
প্রিন্ট: ১৫ মে ২০২৫, ১২:৫৭ এএম
আরো পড়ুন
সিরিয়ায় মার্কিন কূটনীতিক দলের বৈঠক, নতুন শাসকদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে মার্কিন কূটনীতিকরা সিরিয়ার নতুন শাসক গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো সরাসরি এই গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তি বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনে সন্তুষ্ট, তবে এইচটিএসের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে সন্দেহ ও উদ্বেগ রয়েছে। গোষ্ঠীটি কি কঠোর ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, নাকি গণতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র জানান, বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই বৈঠকে এইচটিএসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির বিষয়ে আলোচনা করবেন। তাছাড়া, সিরিয়ার রাজনৈতিক রূপান্তর এবং ভবিষ্যত শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত বিষয়গুলোও আলোচনা সূচিতে থাকবে।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ কূটনীতিক বারবারা লিফ, প্রেসিডেন্টের বন্দি বিষয়ক দূত রজার কারস্টেন্স এবং সিরিয়া সংশ্লিষ্ট সিনিয়র উপদেষ্টা ড্যানিয়েল রুবিনস্টেইন। এটি আসাদ সরকারের পতনের পর দামেস্কে প্রথম কোনো মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফর, যা নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করছে।
এছাড়া, লিফ জানিয়েছেন যে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে সংবাদ সম্মেলনটি বাতিল করা হয়েছে, তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। মার্কিন প্রতিনিধিরা এই সফরে সিরিয়ায় নিখোঁজ হওয়া সাংবাদিক অস্টিন টাইসসহ, আসাদ সরকারের শাসনামলে নিখোঁজ অন্যান্য মার্কিন নাগরিকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করবেন।
এদিকে, সিরিয়ার জনগণের মধ্যে নতুন শাসনের কঠোর ইসলামি শাসন চালু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দামেস্কের কেন্দ্রীয় উমাইয়া স্কোয়ার এলাকায় বৃহস্পতিবার কয়েকশো সিরিয়ান জনগণ বিক্ষোভ করেছেন, দাবি করেছেন গণতন্ত্র ও নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার। এটি ছিল আসাদ সরকারের পতনের পর প্রথমবারের মতো এমন একটি বড় প্রতিবাদ।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র, ওবাইদা আরনাউত, সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, নারীদের শারীরবৃত্তীয় গঠন সরকারি কাজে তাদের সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এ মন্তব্যটি নতুন প্রশাসনের নারী-বিষয়ক নীতির প্রতি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র থামিন আল-খিতান জানিয়েছেন, আসাদ সরকারের পতনের পর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তাদের একটি দল আগামী সপ্তাহে সিরিয়া সফর করবে।
২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীরা দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং দীর্ঘ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর বাশার আল-আসাদকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। এই বিদ্রোহে আসাদের কয়েক দশকের শাসনের অবসান ঘটে, কিন্তু বিদ্রোহীদের পরবর্তী সরকার কি একটি সুশৃঙ্খল রূপান্তর এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই পরিস্থিতিতে আইএস (ইসলামিক স্টেট) আবার সক্রিয় হতে পারে এবং তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি মিলিশিয়াদের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কাও রয়েছে।
এভাবে, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ কী দিকে এগোবে, তা নির্ভর করবে দেশটির নতুন শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর।