ইসরায়েলে যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করল জার্মানি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ পিএম

গতবছর ইসরায়েলে ৩২ কোটি ৬৫ লাখ ইউরোর অস্ত্র রপ্তানি অনুমোদন করেছিল জার্মানি। ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েলে নতুন করে যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করেছে জার্মানি। তথ্য বিশ্লেষণ ও ইকোনমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা এক সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির এক কর্মকর্তা বলেছেন, আইনি ও রাজনৈতিক চাপের কারণে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স অনুমোদন করা বন্ধ করেছে জার্মানি। যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানির মাধ্যমে জার্মানি মানবাধিকার আইন ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে ইকোনমি মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি। তবে রয়টার্সের প্রতিবেদন প্রকাশের পর জার্মান সরকার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিৃতিতে জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টেফান হেবেশ্ট্রাইট জানিয়েছে, ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বিষয়ে জার্মানিতে কোনো বয়কট নেই।
ইকোনমি মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, গতবছর ইসরায়েলে ৩২ কোটি ৬৫ লাখ ইউরোর অস্ত্র রপ্তানি অনুমোদন করেছিল জার্মানি। এর মধ্যে সামরিক উপকরণ ও যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে। অর্থের অংকটি ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।
আরো পড়ুন : দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের বিমান হামলা
তবে এবছর লাইসেন্স অনুমোদন কমেছে। জানুয়ারি থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ১৪.৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে দেশটির সংসদকে জানিয়েছে ইকোনমি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে যুদ্ধাস্ত্র বলে বিবেচিত অস্ত্র ছিল মাত্র ৩২ হাজার ৪৪৯ ইউরোর।
এদিকে, ইসরায়েলে যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানির কারণে জার্মানির বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে, অন্যটি বার্লিনের আদালতে। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এই মামলাটি করেছে।
এই দুই মামলায় নিজের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে জার্মান সরকার বলেছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পর ইস্যু করা কোনো লাইসেন্সের আওতায় যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানি করা হয়নি। শুধুমাত্র দীর্ঘমেয়াদি যে চুক্তিগুলো আছে তার আওতায় যন্ত্রাংশ রপ্তানি করা হয়েছে।
ইউরোপজুড়ে মামলা হওয়ায় ইসরায়েলের অন্যান্য মিত্ররাও অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করেছে। চলতি মাসে ব্রিটেন ইসরায়েল অস্ত্র রপ্তানি সংক্রান্ত ৩৫০টি লাইসেন্সের মধ্যে ৩০টি স্থগিত করেছে। কারণ ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে নেদারল্যান্ডসের একটি আদালত ইসরায়েলে এফ-৩৫ ফাইটার জেটের যন্ত্রাংশ রপ্তানি স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস। এ হামলার জবাবে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে এ যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকে গাজার ওপর বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বর্বর ইসরায়েল। এমনকি তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদসহ ধর্মীয় স্থাপনাও।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে গাজার ৯০ শতাংশ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া সেখানকার কয়েক লাখ মানুষ বিপর্যকর ক্ষুধার সম্মুখীন। এমনকি উপত্যকাটির বেশির ভাগ হাসপাতালও বন্ধ।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার ২০ লাখ বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দেশটির হামলার কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইসরায়েলে হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি আর ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। এ ছাড়া ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক আদালতে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে দেশটি।