নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বেশ চাপ এসেছিল। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের ট্রেন চলছে এমন ধারণা দেবার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস) আয়োজিত ‘ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবার ক্ষেত্রে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নতুন কমিশন নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। মানুষকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালুর জন্য আমলাতন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ পুরো সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের বড় ধরনের ভূমিকা আছে। আমলাতন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকার পুরোপুরি দল নিরপেক্ষ না হলে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা দুরূহ।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আমলাতন্ত্র ও নিরাপত্তা বাহিনী পুরোপুরি নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করবে। নিজেদের জয় নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের বেপরোয়া হয়ে ওঠাও নির্বাচন সুষ্ঠু হবার পথে অন্তরায়। 

ভোটে টাকার খেলার বিষয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম বলেন, বাংলাদেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু আছে, যা টাকায় কেনা যায়। রাজনীতি জনসেবার পরিবর্তে একটি ব্যবসায় পরিণত হওয়ায় এখানে মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোট পর্যন্ত সবই কেনা যায়। এ কারণে নির্বাচনে টাকার প্রভাব কমানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

আরো পড়ুন: কোটি টাকা ঋণের প্রলোভনে শাহবাগে লোক জড়ো করা মোস্তফা আমীন আটক

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারগুলো কী? এমন প্রশ্নে বদিউল আলম বলেন, রাষ্ট্রে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন কীভাবে হতে পারে, সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নারী ও প্রবাসীসহ ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত নাগরিকদের জন্য ইলেকট্রনিক ভোটের সুযোগ তৈরি ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা কমিশনের অগ্রাধিকার। রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্রায়ণ, নির্বাচনী অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা, ‘না’ ভোট প্রবর্তন করার বিষয়গুলোও কমিশনের সুপারিশে থাকতে পারে।

বিআইপিএসএসের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব) আ ন ম মুনিরুজ্জামান আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে শাসনব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ কার কাছে থাকবে তা ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হবার কথা। কিন্তু ৫ আগস্টের আগের শাসক গোষ্ঠী দেশে কয়েকটি প্রজন্মকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুননির্মাণ করতে হলে মানুষকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। ভোটাধিকার না থাকলে সরকারের রাষ্ট্র শাসনের বৈধতা থাকে না।

নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য গঠিত অনুসন্ধান কমিটির সদস্য অধ্যাপক সিআর আবরার বলেন, কমিশন গঠনের জন্য কয়েকশ নাম প্রস্তাব হিসেবে এসেছিল। তা থেকে কমিটি পাঁচটি নাম প্রস্তাব করেছে। এ ক্ষেত্রে কমিটির ওপর কোনো চাপ ছিল না।

গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন নির্বাচনের সময় টাকা কোত্থেকে আসে, কীভাবে খরচ হয়, সেসব বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তাগিদ দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের টাকা ভোটের ফল প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় কিনা, তাও নজর রাখতে বলেন।