×

জাতীয়

দুদক কর্মকর্তা নিজেই চাঁদাবাজিতে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ০৩:৩৫ পিএম

দুদক কর্মকর্তা নিজেই চাঁদাবাজিতে!

ছবি: ভোরের কাগজ

দুদক কর্মকর্তা নিজেই চাঁদাবাজিতে!
   

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নামে চাঁদাবাজি করার সময় হাতেনাতে দুদক সদস্যসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- গৌতম ভট্টাচার্য (৪২), হাবিবুর রহমান (৪২), পরিতোষ মন্ডল (৬৩) ও মো. এসকেন আলী খান (৫৭)। গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রাকিবের নেতৃত্বে গতকাল শুক্রবার অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

ডিবি বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে গৌতম ভট্টাচার্য যেহেতু। দুদকে কর্মরত ছিলেন, সেই কারনে প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন সম্পর্কে ভালোভাবেই জানতেন। তাই খুব নিখুঁত ভাবে টার্গেটকে বিশ্বাস করাতে পারতেন যে সে দুদকের জালে ফেসে যাচ্ছেন। অনেকে দোষী জেনে তাদের কথা সহজে মেনেও নিতেন। তবে এবার এক টার্গেট ব্যবসায়ীকে নোটিশ পাঠিয়ে যোগাযোগ করে ২ কোটি টাকা দাবি করলে তিনি ডিবি পুলিশের শরনাপন্ন হন। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে দুদকের বিভিন্ন মহাপরিচালকদের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে কাজ করে আসছিলেন গৌতম ভট্টাচার্য। সর্বশেষ দুদকের ডিজি মানি লন্ডারিংয়ের পিএ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

দুদকের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ে (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখা) সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, আশিকুজ্জামান নামে একজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী। বায়তুল মোকাররম মসজিদের কার্পেটের দোকানে ইমপোর্ট করা কার্পেট ও জায়নামাজ সরবরাহ করে থাকেন। গত ২০ জুন সকালে আশিকুজ্জামানের উত্তরার বাসায় দুদুকের মনোগ্রাম সংবলিত খাকি রঙের খামে একটি নোটিশ নিয়ে একজন কর্মকর্তা হাজির হয়। কার্পেটের ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণের চোরাচালান ও মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ আশিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে তুলে ধরা হয়েছিল ওই নোটিশে। দুদকের এই ভয়ানক অভিযোগ শুনে ঘাবরে যান তিনি। তখন দুদকের ওই কর্মকর্তাকে আশিকুজ্জামানকে একটু সহানুভূতি দেখানোর ভণিতা করে জানান, তাকে ডিবি, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক ও এনএসআই নাকি দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয় তাকে হন্য হয়ে খুজছে। দুদকে তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে। তাই মোবাইল বন্ধ করে দিয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া, নোটিশ বহনকারী ব্যক্তিটি হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আশিকুজ্জামানকে কথা বলিয়ে দেয়। হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের ওই কর্মকর্তা মোবাইলে কথা বলা সমীচীন নয় মর্মে বিস্তারিত জানার জন্য তাকে দুদক অফিসে সশরীরে উপস্থিত হতে বলে।

তিনি আরো বলেন, এর মধ্যেই ঘাবড়ে যাওয়া আশিকুজ্জামানকে দফায় দফায় ফোন দেয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপে। ভয় দেখানো হয় সম্পত্তি ক্রোক করা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা, প্রিন্টেড ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে বেজ্জতি করাসহ সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনএসআই, ডিবি পুলিশ এবং দুদকের দ্বারা গ্রেপ্তার করিয়ে কঠোর শাস্তির ভয় দেখানো হয়। একপর্যায়ে আশিকুজ্জামানকে মতিঝিলের হিরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় এসে সমঝোতার জন্য বলা হয়। সমঝোতা অনুসারে প্রথমে দুই কোটি টাকা দিতে বলা হলেও পরবর্তীতে দিতে বলা হয় এক কোটি টাকা। বিনিময়ে সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতির নিশ্চয়তা দেয়া হয়। এক কোটি টাকার মধ্যে ২০ লাখ টাকা ২৩ জুন শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে দিতে বলা হয়। বাকি টাকা আগামী রবিবার ব্যাংক আওয়ারে পরিশোধের সমঝোতা হয়। ভিকটিম বিষয়টি বুঝতে পেরে ডিবি লালবাগ বিভাগককে অবহিত করলে দুদকের সাথে যোগাযোগ করে। একপর্যায়ে দুদকের উপপরিচালক নজরুল ইসলামকেসহ হোটেল হিরাঝিলের আশেপাশে অবস্থান নিয়ে টাকা লেনদেনের নাটক সাজিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। এসময় চারটি মোবাইল ফোন, দুদকের মনোগ্রাম সংবলিত খাকি রঙের একটি খাম ও দুদকের একটি নোটিস উদ্ধার করা হয়।

হারুন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে গৌতম ভট্টাচার্য দুদকের ডিজি মানি লন্ডারিংয়ের পিএ হিসেবে কর্মরত, বাড়ি মৌলভীবাজার। এসকেন আলী খান চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, বাড়ি গোপালগঞ্জ। অপর দুইজন গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এবং পেশাগতভাবে দালাল ও প্রতারক।

গৌতম ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে দুদকের বিভিন্ন মহাপরিচালকদের পিএ হিসেবে কাজ করে আসছে। সে কখনো দুদকের ডিজি (তদন্ত), ডিজি (অ্যাডমিন), ডিজি (প্রসিকিউশন), ডিজির (মানি লন্ডারিং) অফিসের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে কাজ করে আসছে। গৌতম ভট্টাচার্য কর্ম সূত্রেই জানে দুর্নীতি সংক্রান্তে মানুষকে কীভাবে নোটিশ পাঠাতে হয়, কীভাবে তাদের কাছ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক ব্যাখ্যা নেয়া হয় এবং কীভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়। এই অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সে তার দুষ্কর্মের সহযোগীদেরকে দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও চাকরিজীবীকে টার্গেট (লক্ষ্য) করে তাদের ব্যক্তিগত নানা তথ্য সংগ্রহ করে দুদকের চিঠির খাম ও প্যাড কিংবা ফরমেট ব্যবহার করে অভিযোগের নোটিশ পাঠাতো। পরবর্তীতে কখনো মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে, কখনো শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে বসে, কখনো আশেপাশের বিভিন্ন হোটেলে টার্গেটের টাকায় খেতে খেতে তাদেরকে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি দান বা সমঝোতার নামে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের সঙ্গে দুদক কার্যালয়ের দায়িত্বশীল আরো কেউ জড়িত আছে কিনা - খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App