×

সাহিত্য

সেলিনা শেলীর চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে শাহবাগে সমাবেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫১ পিএম

সেলিনা শেলীর চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে শাহবাগে সমাবেশ

ছবি: ভোরের কাগজ

   

কবি ও শিক্ষক সেলিনা শেলীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ ও প্রতিহিংসামূলক’ হিসেবে মন্তব্য করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলেও দাবি জানানো হয়েছে।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে কবি, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এ দাবি জানান।

সমাবেশের অন্যতম সংগঠক রবীন আহসানের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক রতন সিদ্দীকী, নাট্যনির্দেশক অলোক বসু, কবি শাহেদ কায়েস, কবি আলফ্রেড খোকন, কবি সাকিরা পারভীন সুমা, কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগের সংগঠক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী সুমাইয়া সেতু, কবি আফরোজা সোমা, লেখক মুশফিকা লাইজু প্রমুখ।

সেলিনা শেলীকে চাকরিচ্যুত করার পেছনে ‘জামায়াত-শিবির চক্রের ষড়যন্ত্র রয়েছে’ বলে মনে করেন নাট্যকার রতন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সেলিনা শেলী চট্টগ্রাম বন্দরে স্কুল, কলেজে পড়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রগতিশীল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এজন্য তিনি শিবিরের হামলার শিকারও হয়েছেন। শেলী যখন কলেজে শিক্ষকতার চাকরি নিলেন, তখন থেকেই জামায়াত-শিবিরের টার্গেটে ছিলেন।

রতন সিদ্দিকী বলেন, শেলী কলেজের উপাধ্যক্ষ হলেন ও কিছুদিন আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হলেন। জামায়াত-শিবির একটা ইস্যু খুঁজছিলো- তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার। ফেসবুকে লেখা একটা পোস্টকে ইস্যু বানিয়ে তারা এখন সেলিনা শেলীকে চাকরিচ্যুত করেছে।

কবি আলফ্রেড খোকন বলেন, সেলিনা শেলীকে ফেসবুকে লেখার জন্য চাকরিচ্যুত করার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। নইলে সামান্য এই শব্দের জন্য কোনো রকম তদন্ত ছাড়া একজনকে হুট করে বহিষ্কার করে দেবে। এটা হতে পারে না। শেলী আপা একজন প্রগতিশীল শিক্ষক। বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।

তাকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে; সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। কোনো তদন্ত ছাড়াই তাকে শাস্তি দেওয়ার এই প্রক্রিয়াটি দেখে মনে হচ্ছে এটা পুতুলখেলা। ইচ্ছা হল চাকরিচ্যুত করা হলো। এমন পুতুলখেলা বন্ধ হোক।

আফরোজা সোমা বলেন, সেলিনা শেলী ফেইসবুকে রমজান কেন ‘রামাদান’ হলো, সেটা নিয়ে একটু স্যাটায়ার করেছেন। তার জন্য চাকরিচ্যুত করাটা ভীষণ অন্যায়।

ডিজিটাল অ্যাক্টের মাধ্যমে এখন সামান্য বিষয়কেও যেভাবে দমন করা হচ্ছে, সেটা ভীতিকর। কণ্ঠরোধ করার এই আইন বাতিল করতে হবে ও কবি সেলিনা শেলী যে ভীতিকর অবস্থায় রয়েছেন, তাকে চাকরি ফিরিয়ে দিয়ে মত প্রকাশের পথকে মুক্ত করে রাখতে হবে।

মোজাফফর হোসেন বলেন, যে কোনো বিষয় নিয়ে সমালোচনা করার অধিকার আমাদের রয়েছে। আবার সেই সমালোচনা গ্রহণ না করার অধিকারও সবার রয়েছে। ফেসবুক পোস্ট কারো পছন্দ না হলে ইগনোর করতে পারেন। কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠান অত্যুৎসাহী হয়ে সেলিনা শেলীকে চাকরিচ্যুত করল। এই অত্যুৎসাহী হওয়ার পেছনে কী উদ্দেশ্য তা খতিয়ে দেখতে হবে।

সাকিরা পারভীন সুমা বলেন, এখন জীবনানন্দ দাশের কবিতাও পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কথা বলে, অথচ তাদের সময়ে জামায়াত-শিবিরের আগ্রাসী রূপ কেন- এমন প্রশ্ন রেখে কবি শাহেদ কায়েস বলেন, সেলিনা শেলীর সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি বর্তমান বাংলাদেশের চিত্রকে তুলে ধরে। সারা জীবন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করা সেলিনা শেলী একটা শব্দ বলেছেন, যেটি ধর্মের বিপক্ষে নয়।

তিনি বলেন, শেলিনা শেলী বলেছেন ‘রমজান’ কীভাবে ‘রামাদান’ হলো। এই শব্দটি বেমানান লাগে। কিন্তু এই শব্দ লেখার জন্য তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। সেলিনা শেলীকে যদি চাকরিতে বহাল না করা হয়, তবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ অন্ধকারের দিকেই হাঁটবে।

কবি এখন কবিতা লিখতে পারছে না মন্তব্য করে নাট্যনির্দেশক অলোক বসু বলেন, কারণ বাংলাদেশে এখন ‘অনুভূতির চাষাবাদ হচ্ছে। আমাদের পহেলা বৈশাখ নিয়ে তারা বিতর্ক তৈরি করছে।’

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে সরকার আছে, তাদের বোধোদয় হওয়া দরকার। এই অনুভূতির চাষাবাদ বন্ধ না হলে দেশ অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।

অমিত রঞ্জন দে বলেন, কোনো রকম তদন্ত না করে সেলিনা শেলীকে যেভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেটা অন্যায়। এই অন্যায় যারা করেছে- সেই বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কলেজ পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

খান আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, আমরা এই প্রতিবাদ সমাবেশ করে করে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আওয়ামী লীগ যেভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে সাম্প্রদায়িক চাষাবাদ করছে, সেখানে সেলিনা শেলীর মতো প্রগতিশীল মানুষ আক্রান্ত হবেন, এতে আমি অবাক হই না।

রবীন আহসান বলেন, মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্র ও রোষানলের শিকার চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা শেলীকে হয়রানির প্রতিবাদে আমরা এই সমাবেশ করছি। একজন কবিকে ফেসবুকে কয়েকটি শব্দ লেখার জন্য চাকরিচ্যুত করা হয়েছে; এই ঘটনা ন্যক্কারজনক।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ৬০টিরও বেশি সমাবেশ করার কথা জানিয়ে শ্রাবণ প্রকাশনীর কর্ণধার রবীন বলেন, ডিজিটাল অ্যাক্টের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করা হচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের জেরে গত রবিবার চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা আক্তার শেলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মমিনুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সেলিনা আক্তার শেলীকে বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়।

বন্দর কর্তৃপক্ষের নোটিসে বলা হয়, ‘ফেইসবুকে পবিত্র রমজান মাসের আরবি উচ্চারণ ‘রামাদান’কে কটাক্ষ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তার প্রেক্ষিতে অসংখ্য মানুষ আপনার পোস্টের মন্তব্যে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া জানায়।’ ‘আপনার পোস্টে আঘাত লাগায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভেতরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এবং বন্দর এলাকায় এর প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশ আয়োজনসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক উসকানিসহ সরকারকে অস্থিতিশীল ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’ ওই বরখাস্তের আদেশে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বিভাগীয় মামলা করার কথাও বলা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App