×

জাতীয়

বঙ্গবাজারে ডিএসসিসির বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:০৩ এএম

বঙ্গবাজারে ডিএসসিসির বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ

ছবি: ভোরের কাগজ

   

ঠেকাতে আ.লীগ-বিএনপি ‘ঐক্য’ ব্যবসায়ীদের ভুল বুঝিয়েছে সুবিধাভোগী চক্র খোলা আকাশের নিচে বেচাকেনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান মেয়রের

রাজধানীর বঙ্গবাজারের স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫০ হাজার পরিবার পথে বসেছে। ফায়ার সার্ভিস বারবার সতর্ক করার পরও ‘বাঁধার কারণে’ কাঠ-টিনের স্থাপনা ভেঙে বহুতল ভবন তৈরি করতে পারেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। উচ্চ আদালতের আদেশে আটকে যায় বহুতল ভবন নির্মাণকাজ। কিন্তু এর নেপথ্যে থেকে ব্যবসায়ীদের নানাভাবে ভুল বুঝিয়ে ‘জনমত’ তৈরি করেছে সুবিধাভোগী একটি চক্র। তারাই মূলত ৫টি মার্কেট থেকে বিভিন্নভাবে সুবিধা নিয়ে আসছিলেন। এই চক্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন এমনকি, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও রয়েছেন। দোকান বরাদ্দ, ধাপে ধাপে চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাটোয়ারার হিসেবে তারা সবাই একাট্টা। তারাই এখন পুড়ে যাাওয়া মার্কেটের স্থান দখলে রাখতে চেষ্টা তদবির ও ফন্দিফিকির করছেন। সরকারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে তারা দেনদরারের চেষ্টা করছেন।

ব্যবসায়ীদের নেপথ্যে থেকে মাসে লাখ লাখ টাকা লাভবান হন এমন ব্যক্তিরা মনে করছেন, সরকার সেখানে পরিকল্পনা করে বহুতল ভবন তৈরি করলে তাদের কর্তৃত্ব থাকবে না। তাই জমি দখলে রেখে চাপ সৃষ্টি করে ডিএসসিসির সঙ্গে দেন দরবার করতে হবে। বঙ্গবাজারের একাধিক দোকান মালিক, ব্যবসায়ী নেতা, পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি মাকেট পরিচালনায় জড়িত ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতৃারা গতকাল বুধবার বিকালে ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের সঙ্গে তার অফিস নগর ভবনে বৈঠক করেন। বিকাল ৩টায় শুরু হয়ে ৪টা ১০ মিনিটে বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের (বাজিতপুর) সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি মিলে প্রায় ২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে নেতারা ঘটনাস্থলে যান। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক ব্যবসায়ী নেতা জানিয়েছে, সবকটি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের ‘মুরুব্বি’ হিসেবে সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের একজন ও যুবলীগের এক নেতা ছাড়া বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও খেলাফত মজলিশের নেতারাও বৈঠকে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করেন।

তারা পুড়ে যাওয়া স্থানে খোলা আকাশের নিচে ব্যবসায়ীদের বসে বিকিকিনি করতে দেয়ার প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করে মেয়র বলেন, আগুনের ঘটনায় গঠিত একাধিক তদন্ত কমিটি কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখছেন। তিনি পুনর্বাসন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বসা যাবে না। ফায়ার সার্ভিসের সিদ্ধান্ত ও তদন্ত শেষে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হবে বলে জানান তিনি। বৈঠক শেষে সেখানে ব্যবসায়ীদের মুরুব্বির ভূমিকায় থাকা সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে তার একাধিক মোবাইল ফোন নম্বরে চেষ্টা করেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে ডিএসসিসির তদন্ত কমিটি মার্কেটের দোকান মালিক, ভাড়াটিয়া, নিয়মিত কর্মচারী, দৈনিক মুজুরির কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মী, পিয়ন, ভেতরকার গেঞ্জি, প্যান্ট কারখানার কর্মচারীর পৃথক তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। রবিবারের মধ্যে তারা এই কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন। সিটি করপোরেশন এর মধ্যে নিশ্চিত হয়েছে ৫ মার্কেটের ৫ হাজার দোকানে ৫০ হাজার পরিবারের আড়াই লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের সবার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ডিএসসিসি।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্রের দাবি, গুলিস্তানের যে সিন্ডিকেটটি গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়ার সব সিটি সুপার মার্কেট, বঙ্গবাজার, আনন্দ বাজারসহ গোটা এলাকাটির ব্যবসা-বাণিজ্য, ফুটপাত, পরিবহন, মাদক নিয়ন্ত্রণ করতেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম। ২০১০ সালে তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর এই এলাকার দায়িত্ব নেন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর- নিকলীর সংসদ সদস্য, আফজাল সুজের মালিক আফজাল হোসেন। চৌধুরী আলম সিন্ডিকেটের প্রায় সব সদস্য আফজালের নেতৃত্ব মেনে নেয়। বঙ্গবাজারের মার্কেটগুলো নিয়ে কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছে। আফজাল হোসেনের সঙ্গে এসব পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা হলেন বিএনপি নেতা জহির ও বাসেত মাস্টার, খেলাফত নেতা রহমান হুজুর, বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপদেষ্টা মজু চেয়ারম্যান, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নাজমুল হুদা, যুবলীগের শাহাবুদ্দিন। এছাড়া বিএনপি নেতা দিলু, ফিরোজ, জাতীয় পার্টির শাহ আলম। তারাই মূলত বঙ্গবাজারে বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক মার্কেট নির্মাণের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে বিষয়টি উচ্চ আদালতে নিয়ে যান।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ভোরে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর পুড়ে যাওয়া জায়গা কিভাবে দখলে রাখা যায় এনিয়ে নীতি নির্ধারকরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন। তারা সরকারকে চাপে রাখতে কি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন। এজন্য তারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সামনে এনে ডিএসসিসির মালিকানাধীন এই জমির দখল রাখতে চান। এর পর সবার মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে দেয়া হলে সবাই এক সুরে বলছেন যে, যেভাবেই হোক পুনরায় দোকান বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। তবে নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারী মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা সেখানে কোনোভাবে বসে গেলে বহুতল ভবনের কাজে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।

অনেক ব্যবসায়ীর মতে, পুলিশ মহাপরিদর্শকের মঙ্গলবারের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বঙ্গবাজারের আগুনে ফায়ার সার্ভিস অফিসে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি বলেছেন, জনস্বার্থে যেসব বাহিনী কাজ করে তাদের ওপরে যারাই আক্রমণ করবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলা হবে। এ ঘটনাকে ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, মামলা হলে অনেকেই তদন্তের মুখোমুখি হবেন, দৌঁড়ের উপর থাকবেন। এই সুযোগে ওই বঙ্গবাজারের জমি তাদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সরকার সেখানে বহুতল ভবন করলে বঙ্গবাজারে যারা একাধিক দোকানের মালিক ছিলেন তারা একসঙ্গে বেশি দোকান বরাদ্দ পাবেন না এমন আশঙ্কাও রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App