১৭ বছর পর খুনি কবিরাজকে ধরলো র্যাব

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০৪:৪২ পিএম

খুনি কবিরাজ হেমায়েত খানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ছবি: ভোরের কাগজ



রোগীর ছদ্মবেশে গিয়ে ১৭ বছর পলাতক থাকা খুনি কবিরাজ হেমায়েত খান ওরফে জাহিদ কবিরাজকে (৫২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বছিলা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। কবিরাজি পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন হেমায়েত ওরফে জাহিদ কবিরাজ। প্রতারণার তদন্তে নেমে রোগীর ছদ্মবেশে হেমায়েত কবিরাজের দরবারে যায় র্যাব।
প্রতারণার অভিযোগে তাকে আটকের পর র্যাব জানতে পারে তিনি বাগেরহাটের নারী উদ্যোক্তা মনোয়ারা মনু হত্যা মামলার পলাতক আসামি। ১৭ বছর ধরে কবিরাজের ছদ্মবেশে ভারত ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় পলাতক ছিলেন। আটকের সময় তার কাছ থেকে কবিরাজি চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের আংটি ১২৯টি, শঙ্খ-৩টি, আলাদিনের চেরাগ ১টি, ক্রেস্ট ২টি, কবিরাজি সংক্রান্ত বই ১৫টি, পিতলের পাঞ্জা-১টি ও কবিরাজি সংক্রান্ত অন্যান্য সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

হেমায়েত খান ওরফে জাহিদ কবিরাজকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
কমান্ডার মঈন বলেন, হেমায়েত ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে কবিরাজি পেশা শুরু করেন। কবিরাজির পেশার মাধ্যমে নানাভাবে মানুষের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করতেন। তবে নারীরাই ছিল তার প্রতারণার মূল টার্গেট। ২০০৩ সালে তিনি স্ত্রী-সন্তানসহ পিরোজপুর থেকে বাগেরহাটে এসে কবিরাজি ব্যবসা শুরু করেন।

২০০৫ সালে জানুয়ারি মাসে ভুক্তভোগী মনু মাথা ব্যথার কবিরাজি চিকিৎসার জন্য হেমায়েতের কাছে যান। মনুর স্বামী ঢাকায় চাকরি করতেন, আর মনু কাপড়ের ব্যবসা করতেন এলাকায়। তার কাছে জমানো নগদ টাকা ও জমির লোভে তাকে টার্গেট করেন হেমায়েত।
একপর্যায়ে মনুকে তার যাবতীয় সম্পত্তির দলিলপত্র এবং টাকা পয়সা জ্বীনের আক্রমণে পড়তে পারে বলে ভয় দেখিয়ে সবকিছু হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। মনুও সরল বিশ্বাসে তার টাকা পয়সা-সম্পত্তির দলিল হেমায়েতের কাছে জমা রাখে। পরিকল্পনা অনুযায়ী একদিন মনুকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দলিলে টিপসই নেয়ার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে মনুকে কুপিয়ে এবং শেষ পর্যন্ত গলা কেটে হত্যা করেন হেমায়েত।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যার পরর গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে যশোরে একটি মাজারে গিয়ে আশ্রয় নেন হেমায়েত। পরদিন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের আজমীর শরীফের পাশে বসবাস করতে থাকেন। ২০০৮ সালে দেশে ফিরে এসে ঢাকার মিরপুরে বসবাস শুরু করেন।

পরিচয় গোপন করে লম্বা চুল ও দাঁড়িওয়ালা ছবি ব্যবহার করে জাহিদুল ইসলাম ছদ্মনামে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। মিরপুরে থাকাকালীন কবিরাজির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা শুরু করেন হেমায়েত। ভাগ্য পরিবর্তনে তাবিজ, স্বামী-স্ত্রীর কলহ দূরীকরণ, বশীকরণসহ নানা কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।
প্রতারণার কারণে জনরোষের মুখে ঠিকানা পরিবর্তন করে কিছুদিন আদাবর, কিছুদিন কেরানীগঞ্জ এবং সর্বশেষে বিগত ৫ বছর ধরে বছিলায় বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেন। বছিলায় একইভাবে তিনি কবিরাজি ব্যবসা করতে থাকেন।
এরমধ্যে হেমায়েতের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও কষ্টি পাথরের মুর্তি রাখার দায়ে মামলা হয়। ২০১৭ সালে একবার গ্রেফতার হয়ে দেড়মাস জেলও খাটেন তিনি। তবে তিনি ২০০৫ সালের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গোপণ রাথতে সক্ষম হন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, সর্বশেষ কবিরাজির মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে হেমায়েতকে আটক করা হয়। পরে নকল জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে একপর্যায়ে তার আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে।
হেমায়েত নিজেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। যে ঘটনায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে পলাতক ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।