গাজায় ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল: হামাস

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৮ এএম

হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়া। ছবি : সংগৃহীত
১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে মুক্তি মিলছে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের। চলমান নৃশংস সহিংসতার পর গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও দখলদার ইসরায়েল সম্মত হয়েছে। আগামী রবিবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
যুদ্ধের সময় গাজাবাসীকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সেজন্য হামাস ইসরায়েলকে ‘ক্ষমা করবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেয়া খলিল আল-হাইয়া।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পর্কে দেয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেয়া খলিল। তিনি বলেন, গাজার সকল ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে, প্রতিটি রক্তের ফোঁটা এবং প্রতিটি অশ্রু বেদনা ও নিপীড়নের জন্য বলছি: আমরা ভুলব না এবং ক্ষমা করব না। খবর বিবিসির।
আরো পড়ুন : যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যেও ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৩০
খলিল আল-হাইয়া বলেন, যুদ্ধের সময় গাজায় দুর্ভোগের জন্য হামাস ইসরায়েলকে ‘ক্ষমা করবে না’। ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ভূখণ্ডে তাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মনে করেন হামাসের এই সিনিয়র নেতা।
যুদ্ধবিরতিতে হামাসের সব শর্ত পূরণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জত আল-রিশেক। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যুদ্ধের শুরুতে হামাস যে সমস্ত শর্ত নির্ধারণ করেছিল তা পূরণ করেই চুক্তি হয়েছে। শর্তগুলো ছিল ইসরাইলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, বাস্তুচ্যুতদের বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়া এবং গাজায় যুদ্ধের স্থায়ী অবসান।
যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তের ব্যাপারটিকে ফিলিস্তিনি লোকদের ধৈর্য্যের ফল হিসেবে উল্লেখ করেছে হামাস। সংগঠনটির ভাষায়, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি আমাদের মহান ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচল ধৈর্য্য এবং গাজা উপত্যকায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে আমাদের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের ফল। এটা আমাদের জনগণের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস, যাদের মধ্যে সব নারী, শিশু ও ৫০ বছরের বেশি বয়সি পুরুষরা রয়েছেন।
গাজার জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে গাজার সীমান্তের ৭০০ মিটার (২,২৯৭ ফুট) এর বেশি দূরে অবস্থিত এলাকায় ইসরায়েল তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে। ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের গাজার উত্তরে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেবে এবং প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক পর্যন্ত ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দেবে।
শর্ত পূরণ হলে চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে অবশিষ্ট সব জীবিত জিম্মিদের মুক্তি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয় রয়েছে।
তৃতীয় ধাপে অবশিষ্ট মৃতদেহগুলোর ফেরত দেয়া এবং গাজা পুনর্গঠনের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। এই কাজ মিশর, কাতার ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১০ জন নিহত হন। ইসরায়েল থেকে জিম্মি করা হয় ২৪১ জনকে। তাদের মধ্যে ৯৪ জন এখনো গাজায় বন্দী রয়েছেন। হামাসের হামলার পর থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৬ হাজার সাতশ’র বেশি জন।
সংঘাতের এই ১৫ মাসের মধ্যে শুরুর দিকে একবার মাত্র সাত দিনের যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এরপর থেকে কয়েক দফা যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আলোচনা হলেও আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি চুক্তির চাপ বাড়তে থাকে। এ লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে জোর তৎপরতা শুরু করে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। হামাস ও ইসরায়েলের সঙ্গে শুরু করে আলোচনা।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল–থানি তার কার্যালয়ে আলাদাভাবে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। এরপর যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে একমত হন দুই পক্ষ।