খেজুরের কাঁচা রস অনিরাপদ, ঝুঁকিপূর্ণ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:১৭ এএম

ফাইল ছবি
খেজুর গাছ থেকে কাঁচা রস সংগ্রহে যত সতর্কতাই অবলম্বন করা হোক না কেন, তা অনিরাপদ বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা মানুষের মধ্যে আবারও খেজুরের কাঁচা রস পানের প্রবণতা লক্ষ্য করছি। সেটি আবার তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটা করে প্রচারও করছেন। এটি (রস পান) যে কী ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে, তা না জেনেই মানুষ খেজুরের কাঁচা রস পান করছেন। আমরা সবাইকে খেজুরের কাঁচা রস পান করতে নিষেধ করছি। কারণ রস সংগ্রহে যত সতর্কতাই অবলম্বন করা হয়ে থাকুক না কেন, এটি অনিরাপদ।
এদিকে নবজাতক সন্তান মায়ের কাছ থেকে নিপাহ ভাইরাসের হিউমোরাল অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পায় বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি)।
আইসিডিডিআর,বি বলছে, প্রথমবারের মতো নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির থেকে অন্য জনের দেহে সম্ভাব্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রবাহের নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি-এর বিজ্ঞানী ও সহযোগীদের এ নতুন গবেষণার ফল ট্রপিকেল মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিতও হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার আনুমানিক ৪০-৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ। এছাড়া নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পরও গুরুতর স্নায়ুবিক জটিলতার শঙ্কা রয়েছে। গর্ভবতী নারীদের গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এ জটিলতা আরও খারাপ হতে পারে।
আইসিডিডিআর,বি জানায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নিপাহ ভাইরাসে ফরিদপুরে পাঁচ বছরের কম বয়সী একটি কন্যাশিশু ও তার মা সংক্রমিত হন। তারা দুজনই খেজুরের কাঁচা রস পান করেছিল। পরে শিশুটি মারা যায়। তার মা গুরুতর স্নায়ুবিক জটিলতার শিকার হন। ২০২১ সালের নভেম্বরে ওই নারী আবার গর্ভধারণ করেন। তিনি সন্তানপ্রসবের আগে জাতীয় নিপাহ সার্ভেইল্যান্স কর্তৃপক্ষের নিবিড় তত্ত্বাবধানে সেবা পেয়েছেন। ২০২১ সালের আগস্টে তিনি একটি সুস্থ ছেলে শিশুর জন্ম দেন।
সংস্থাটি আরও জানায়, নবজাতকের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং ভাটিকেল ট্রান্সমিশন বা মায়ের থেকে থেকে শিশুতে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাদ দেওয়ার জন্য রেফারেন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছিল। যদিও পরীক্ষা করে র্যাপিড ও পিসিআর টেস্টে নিপাহ সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু অ্যান্টিনিপাহ আইজিজির একটি উচ্চ টাইটার দেখতে পাওয়া যায়। এভাবেই প্রথমবারের মতো নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের হিউমোরাল অ্যান্টিবডি পৌঁছে।
এ গবেষণাদলের প্রধান গবেষক ড. সৈয়দ মইনুদ্দীন সাত্তার বলেন, আমাদের জানা মতে, এ গবেষণাই প্রথম নিপাহ ভাইরাসভিত্তিক ইমিউন প্রোপার্টিজের ভাটিকেল ট্রান্সফার বা মা থেকে শিশুতে পরিবাহিত হওয়ার প্রমাণ নিশ্চিত করে। ভাইরাস নিউট্রিলাইজেশনের কার্যকারিতা এবং নবজাতকের সুরক্ষার সম্ভাব্যতার বিষয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন। এটি নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে গর্ভবতী ও কমবয়সী নারীদের জন্য টিকা তৈরির ক্ষেত্রে একটি রেফারেন্স হিসেবেও কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী।