়।
বেসরকারি সংস্থা ‘শিক্ষা স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রম’- শিসউকের তথ্য বলছে, আমাদের দেশে সর্বপ্রথম যার রক্তে এইচআইভি শনাক্ত হয়, মানুষ তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করেছে পরিবার থেকে। উচ্ছেদ করেছে বাস্তুভিটা থেকে। এমনও দৃষ্টান্ত আছে যে, রোগীকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল গরাদে। তাকে দেখতে জমেছে হাজারো মানুষের ভিড়। অনেকেই গালাগালি করে বলছে, ওকে গুলি করে মারা উচিত।’ কেউ বলছে, না গুলি করে নয়, পাহাড়ে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।’ আরেক দলের শঙ্কা, ছাই থেকেও ক্ষতি হতে পারে। একুশ শতকেও আমদের সমাজ থেকে মধ্যযুগীয় সেই কুসংস্কার দূর হয়নি!
প্রথম আক্রান্তের চার দশক পরেও আমরা অনেকেই জানি না, জানলেও মানি না যে, শুধু যৌন সঙ্গমই এইচআইভি সংক্রমণের একমাত্র কারণ নয়। অন্যান্য কারণেও মানুষ এইডসের নির্দোষ শিকার হতে পারে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, রোগ সম্পর্কে ভুল ধারণাই আজ এইচআইভি প্রতিরোধের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেডিকেল সায়েন্স বলছে, এইচআইভি ছোঁয়াচে নয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে, একই বাতাসে নিশ্বাস নিলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে, একই পাত্রে খাবার ও পানি খেলে, আক্রান্ত ব্যক্তির সামগ্রী ব্যবহার করলে বা তার ব্যবহৃত টয়লেট ব্যবহার করলে এইচআইভি ছড়ায় না। কিন্তু সমাজে এ নিয়ে রয়েছে ভ্রান্ত ধারণা। একঘরে হওয়ার ভয়ে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীরা তথ্য গোপন করতে বাধ্য হন। যা আমাদের জন্য আত্মঘাতী। জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইডসের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে চিকিৎসা না নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ।
প্রচলিত ধারণা হলো, এইচআইভি পজিটিভ মানেই এইডস। কিন্তু একথা ঠিক নয়। এইচআইভি সংক্রমণ থেকে এইডস হয় ঠিকই। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, এইচআইভি পজিটিভ হলেই এইডস হবে। ইউএনএইডস বলছে, আক্রান্ত ৪৭ শতাংশ রোগীতে এইচআইভি জীবাণুর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রয়েছে। কাজেই এই ৪৭ শতাংশ রোগী এইচআইভি পজিটিভ হলেও এইডস রোগী নয়। এইডস হলো সেই পর্যায়, যখন রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
জরুরি এই তথ্যটি এখনও অনেকেই জানে না যে, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ হলেও যেমন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা যায়, তেমনি এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে রেখেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা যায়। প্রয়োজন শুধু নিয়মিত ওষুধ খাওয়া। যা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ২৫টি সরকারি হাসপাতাল এবং আটটি বেসরকারি সংস্থায় বিনামূল্যে এইচআইভির চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে এই সেবা যে যথেষ্ট নয়, তা বলাই বাহুল্য। পর্যাপ্ত নয় এইচআইভি বিষয়ক প্রচারণাও। তুলনা করলে দেখা যায়, বাংলাদশে জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি যতটা ফলপ্রসূ হয়েছে, ততখানি ফলপ্রসূ হয়নি আইচআইভি প্রতিরোধ ক্যাম্পেইন।
এইচআইভি প্রতিরোধে সফল হতে হলে সেবার পরিধি বাড়াতে হবে। তার আগে জরুরি হলো, এই রোগ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর করা। এইচআইভি প্রতিরোধে নিতে হবে ব্যাপক প্রচারণার উদ্যোগ। গড়ে তুলতে হবে কার্যকর সামাজিক আন্দোলন। তা না হলে অধরাই থেকে যাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অর্জন। বাধাগ্রস্ত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের স্বপ্ন।
বাংলাদেশে এইডসের সেবা:
বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। এ দেশে সরকারিভাবে এইডসের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। বেসরকারি পর্যায়ে এই সেবা নেয়ার সুযোগ এখনো নেই। এইডস শনাক্ত করার জন্য সারা দেশে ২৭টি কেন্দ্র রয়েছে আর চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় ১১টি কেন্দ্র থেকে। বাংলাদেশের সরকারি বক্তব্য অনুযায়ী, যাদের শরীরে এইডস শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ৮৪ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে পারছে। সংক্রমিতদের মধ্যে রয়েছেন নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রবাসী শ্রমিক, হাসপাতালে প্রসব সেবা নিতে আসা মা ও রোহিঙ্গা। আক্রান্তদের ৩৩ শতাংশ সাধারণ মানুষ।
ত্বকের স্পর্শ বা মুখের লালায় এইচআইভি ছড়ায় না। এইডসের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। বেশিরভাগ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেন। তবে তাদের নির্ধারিত কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ করতে হয় এবং চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। বড়দের ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধ আর শিশুদের জন্য সিরাপ দেয়া হয়ে থাকে । তবে কারও যদি এইডসের পাশাপাশি অন্য কোন শারীরিক জটিলতা থাকে, তাহলে তার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেই রোগের চিকিৎসা নিতে হবে।
বাংলাদেশ কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটিং মেকানিজমের (বিসিসিএম) সদস্য হাফিজ উদ্দিন মুন্না ভোরের কাগজকে বলেছেন, বাংলাদেশের সরকার এইডস রোগের চিকিৎসায় অনেক চেষ্টা করছে, কিন্ত কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। এইডস রোগীরা তাদের জন্য দরকারি ওষুধ পাচ্ছেন। কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর জন্য অন্যান্য যেসব সেবা দরকার, যেমন তাদের জন্য পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং এবং মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। ওই জায়গায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। অনেকে আবার কিছুদিন পর ওষুধ ছেড়ে দেন বা নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যান। এটা কিন্তু চিকিৎসার জন্য একটি বড় সমস্যা তৈরি করে। তিনি বলেন, যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অনেকে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন। তাদের খাবার, কর্মসংস্থান, জীবনযাপনের ক্ষেত্রে পুনর্বাসন দরকার। কিন্তু সেটাও এখানে হচ্ছে না। অনেকের এইচআইভি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রোগ আছে, সেটার চিকিৎসার জন্য তাদের জন্য আলাদা খুব বেশি সুবিধা নেই।
তবে এই বক্তব্য পুরোপুরি মানতে রাজি নন জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো: আবদুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে স্ট্যান্ডার্ড অব অপারেটিং প্রসিডিউর দিয়েছে, সেটা অনুসরণ করেই আমরা এইচআইভি রোগীদের চিকিৎসা করে থাকি। সেখানেও আমাদের চিকিৎসার সফলতার হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবার আওতা বাড়ানোর যে লক্ষ্য ছিল, গত কয়েক বছরের তুলনায় সেটা বাড়ছে বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী রোগী ভোরের কাগজকে বলেছেন, অনেকে মনে করেন, এইডস হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু যারা জানে না, তারাই শুধু এই কথা বলে। নিয়মিত ওষুধ খেলে একজন মানুষ এই রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে না। আমি নিজে এই ওষুধ খাচ্ছি এবং ভালো আছি। তবে এখনো বাংলাদেশের অনেক এইডস রোগী আক্রান্ত হওয়ার পরেও এই রোগীর চিকিৎসা নিয়ে সংকোচে ভোগেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৭৬১ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫৮৮ জনের।তবে শনাক্ত হওয়া ব্যি ক্তদের মধ্যে ৬ হাজার ১০৪ জনকে চিকিৎসা সুবিধার আওতায় আনা গেছে। বাকি ১ হাজার ১২৫ জন সংক্রমিত ব্যক্তি এখনো চিকিৎসার বাইরে রয়ে গেছেন।
আজ বিশ্ব এইডস দিবস
আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি সরকারিভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে নিয়ন্ত্রিতভাবে এই দিবসটি সীমিত পরিসরে উদযাপন করা হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।