×

জাতীয়

৯ কোটি গ্রাহক জানেন না কবে পাবেন স্মার্ট কার্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১২:১৯ পিএম

৯ কোটি গ্রাহক জানেন না কবে পাবেন স্মার্ট কার্ড
   

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলজিসের সঙ্গে ২০১৭ সালের শেষের দিকে চুক্তি বাতিলের পর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে অত্যাধুনিক পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) তৈরির যে পরিকল্পনা নির্বাচন কমিশনের এনআইডি অনু বিভাগ নিয়েছিল তাতে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

মেশিন অকেজো হয়ে পড়া, অত্যাধুনিক টেকনোলজির অভাব এবং দক্ষ জনবলের ঘাটতিতে কার্ড তৈরি প্রায় বন্ধের মুখে। এতে ২০১৮ সালের মধ্যে সবাইকে স্মার্ট কার্ড সরবরাহের কথা থাকলেও ২০১৯ সালের মধ্যেও তা সম্ভব হবে না বলে মনে করেছেন এনআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দেশের প্রায় সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে এখনো প্রায় ৯ কোটি ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছেনি। সব মিলিয়ে ভোটারদের স্মার্ট কার্ড সরবরাহ ও সংশোধন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

ইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইসির নিজস্ব জনবল, সেনাবাহিনী ও টাইগার আইটির প্রযুক্তিগত সহায়তায় প্রকল্পটি কোনো মতে চালু ছিল। বর্তমানে ওই প্রকল্পের আওতায় ৯টি মেশিনের মধ্যে ৫টিই অকেজো হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের স্থায়ীকরণের দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা চাকরি থেকে ইস্তফা দেয়ায় স্মার্ট কার্ড তৈরির ধারাবাহিকতায় বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে, দেখা দিয়েছে জটিলতা। এতে ২০১৯ সালের মধ্যে সব নাগরিককে স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করা অসম্ভব বলে মনে করছেন ইসির সংশ্লিষ্টরা। যদিও ২০১৮ সালের মধ্যে সবার হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সংস্থাটি।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভাণ্ডারে স্থাপিত নয়টি মেশিনে স্মার্ট কার্ড উৎপাদন করা হচ্ছিল। এখন পর্যন্ত ৪ কোটি কার্ড পারসোনালাইজেশন (অসম্পূর্ণ) করা হয়েছে। অবশিষ্ট রয়েছে ৫ কোটির মতো। তবে পারসোনালাইজেশন সেন্টারের নয়টি মেশিনের মধ্যে ৫টি মেশিন নষ্ট রয়েছে। দক্ষ কর্মীর অভাবে বাকি চারটি মেশিনেও ঠিকমতো উৎপাদন হচ্ছে না। প্রতি মাসে একটি মেশিনে ৫ লাখ স্মার্ট কার্ড বিতরণের জন্য প্রস্তুত করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০১৯ সালের মধ্যে বাকি ৯ কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসির এনআইডি বিভাগের কর্মকর্তারা। যদিও জাতীয় পরিচয়পত্র অনু বিভাগের পরিচালক আবদুল বাতেন বলেন, আমি যতটুকু জানি স্মার্ট কার্ড তৈরি চলছে, সব মেশিন বন্ধ নয়, শুনেছি কয়েকটি খারাপ। তবে সর্বশেষ তথ্য জানি না। আমার জানা মতে, স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং কিছু কিছু চলছে।

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র অনু বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি মেশিনে স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং চলছে। সব মেশিন বন্ধ নেই। আমরা নিজেরাই এ কাজ করছি। কোনো সমস্যা নেই। উপজেলা পর্যায়ে আমরা স্মার্ট কার্ড পাঠাচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের (ডিসেম্বর) মধ্যে নয় কোটি স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ সম্ভব কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিজেরাই করছি। দেখা যাক কতটুকু পারি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আবার আইডিয়া প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) নুরুজ্জামান খান ভোরের কাগজকে বলেন, দেশের সব নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেয়ার জন্য ইসি সরকারি তহবিল থেকে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সম্ভবত সহায়তা করবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। টাইগার আইটি ইসির বিভিন্ন ডাটাবেজ সংরক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বলে জানান তিনি। সূত্র জানায়, নিজস্ব অর্থায়নে স্মার্ট কার্ড প্রস্তুতি নিয়ে ইসি একটি কমিটি গঠন করে।

এ কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হায়দার আলী বলেন, সবাইকে স্মার্ট কার্ড দিতে আরো অন্তত দুই বছর লাগতে পারে। আঙুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেয়ার জন্য তখন যে ১০০ জোড়া যন্ত্র নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল, তার ৩৭ জোড়াই এখন অচল। যার ফলে কার্যক্রম ঢিমেতালে চলছে। শুনেছি কার্ড তৈরির মেশিনেও কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে ইসি সূত্রে জানা গেছে, সময়মতো স্মার্ট কার্ড সরবরাহ না করতে পারায় ইসির পক্ষ থেকে অবার্থুর বিরুদ্ধে মামলা করে ইসি। আবার ইসির কাছে পাওনা অর্থ আদায় করতে অবার্থুও ইসির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছে বলে জানা গেছে। যা এখনো বিচারাধীন রয়েছে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, আইডিয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিসের (ওটি) সঙ্গে ১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে (৮১৬ কোটি টাকার) চুক্তি করে ইসি। ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি কার্ড দেয়ার কথা থাকলেও ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা পর্যায়ে মাত্র এক কোটি ৯৮ লাখ (১২ দশমিক ২০ শতাংশ) কার্ড পৌঁছাতে পেরেছে। জুন পর্যন্ত তারা ঢাকায় ফাঁকা কার্ড পাঠিয়েছে ছয় কোটি ৬৩ লাখ ছয় হাজারটি। এর মধ্যে পারসোনালাইজেশন হয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ। ব্ল্যাক কার্ড দিতে পারেনি দুই কোটি ৩৬ লাখ চার হাজার। এ পর্যন্ত তারা বিল নেয় ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। প্রতি কার্ডের জন্য ফ্রান্সের কোম্পানি দাম নিত ২ ডলার। বারে বারে সময়ক্ষেপণ করায় বিশ^ব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App