সবুজ কারখানা নিয়ে শীর্ষে বাংলাদেশ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:২৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছে ভিক্টোরিয়া ইন্টিমেটস লিমিটেড এবং ড্রেসডেন টেক্সটাইল লিমিটেড। এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। নতুন করে আরো দুইটি কারখানা যুক্ত হওয়ায় ১৮০ টি সবুজ কারখানা নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর টনক নড়ে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের। এই দুর্ঘটনার পর কারখানা নির্মাণে সতর্ক অবস্থানে যান উদ্যোক্তারা। ক্রেতা বা বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সবুজ কারখানা তৈরিতে সব ধরণের সুযোগ সুবিধার প্রতি আরো বেশি মনযোগী হয়ে উঠেন উদ্যেক্তারা। ফলে সবুজ কারখানা তৈরিতে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
ইউএসজিবিসি গত ১২ ডিসেম্বর স্বীকৃতি দেয় ভিক্টোরিয়া ইনটিমেটস লিমিটেডকে। সংস্থাটি প্রতিষ্ঠানটিকে দিয়েছে ৬২ পয়েন্ট। ঢাকার দক্ষিণ ভানাহাটির বৈরাগীরছালায় অবস্থিত ভিক্টোরিয়া ইনটিমেটস লিমিটেড। আর ১৩ ডিসেম্বর স্বীকৃতি পায় ড্রেসডেন টেক্সটাইল লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানটি ইউএসজিবিসির কাছে থেকে পেয়েছে ৬৮ পয়েন্ট। ময়মনসিংহের ত্রিশালের আমিরাবারিতে অবস্থিত ড্রেসডেন টেক্সটাইল লিমিটেড।
২০২২ সালের শুরু থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ২৭ টি কারখানা স্বীকৃতি পায় ইউএসজিবিসির। যেখানে ১৩ টি কারখানা রয়েছে প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে আর ১৪ টি কারখানা রয়েছে গোল্ড ক্যাটাগরিতে।
আর ২০২১ সালে ২৩ টি কারখানা স্বীকৃতি পায় ইউএসজিবিসির। এরমধ্যে ১০টি কারখানা রয়েছে প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে, ১০টি রয়েছে গোল্ড ক্যাটাগরিতে, ১টি রয়েছে সিলভার ক্যাটাগরিতে এবং ২টি আছে সার্টিফাইড ক্যাটাগরিতে। বর্তমানে রেমি হোল্ডিংস ও ফতুল্লাহ ১১০ এর মধ্যে ৯৭ পয়েন্ট নিয়ে যৌথভাবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
জানা যায়, ২০০১ সাল থেকে লিড সনদ পাচ্ছে বাংলাদেশ। জ্বালানি, পানি, ব্যবস্থাপনাসহ কয়েকটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে কারখানাগুলোকে সবুজ কারখানা স্বীকৃতি দেয় ইউএসজিবিসি।
চারটি ক্যাটাগরিতে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (লিড) সনদ দিয়ে থাকে ইউএসজিবিসি। এগুলো হল- প্লাটিনাম, গোল্ড, সিলভার এবং সার্টিফাইড। আর এই চার ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশে প্লাটিনাম ৫৮টি, গোল্ড ১০৮টি, সিলভার ১০টি এবং সার্টিফাইড ৪টি কারখানা রয়েছে। এছাড়াও ৫৫০ টিরও অধিক কারখানা রেজিস্ট্রেশন বা পাইপলাইনের আওতায় রয়েছে।
কোন কারখানা ১১০ পয়েন্টের মধ্যে ৮০ পয়েন্টের অধিক পেলেই ওই প্রতিষ্ঠানকে প্লাটিনাম সনদ দেয় ইউএসজিবিসি। একইসঙ্গে কারখানা ১১০ পয়েন্টের মধ্যে যদি পয়েন্ট ৬০ পায় তবে তবে ইউএসজিবিসি ওই প্রতিষ্ঠানকে দিচ্ছে গোল্ড সনদ। এছাড়া ৫০ পয়েন্ট পেলে সিলভার সনদ ও ৪০ পয়েন্ট পেলে সার্টিফাইড সনদ দেয় ইউএসজিবিসি।
সবুজ কারখানা নির্মাণে সফলতার জন্য ২০২১ সালে পৃথিবীর ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিজিএমইএ) লিডারশীপ অ্যায়ার্ড দিয়েছে ইউএসজিবিসি।
সবুজ কারখানা নির্মাণ ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘ক্রমাগত সবুজ কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিদেশিরা বেশ মনোযোগী হচ্ছে আমাদের প্রতি। উদ্যোক্তারা বেশ আগ্রহ নিয়ে ক্রমাগত সবুজ কারখানা নির্মাণ করে যাচ্ছেন। আমরা পরিবেশ এবং শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে নিয়ে জোরেসোরে কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশি ক্রতোদের কাছে আমাদের ব্র্যান্ডিংটাও বেশ ভালো হচ্ছে যা বেশ ইতিবাচক। উদ্যোক্তারা সব সময়েই মনযোগী আছে সবুজ কারখানা বৃদ্ধির ওপর। অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে পৃথিবী আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেলে দেশের তৈরি পোশাক খাত আরো বেশি সুফল বয়ে আনবে।’
আর বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সবুজ কারখানা বৃদ্ধিতে আমরা ক্রেতা আকর্ষণ করতে পারছি। ক্রেতা সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। পরবিশেবান্ধব কারখানা থাকায় ক্রেতারা আমাদেরকে প্রাইয়োরিটি দিচ্ছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘জ্বালানি সংকট কিছুটা রয়েছে। সংকট সমাধানে আলোচনা চলছে। সরকার উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় জ্বালানির দাম যে হারে বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে তাতে আমরা রাজি নই। আমরা দাম বৃদ্ধিতে রাজি আছি, তবে সেটা যৌক্তিক মূল্যে হলে সুবিধা হবে।’