দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের বিমান হামলা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৯ পিএম

দেশটির বিমানবাহিনী লেবাননে প্রায় ১০০টি রকেট লঞ্চার ও অন্যান্য অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় রাত নয়টার পর থেকে এই আক্রমণ শুরু হয়। এ বিমান হামলা চালিয়ে একশটি রকেট লঞ্চার ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আরো বেড়েছে।
লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থার তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার জেজিন শহরের মাহমুদিহ, কাসর আল-আরুশ ও বিরকেট জাব্বুর এলাকায় নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান।
লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবারই লেবাননে সবচেয়ে বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুই ঘণ্টা ধরে দক্ষিণ লেবাননে রকেট লঞ্চার লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো হয়। তাদের দাবি, এই লঞ্চারগুলি থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিয়েছিল হিজবুল্লাহ।
তারা জানায়, দেশটির বিমানবাহিনী লেবাননে প্রায় ১০০টি রকেট লঞ্চার ও অন্যান্য অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় হতাহতের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের সেনা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতের হামলায় একশটি রকেট লঞ্চার ও অন্য লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করা হয়েছিল। তারা এই আক্রমণ চালিয়ে যাবে বলে।
আরো পড়ুন : ইসরায়েল ‘শেষ সীমা’ অতিক্রম করেছে
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হিজবুল্লাহকে ‘চড়া মূল্য দিতে হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, আমাদের সামরিক কার্যক্রমের ফলাফল অব্যাহত থাকবে।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহের মধ্যে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি বিমান ও রকেট হামলা অব্যাহত রয়েছে। হিজবুল্লাহর হামলার কারণে লেবাননের সীমান্তবর্তী নিজেদের উত্তরাঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল। এখন তাদের নিজ বাসস্থানে ফেরত পাঠাতে চায় দেশটি। এ জন্য উত্তর সীমান্ত নিরাপদ করা দরকার। অঞ্চলটিতে হামলা চালানো হবে না—হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এমন নিশ্চয়তা চায় ইসরায়েল। কিন্তু গাজা যুদ্ধ বন্ধ না হলে সেখানে হামলা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গল ও বুধবার লেবানন ও সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহার করা তারহীন যোগাযোগযন্ত্র পেজার ও ওয়াকিটকিতে একযোগে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব বিস্ফোরণে অন্তত ৩৭ জন নিহত ও প্রায় তিন হাজার মানুষ আহত হন।
ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে এসব বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে লেবানন সরকার ও হিজবুল্লাহ। তবে এসব বিস্ফোরণ নিয়ে এখনো পর্যন্ত মুখ খোলেনি ইসরায়েল।
দুই দিনের বিস্ফোরণের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার ভাষণ দিয়েছেন হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। টিভি ভাষণে তিনি বলেছেন, পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এই আক্রমণ যাবতীয় আইন, নৈতিকতা ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এটাকে যুদ্ধ ঘোষণা বা যুদ্ধকালীন অপরাধ বলা যেতে পারে। তবে, ইসরায়েল এখনো পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হলে অঞ্চলটির (মধ্যপ্রাচ্য) উত্তেজনা কমে আসবে। কিন্তু ইরানের সহায়তাপুষ্ট যেকোনো ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ‘অবিচল’ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গল ও বুধবারের বিস্ফোরণ নিয়ে এরই মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছে লেবাননের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে দেয়া প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবাননে পৌঁছার আগেই তারহীন যোগাযোগ যন্ত্রগুলোতে বিস্ফোরক ঢোকানো হয়েছিল। পেজার ও হাতে ব্যবহারের রেডিওসহ এসব যন্ত্র বৈদ্যুতিক বার্তার সাহায্যে বিস্ফোরণ করা হয়েছিল।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন প্যারিসে বলেছেন, গাজা নিয়ে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা আরো কঠিন হয়ে উঠুক তা তারা চান না।