বিশ্বের প্রবীণতম মানুষ শ্রীমঙ্গলের রাম সিং!

বিকুল চক্রবর্তী, শ্রীমঙ্গল থেকে
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম

বিশ্বের প্রবীণতম মানুষ শ্রীমঙ্গলের রাম সিং গোঁড়। ছবি: সংগৃহীত
শ্রীমঙ্গল উপজেলার মেকানী ছড়ার প্রবীণ বাসিন্দা রাম সিং গোঁড়ের বয়স বর্তমানে ১৩৫ বছর! গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের বয়স ১১১ বছর হলেও, রাম সিংয়ের বয়স এর চেয়েও অনেক বেশি। ভোটার আইডি অনুযায়ী তার বয়স ১১৯ বছর। তবে রাম সিং নিজ মুখে জানিয়েছেন তিনি ১৩৫ বছর বয়সী। এই বয়সেও তিনি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে সক্ষম। দৈনিক ভোরের কাগজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার জীবনের নানা অসাধারণ ঘটনা ও স্মৃতি।
ভোরের কাগজ: আপনার বয়স কত, আর কীভাবে এতদিন সুস্থভাবে বেঁচে আছেন?
রাম সিং: আমার বয়স এখন ১৩৫ বছর। আমি এখনো কাজকর্ম করতে পারি। নিজের তৈরি বাঁশের জিনিসপত্র ঘরের কাজে ব্যবহার করি। প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছি, ছড়ার পানি পান করেছি এবং কাঁচা খাবার খেয়েছি, মনে হয় এই কারণেই আমি এতদিন সুস্থ আছি।
ভোরের কাগজ: আপনার জন্ম কোথায় এবং কীভাবে এই এলাকায় এলেন?
রাম সিং: আমার পিতার আদি ভূমি ছিল ভারতে। চা বাগানের কাজের জন্য আমার দাদা এবং বাবা এই এলাকায় আসেন। প্রথমে পুটিয়াছড়া চা বাগান গড়ে ওঠে তাদের হাতে। আমি নিজেও হরিণছড়া চা বাগানে কাজ করেছি।
ভোরের কাগজ: আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো কী কী?
রাম সিং: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪) আমি ছিলাম বাগানের চৌকিদার। ইংরেজ সাহেবদের কাছ থেকে যুদ্ধের কথা শুনতাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫) সময়ও ইংরেজ সাহেবদের কাছ থেকে খবর পেতাম। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি চা বাগানেই ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগানের ম্যানেজাররা পালিয়ে গেলেও আমি এবং কয়েকজন শ্রমিক মিলে বাগান রক্ষা করি।
ভোরের কাগজ: এখন কেমন আছেন? পরিবারে কতজন সদস্য রয়েছেন?
রাম সিং: শারীরিকভাবে আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি। আমার ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ে আছে। এখন সবাই আলাদা থাকে, তবে আমি আমার চতুর্থ ছেলে জগদীশের সঙ্গে থাকি। আমার নাতি-নাতনিদের মধ্যে অনেকেই বিয়ে করেছেন, তাদেরও সন্তান আছে। পুরো পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭০ জনেরও বেশি।
ভোরের কাগজ: এত বয়সে এখনো কাজ করতে পারেন?
রাম সিং: হ্যাঁ, আমি এখনো বাঁশের তৈরি পাখা, টুকরি এগুলো বানাই। ঘরের ছোটখাটো মেরামতের কাজও করি। আমার নাতনী মামনী গোঁড় বলেছিল, প্রচণ্ড গরমে আমি নতুন একটা পাখা বানিয়েছি। আমি এখনো লিখতে-পড়তে পারি।
ভোরের কাগজ: আপনার জীবন নিয়ে কী ভাবছেন, আর কোনো আশা আছে?
রাম সিং: আমি চাই মরার আগে আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ আসুক। বিদ্যুৎ এলে অনেক কিছু সহজ হবে। আইডিএর দেয়া একটা ডিপটিউবওয়েল আছে, সেটাও চালু করতে পারবো।
ভোরের কাগজ: সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রাম সিং: আপনাকে ধন্যবাদ, ভোরের কাগজকেও ধন্যবাদ।
রাম সিংয়ের ছেলে জগদীশ গোঁড় জানান, তারা আর্থিকভাবে সংকটে থাকায় রাম সিংয়ের জন্য ভালো খাবার কিংবা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারছেন না। সরকার যদি তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে, তার স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করে তবে রাম সিংয়ের শেষ জীবন সুখের হবে।
আরো পড়ুন: সাততলা বস্তিতে ভিক্ষুককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
ভোরের কাগজ কথা বলে স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তিনি বলেন রাম সিং একজন জীবন্ত ইতিহাস। সে ইতিহাসের অনেক ঘটনার জীবন্ত সাক্ষী। আমাদের উচিত তাকে প্রাপ্য মর্যাদাটুকু দেয়া। তিনি আরো বলেন, রাম সিংয়ের বয়স এবং ইতিহাস প্রমাণ করে তিনি নিঃসন্দেহে একজন অতিপ্রবীণ মানুষ, এবং তাঁর নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ পাঠানো উচিত।