ফিলিস্তিনিদের প্রতি ভালোবাসাই কাল হলো মার্কিন তরুণীর!

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ পিএম

ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত মার্কিন তরুণী আয়েশেনূর এজগি।
দখলে থাকা ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে তুর্কি বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের এক তরুণী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) পশ্চিমতীরে বর্বর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ২৬ বছর বয়সী এই তরুণীর নাম আয়েশেনূর এজগি। মজলুমের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাই কাল হলো তার জীবনে। এই ঘটনায় সম্পূর্ণ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। খবর বিবিসি ও আনাদোলুর।
শুক্রবার ইহুদী বসতি বাড়ানোর প্রতিবাদে পশ্চিমতীরের নাবলুসের কাছে বেইতা শহরে এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালালে আয়েশানূর এজগি এইগি নিহত হন। ওই কর্মসূচিতে অংশ নেয়া একজন বিবিসিকে জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনপন্থি ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি মুভমেন্টের হয়ে ওইদিনই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন এইগি।
মর্মান্তিক এই ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন দুঃখপ্রকাশ করলেও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ইসরায়েলের এ কর্মকাণ্ডকে ‘বর্বর’ বলে উল্লেখ করেছেন। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নাবলুসে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীই এইগিকে গুলি করে হত্যা করেছে।
অন্যদিকে হোয়াইট হাউজ মিত্র ইসায়েলকে দোষারোপ না করলেও ঘটনার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন জরুরিভিত্তিতে ওই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করছে।
আরো পড়ুন : পোলিও টিকা কর্মসূচির মধ্যেই গাজায় হামলা, নিহত ২৭
তুর্কি সংবামাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এইগির জন্ম ১৯৯৮ সালে তুরস্কের আনতালিয়ায়। কিন্তু বড় হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। মনোবিজ্ঞান ও মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা এবং সাংস্কৃতি নিয়ে পড়াশুনা করেছেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার সহপাঠীরা জানিয়েছেন, আয়েশানূর ছিলেন অত্যান্ত পরোপকারী, বিনয়ী ও উদার।
শুক্রবার তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক ওই তরুণী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই তাকে নাবলুসের রাফাদিয়া হাসপাতালে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। কিছুক্ষণ পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এইগির মাথায় গুলি লেগেছিল বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের প্রধান ডা. ফুয়াদ নাফা।
ঘটনার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ওইদিন ঘটনাস্থলে দায়িত্বপালনরত ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে এক বিক্ষোভকারী পথর ছুড়ছিলেন। পরে ওই বিক্ষোভকারীর উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি ছোড়ে।
সেখানে কোনো বিদেশি নাগরিক মারা গেছেন কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে আইডিএফ বলেছে, ঘটনার বিশদ বিবরণ এবং কোন পরিস্থিতিতে ওই তরুণী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তাও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে এইগির সঙ্গে ওই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী জনাথন পোলাক দাবি করেছেন, তিনি পরপর দুটি গুলির শব্দ শুনেছেন। এইগি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনিই প্রথমে তার কাছে ছুটে গিয়েছিলেন, চেষ্টা করেছিলেন, হাত দিয়ে চেপ ধরে রক্তপাত ঠেকানোর।
নিজের হাতে লেগে থাকা রক্ত দেখিয়ে পোলাক বলেন, আমি দেখলাম তিনি (ইয়েগি) একটি গাছের পাশে মাটিতে পড়ে আছেন। তার মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। আমি পরীক্ষা করে দেখলাম তার নাড়ির গতি খুবই ধীর। এরপর আমরা অ্যাম্বুলেন্স ডাকি। সেখান থেকে তাকে আমরা প্রথমে গ্রামের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাই। সেখান থেকে পরে তাকে চিকিৎসক হাসপাতালে নিয়ে যান, তারা বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সম্ভব হয়নি।
ক্ষুব্ধ পোলাক বলেন, এইগি যুক্তরাষ্ট্রের হওয়ার কারণেই হত্যার ঘটনাটি এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। আইডিএফের বিবৃতির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। পোলাক বলেন, সেখানে সংঘর্ষ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু তা ইসরায়েলি সেনাদের জন্য হুমকি ছিল না বলে মনে করেন তিনি।
তার দাবি, আলাদা একটি স্থানে এইগিকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করা হয় এবং ওই জায়গায় সেনাদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অনেকটা আল-জাজিরার সাংবাদিক সিরিনকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করেছিল ইসরায়েল।
এদিকে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিংসঘ। বিশ্ব সংস্থার মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দেখতে চাই এবং জড়িতদের জবাবদিহি করতে হবে।