ড্রয়িং রুমটাই এখন মঞ্চ হয়ে উঠেছে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২০, ১১:২৩ এএম

শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়
বিশেষ সাক্ষাৎকার শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্লাসিক্যাল নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য শিক্ষক
শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্লাসিক্যাল নৃত্যশিল্পী, নৃত্য শিক্ষক ও নৃত্য পরিচালক। শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি, কলকাতার মণিপুরী নৃত্যালয়ের শিক্ষক নৃত্যবিশারদ গুরু বিপিন সিংহ ও কলাবতী দেবীর তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ‘নর্তন বিশারদ’ উপাধিতে ভূষিত হন। ভরতনাট্যম, ওড়িশি ও লোকজ নৃত্যে অভিজ্ঞ এই শিল্পী ‘নৃত্যনন্দন’ এর প্রতিষ্ঠাতা। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরেকটি বড় পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরে আগরতলা হয়ে কলকাতা যান। ভারতীয় শিল্পীদের সহায়তায় কলকাতায় ‘মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করেন।
শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালে ঘরের বাইরে যাচ্ছি না। তবে ঘর সংসারের জুতো সেলাই থেকে চণ্ডি পাঠ সবই করতে হচ্ছে। এ ছাড়া আমি অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি। আমার নাচের বাচ্চাদের মনোবল সতেজ রাখতে ও নিজেরও মন ভালো রাখার জন্য করোনাকালের প্রথম থেকেই ক্লাস নেয়া শুরু করেছি।
কলকাতার শ্রুতি পারফর্মিং আর্ট এর পক্ষ থেকে তিনদিনব্যাপী একটা আয়োজনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কথা বলেছি। ভারতীয় হাই কমিশনের পক্ষ থেকে একটা সুন্দর আয়োজন করেছিল- সেখানে আমি নাচের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
এছাড়া দুটো তিনটে কথন অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছি। আমার ছাত্রছাত্রীদের জন্য নতুন নতুন কম্পোজিশন করছি। এখন বর্ষা চলছে, ২২ শ্রাবণের ওপরও কাজ করেছি। আমি সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। হতাশ হলে চলবে না। মেঘ কেটে যাবে।
কিছু পড়ছেন কি-না জানতে চাইলে এই নৃত্য ব্যক্তিত্ব বলেন, এই কদিনে রবীন্দ্র নৃত্য নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে এত বেশি বলতে হয়েছে যে, আবার নতুন করে অনেক কিছু পড়তে হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে জানার তো শেষ নেই।
করোনার এই সময়টাতে চেনা পৃথিবীর কতটা বদল ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেনা পৃথিবীটা তো একেবারেই বদলে গেছে। বাস্তব আকাশটাকে তো ওভাবে দেখতে পাচ্ছি না। মনের আকাশ থেকে পৃথিবীটা দেখার চেষ্টা করছি। এছাড়া কাজের পরিধিটা বেশ ছোট হয়ে গেছে। কবে যে চেনা পৃথিবীটাকে ফিরে পাবো বুঝতে পারছি না। স্বাভাবিক জীবনটাকে ভুলেই যেতে বসেছি। ফোনে ফোনে গান নাচ কম্পোজিশন করছি। এখন ড্রয়িং রুমটাই মঞ্চ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি-না জানতে চাইলে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এখন একাত্তরের কথাই বেশ মনে পড়ছে। তখন এরকম বন্দি ছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য তীব্র আকাক্সক্ষা ছিল। তখনো বাইরে গেলে মৃত্যুভয় ছিল। এখনো মৃত্যুভয়। তখন শত্রু চিহ্নিত ছিল, এখনকার শত্রু অচেনা। তবে আমরা জয়ী হবোই। আমরা তো লড়াকু জাতি।