ভিসানীতির ওপর নির্ভর করলে চলবে না, সরকার পতনের প্রস্তুতি নিন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:৫৫ পিএম

শনিবার রাজধানীতে শিক্ষক মহাসম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জ া ফখরুল বলেন, ভিসানীতির ওপর নির্ভর করলে চলবে না, সরকার পতনের প্রস্তুতি নিন। ছবি: ভোরের কাগজ
সরকার পতনে ‘যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে’ বলে সকলকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এখন আমরা যে দুঃশাসনের মধ্যে পড়েছি, এখন যারা আমাদের এই বুকের ওপরে চেপে বসে আছে তাদের সরাতে ভিসানীতির ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে? অন্য কেউ করে দিয়ে যাবে? দায়িত্ব আমাদেরই। আমাদেরই যা করার করতে হবে।
শনিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে শিক্ষকদের এক মহাসম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান। রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে চাকরির জাতীয়করণের দাবিতে ও শিক্ষক-কর্মচারির হয়রানি-নির্যাতনের প্রতিবাদে এই মহাসম্মেলন হয়। এতে সারাদেশ থেকে সহাস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারি নেতা অংশ নেন ।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার এখন ভালো কথা শুনছে না, শান্তির কথা শুনছে না। আমরা বারবার বলছি যে, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি, পদযাত্রা করছি, রোড মার্চ করছি, সমাবেশ করছি, কিন্তু তারা শুনছে না। চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। ওই জন্য এখন শোনাতে হবে এবং শোনানোর জন্য যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে। সেজন্য আজকে সমগ্র জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য, সকল মানুষকে এই সরকারকে সরাতে রাজপথে সোচ্চার হতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা বিজয়ী হবো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি এখনো বলি, এখনো আহ্বান জানাচ্ছি, অনেক কষ্ট দিয়েছেন মানুষকে, অনেক হত্যা করেছেন আমাদের ভাইকে, অনেক স্বামীকে, অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন, অনেক মাকে পুত্রহারা করেছেন, অনেক সন্তানকে পিতৃহারা করেছেন, অনেক রক্ত ঝরিয়েছেন। এখনো সময় আছে আপনি মানে মানে দয়া করে বিদায় হোন। আমরা বলেছি, পদত্যাগ করুন, এই সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং স্পষ্ট করে বলেছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন।
বিদেশীরা কেউ বলেনি কেয়ারটেকার সরকারের কথা -গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এটা বলতে হয় না, ওটা বুঝা যায় যে এখানে (বাংলাদেশে) নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তার প্রমাণ দিয়েছেন ’১৪ সালে, তার প্রমাণ দিয়েছেন ’১৮ সালে আর এখনো প্রমাণ দিচ্ছের। আর বলে কিনা নির্বাচন তো সুষ্ঠু করা আমাদের কর্তব্য, সুষ্ঠ করছি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, গতকাল প্রেস কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের নির্বাচন নিয়ে এতো কথা আমি বুঝতে পারি না। নির্বাচন তো আমরা করছি সুন্দর নির্বাচন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করছি। এখন এই কথাগুলো শুনলে আমি আগেও বলেছি, ঘোড়াও হাসে।
গত কয়েক বছরে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৫ লাখ মিথ্যা মামল দায়েরসহ গত এক বছরে রাজপথে ২২ জন নেতাকে গুলি করে হত্যা, ৮ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, লক্ষাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থককে আসামী করা, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় দিয়ে সাজা প্রদান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব।
‘আতঙ্কের ছাপ দেখছেন’
মির্জা ফখরুল বলেন, ভিসানীতিতে এখন সবাই আতঙ্কিত। যারা দুর্নীতি করেছে, যারা অন্যায় করেছে, যারা বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড করেছে, যারা বিচারক হয়ে দলীয়ভাবে বিচার করছে, যে ব্যবসায়ী চুরি করছে, দুর্নীতি করছে সবাই এখন আতঙ্কিত হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এসব ডিগবাজিতে কোনো লাভ হবে না। ডিগবাজি করে একবার বাইরে যাচ্ছে, ওদিকে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার সময় নাই, এতো কান্নাকাটি করার দরকার কি বলেছেন। আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিকভাবে আপনার সময় হয়ে গেছে। দয়া করে মানে মানে কেটে পড়েন। তা না হলে জনগণ আপনাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে।
আগামীতে ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়ার অঙ্গীকার শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল। একইসঙ্গে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করাসহ তাদের ওপরে নিপীড়ন-নির্যাতন ও কারগারে প্রেরণের ঘটনার সমালোচনা করেন তিনি।
শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে ও শিক্ষক সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মইন খান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ মহাসচিব চৌধুরী, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের মহাসচিব মুগিস উদ্দিন মাহমুদসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের নেতারা বক্তব্য রাখেন।