ভোটের আগে কেন দিল্লি সফর, জানালেন পররাষ্ট্রসচিব

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম



পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এই বৈঠকে অগ্রাধিকার বিষয়গুলো হচ্ছে- রাজনৈতিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কানেক্টিভিটি বিষয়, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও অভিন্ন নদী সম্পর্কিত বিষয়, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়, উন্নয়ন ও প্রকল্প সহায়তা এবং কনস্যুলার ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা অন্যতমবাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক করতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লি যাচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে হওয়ায় এ সফর নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। তবে সবকিছু নাকচ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) থেকে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে যাচ্ছি না। দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠকের পাশাপাশি দিল্লিতে অবস্থিত ৯০টি দেশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত, যারা সেখান থেকে বাংলাদেশের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত, ঢাকার অগগ্রতি সম্পর্কে তাদের জানাবেন পররাষ্ট্র সচিব। এটি রুটিন মোকানিজম। এখানে দুই দেশের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। বৈঠকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন বলে তিনি জানান। বুধবার (২২ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন বার্তা দিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এই বৈঠকে অগ্রাধিকার বিষয়গুলো হচ্ছে- রাজনৈতিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কানেক্টিভিটি বিষয়, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও অভিন্ন নদী সম্পর্কিত বিষয়, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়, উন্নয়ন ও প্রকল্প সহায়তা এবং কনস্যুলার ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা অন্যতম বলে তিনি জানান। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কোনও বার্তা নিয়ে যাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনো বার্তা নিয়ে যাওয়া, বা এ সংক্রান্ত কিছু আমাদের এজেন্ডায় নেই। তিনি বলেন, আপনারা জল্পনা-কল্পনা করতে পারেন। কিন্তু আমি যেভাবে বলেছি, সেখাবেই এজেন্ডা তৈরি হয়েছে। সুতরাং, প্রধানত গত ১০ মাসে প্রচুর অগগ্রতি হয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা এবং নির্বাচনের পরে বা আগামী বছরে কোন কোন জায়গায় আরও বেশি কাজ করতে পারি, সে জায়গা ঠিক করা যাতে করে সময় নষ্ট না হয়। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে ঢাকায় ফরেন অফিস কনসালটেশন হয়েছে। সাধারণত বছরে একবার ফরেন অফিস কনসালটেশন হলেও বিশেষ প্রয়োজনে একাধিকবার হতে পারে। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমি মনে করি না অপ্রয়োজনীয় অন্য কোনো লুকোনো এজেন্ডা আছে। যেহেতু নির্বাচন সামনে, তাদের পক্ষ থেকে যদি কোনো কিছু জানার থাকে সেটা অবহিত করতে পারব। তবে আমি প্রধানমন্ত্রী থেকে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে যাচ্ছি না। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রার আমন্ত্রণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর দ্বিতীয় দফায় আগামী শুক্রবার দিল্লিতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। সভায় ঢাকার পক্ষে মাসুদ বিন মোমেন এবং দিল্লির পক্ষে বিনয় কোয়াত্রা যার যার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। চলতি বছরে দুইবার এফওসি করার কারণ ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্রসচিব। তিনি জানান, পর্যালোচনা করার জন্য যেতেই পারি। একাধিকবার হবে না (এফওসি) এমন কোথাও বলা নাই। বছরের প্রথমে হয়েছে, এখন আবার বছরের শেষে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে। সভায় আলোচনার বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এটা একটা রুটিন মেকানিজম। সেখানে দুদেশের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। ভারতের সঙ্গে আমাদের এ বৈঠকে অগ্রাধিকার যেসব বিষয় আছে- রাজনীতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি, জ্বালানি. বিদ্যুৎ ও অভিন্ন নদী সংক্রান্ত, আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক এবং বহুপক্ষীয় সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়, উন্নয়ন সহায়তা, কনস্যুলার সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয় থাকবে। এর বাইরেও আলোচনা হতে পারে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটির গুরুত্ব তুলে ধরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, কানেক্টিভিটি সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। এখন কিন্তু অনেকটা শেইপের মধ্যে এসে গেছে। নর্থ ইন্ডিয়া, মাতারবাড়ি আছে জাপানের সম্পৃক্ততার। ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের আগ্রহ আছে, আমেরিকার আছে। আমরা কি কি ধরনের প্রজেক্টস নিতে পারি সেখানে। আমরা আমাদের আউটলুকস বলেছি, সেটা নিয়েও আলোচনা করার সুযোগ আছে। আলোচনায় আরও কি কি থাকতে পারে, তা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, গ্লোবালের স্বার্থ সংরক্ষণে কীভাবে আমরা কাজ করতে পারি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বহুপক্ষীয় ফোরামে কীভাবে আমরা একে অপরকে সহযোগিতা বাড়াতে পারি, সে বিষয়গুলো এখানে আলোচিত হবে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কি ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও তাদের আপডেট দেব। কারণ, আমরা সবসময় তাদের সহযোগিতা চেয়ে এসেছি। এজেন্ডায় শুরুতে রাজনীতির প্রসঙ্গ রাখেন মাসুদ বিন মোমেন। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওদের নির্বাচন আছে সামনে। আমাদের নির্বাচন আছে। নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, এটা তো খুবই বহুপাক্ষিক সম্পর্ক; ট্রেড আছে, বিনিয়োগ আছে, পিপল টু পিপল কন্টাক্ট আছে, ভিসা ইস্যু আছে এগুলো যেন নির্বাচনের পরও স্মুথলি চলতে পারে। এ সফরকে রাজনৈতিক সফর বলা যায় কি না জানতে চাওয়া হয় মাসুদ বিন মোমেনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যাখ্যা কীভাবে দেবেন আমি জানি না। আমি মনে করি- নিয়মিত যে মিটিং হয়, এটাও সেভাবে হবে। এটা ঠিক যে সামনে আমাদের নির্বাচন আছে। পররাষ্ট্রসচিবের বক্তব্যে নির্বাচন পরবর্তী পরিকল্পনার কথা উঠে আসে। যদি পলিসিগত পরিবর্তন হয় তাহলে এত আগাম পরিকল্পনা বেশি সাহসী হয়ে গেল কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দুদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক আমাদের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং যোগাযোগ- এগুলোতো অপরিবর্তনীয়। এখানের সঙ্গে সরকারের পরিবর্তনের সম্পর্ক আমি দেখি না। পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম নীতি ইস্যুতে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় তৃতীয় দেশের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না। যদি ইনফরমালি আলোচনায় ওনারা তোলেন, আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু তৃতীয় দেশ নিয়ে সাধারণত আলোচনা হয় না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফরের সম্ভবনার বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এটা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। দিল্লিতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে পররাষ্ট্র ছাড়াও, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও নৌ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।