×

জাতীয়

প্রাণের দায়ে চিকিৎসা নিয়ে বিলের অঙ্কে মাথায় হাত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২০, ১১:৪৫ এএম

প্রাণের দায়ে চিকিৎসা নিয়ে বিলের অঙ্কে মাথায় হাত

প্রতীকী চবি

   

বাবা-মাসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫ জুন রাজধানীর বনশ্রীর ইয়ামাগাতা-ঢাকা ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন ডা. তন্ময় দাস (৩১)। ভর্তির ৪ দিন পর ৯ জুন বাবা সতীশ চন্দ্রধর দাস (৭২) মারা যান। ডা. তন্ময় ১৫ জুন এবং মা রুপালি দাস (৫৬) ১৭ জুন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। হাসপাতালে তাদের চিকিৎসাবাবদ খরচ ধরা হয় ৭ লাখ ৭৭ হাজার ২৬৯ টাকা। এর মধ্যে সতীশ চন্দ্রধর দাসের ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৬৫ টাকা, রুপালি দাসের ২ লাখ ৫৯ হাজার ৩৮০ টাকা এবং ডা. তন্ময় দাসের চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৯২৪ টাকা। রাজধানীর নামদামি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ব্যক্তির মা করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১২ দিন আগে ভর্তি হন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে। পরিস্থিতি খারাপ জানিয়ে তাকে ৪ দিন রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। এই ৪ দিনের বিল হিসাবে দেখানো হয়েছে ৬ লাখ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানান, তার মা এখনো হাসপাতালে ভর্তি। রোগীর চিকিৎসায় কোনো ধরনের প্রভাব পড়তে পারে এই আশঙ্কা থেকে তিনি বিস্তারিত তথ্য দিতে চাননি। তবে তিনি বলেন, খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। আম্মাকে এখনো কত দিন হাসপাতালে থাকতে হবে জানি না। বিল কত আসবে সেই শঙ্কাও করছি। তবে চিকিৎসকরা বলছেন আম্মার অবস্থা অনেকটাই ভালো। চিকিৎসার বিল দিতে গিয়ে হয়তো...। কথা সম্পূর্ণ করতে পারলেন না তিনি।

এর আগে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ ওঠে। একজন করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য ধরিয়ে দেয়া হয় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিলের কাগজ। এরপর রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক দেন-দরবার করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেড় লাখ টাকা বিল রাখতে রাজি হয়। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারকে ফেরত দেয় ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

সরকারি হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে প্রিয়জনকে বাঁচাতে অনেকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু চিকিৎসার মাঝপথে কিংবা শেষে রোগীর স্বজনদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় বিশাল অঙ্কের বিলের কাগজ। যা হয়তো অনেকের পক্ষে পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য। একই টেস্টের জন্য একেক হাসপাতাল রাখছে ভিন্ন ভিন্ন দাম। এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফোকাল পারসন ও অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান জানিয়েছিলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নির্ধারিত সরকারি-বেসরকারি হাসাপাতালের খবর সরকার বহন করবে। অনান্য বেসরকারি হাসপাতালগুলো চাইলে করোনা রোগীদের চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য রোগীদের কাছ থেকে যুক্তিসঙ্গত খরচ নিয়ে সেবা দিতে পারে। টেস্টের ফির তারতম্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব ভোরের কাগজকে বলেন, কোন টেস্টের জন্য কত টাকা ফি নেয়া হবে, একটি টেস্টের জন্য মেশিন এবং উপকরণের মান কী হবে তা সরকার নির্ধারণ করে দেয়নি। যদি মান নির্ধারণ করে দিত তাহলে হয়তো টেস্ট করার সর্বোচ্চ ফি নির্ধারণ করে দেয়া সম্ভব হতো। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। যেমন ডেঙ্গুর সময় ডেঙ্গু টেস্টের ফি সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছিল।

বেসরকারি হাসপাতালে যুক্তিসঙ্গত খরচ দিয়ে রোগীদের সেবা নেয়ার প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, সব নাগরিকের চিকিৎসা ব্যয় সরকারকেই বহন করতে হবে। দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে এ ধরনের আইনও রয়েছে। সুতরাং দুর্যোগকালে চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার বেসরকারি খাতের ওপর ছেড়ে দিতে পারে না। আগামী ৩ মাস সময়ের মধ্যে করোনার প্রথম তাণ্ডব কমে আসবে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী। তাই অন্তত আগামী ৩ মাস সময়ের জন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলো ‘লাভ নয় লোকসান নয়’ ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে দুটি ভাগ রয়েছে। একটি হলো তারকা খচিত; অন্যটি হলো তারকাবিহীন। তারকা খচিত হাসপাতালগুলোর বিল নিয়ে আগে থেকেই রোগীদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। এই দুর্যোগেও তাদের ব্যবসায়িক মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে।

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, অতি দ্রুত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেড, শয্যা, ল্যাবরেটরি সুবিধা ও অন্য সেবাগুলোকে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার অধীনে আনা প্রয়োজন। ডেটাবেইস তৈরি করে প্রতিটি মহানগর ও জেলায় হাসপাতাল শয্যার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা করা প্রয়োজন। রোগীর চিকিৎসা ও হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ক্ষমতাবান নয়, চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তই এখানে চ‚ড়ান্ত হবে। এক্ষেত্রে অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ এবং স্বাস্থ্য খাতের সব দুর্নীতি বন্ধে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগী হলে সুফল আসবে। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী সরকার বিনামূল্যে সরবরাহ করবে। ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হলে সরকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সাহায্য করবে। মান ও মূল্য নিশ্চিত করে করোনা পরীক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। চিকিৎসাসেবার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দেবে। যারা চ্যারিটিভিত্তিক সেবা দেবে সরকার তাদের সুবিধা ও প্রণোদনা দেবে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা সরকারি-বেসরকারি খাতের সব ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হতে হবে। নীতিনির্ধারকদের অনুধাবন করতে হবে করোনাবিরোধী লড়াইয়ে জয়ী হতে হলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রসর হওয়া ছাড়া অন্যকোনো পথ খোলা নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App