সিরিয়ায় আগুন নিয়ে খেলছে তুরস্ক: ফরেন পলিসি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ পিএম

সরকারের অর্থনৈতিক ব্যর্থতা থেকে নাগরিকদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন সাময়িকী 'ফরেন পলিসি' এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তুরস্ক সিরিয়ায় সশস্ত্র বিরোধীদের সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে যার ফলে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির পাশাপাশি তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিরোধও তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, সিরিয়ার ঘটনাবলীর ব্যাপারে তুরস্ক হচ্ছে আমেরিকা ও ন্যাটোর মূল সহযোগী। কেউ কেউ এটা মনে করেন, পাশ্চাত্যকে সহযোগিতা করার বাইরে তুরস্কের নিজেরও কিছু লক্ষ্য রয়েছে।
মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক 'ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসিস'-এর তুর্কি বিষয়ক সিনিয়র গবেষক সিনান জাইদির লেখা একটি প্রতিবেদন ফরেন পলিসি সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সিরিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকারী তাহরির আশ-শাম বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে সশস্ত্র বিরোধীদের প্রতি তুর্কি সরকারের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তুরস্কের কর্মকাণ্ড থেকে মনে হয়েছে দেশটির কর্মকর্তারা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিল।
আরো পড়ুন : এবার হুথিদের ‘ধ্বংস’ করার নির্দেশ নেতানিয়াহুর
যদিও তাদের এ কাজ ছিল অনেক বেশি ঝুকিপূর্ণ। লেখক সিনান জাইদি এই প্রতিবেদনে সিরিয়া পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে মনে হচ্ছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান সিরিয়ার ভবিষ্যত রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করতে চান।
এই বিশ্লেষক সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আরেকটি প্রকাশনায় এক নিবন্ধে বলেছেন যে সিরিয়ায় এরদোগানের কর্মকাণ্ডগুলোকে 'আগুন নিয়ে খেলার' সঙ্গে তুলনা করাটাও যথেষ্ট হবে না। কেননা তুরস্কের ভূমিকা মার্কিন নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্বিগ্ন করেছে। কারণ এরদোগান সম্ভবত সিরিয়া সমস্যার কিছু অংশ সমাধানের জন্য তুরস্কের ভূমিকাকে তুলে ধরার জোর চেষ্টা করছেন যা কিনা এই অঞ্চলকে আরও বেশি অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এই প্রতিবেদন অনুসারে, মনে হচ্ছে আঙ্কারা হায়াত তাহরির আশ-শামকে সিরিয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তুত করছে। তুরস্ক এই গোষ্ঠীটিকে এমন একটি সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে যারা একটি আমলাতান্ত্রিক সরকার গঠন করতে পারবে, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে এবং সিরিয়ার বিচিত্র জনগোষ্ঠীর সেবা করতে পারবে।
এ কারণে আঙ্কারা ন্যাটো জোটের সদস্য হিসেবে তাহরির আশ-শামকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
এই বিশ্লেষকের মতে, এরদোগান উত্তর সিরিয়ায় কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলকে ধ্বংস করার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাহরির আশ-শামের নেতা আবু মুহাম্মদ আল-জুলানিকে ব্যবহার করতে চাইছেন।
সিরিয়া ভূখণ্ডের এই উত্তরাঞ্চলটি 'সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি' এবং 'সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস' এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে যাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু তুরস্ক সরকার এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে তাদের জন্য হুমকি বলে মনে করে।
তুর্কি বিষয়ক বিশ্লেষক ও লেখক সিনান জাইদি তার প্রতিবেদনে আরো বলেছেন যে, কুর্দিদের উপর চাপ তীব্রতর করার পেছনে এরদোগানের আসল লক্ষ্য তার সরকারের অর্থনৈতিক ব্যর্থতা থেকে তুর্কি নাগরিকদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া।
বর্তমানে সিরিয়ায় তুরস্কের ১৬ থেকে ১৮ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে এবং তারা সীমান্তে কুর্দি বিদ্রোহীদেরকে দমন করার চেষ্টা করছে।
লেখক তার প্রতিবেদনে এরদোগানের অত্যধিক আত্মবিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সিরিয়ায় তুরস্কের আগ্রাসন অনেক বড় বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। এটা শুধুমাত্র সিরিয়ার জন্য নয়, সমগ্র অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক।