৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিলো হামাস, ছাড়া পেলো ৩৬৯ ফিলিস্তিনিও

বিবিসি
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
গাজার যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা শঙ্কার মধ্যেই তিনজন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে তাদেরকে গাজার খান ইউনিস থেকে রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, শনিবার মুক্তি পাওয়া তিনজন বন্দি ইতোমধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছেছে।
ওই তিনজন জিম্মি মুক্ত পাওয়ার পর তাদের বহনকারী রেডক্রসের গাড়ি গাজার খান ইউনিস ছেড়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ওই তিনজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তারা পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া বেশ কিছু ছবিতে দেখা যায় জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার আগে তাদেরকে ঘিরে রয়েছেন বন্দুকধারীরা। গাজা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা হামাসের হাতে বন্দি ছিলেন। মুক্তি পাওয়া বন্দিরা হলেন ইসরায়েলি-রুশ নাগরিক আলেকজান্ডার ট্রুফানোভ, ইসরায়েলি-আর্জেন্টাইন ইয়ায়ার হর্ন এবং ইসরায়েলি-আমেরিকান সাগুই ডেকেল-চেন।
ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স মিডিয়া অফিসের তথ্যমতে, ইসরায়েলও ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে। এর মধ্যে কিছু তাদের কিছু অংশ পশ্চিম তীরে পৌঁছেছে। বাকিরা পরে গাজায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এর আগে গত সোমবার হামাস জানায়, তারা এই সপ্তাহান্তে আর কোনো বন্দি মুক্তি দেবে না এবং তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষারোপ করে। ইসরায়েল জানিয়েছে, যদি শনিবার দুপুরের মধ্যে বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে তারা গাজায় হামলা আবার শুরু করবে।
জিম্মি মুক্তিকে কেন্দ্র করে দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় শনিবার বিশাল জন সমাগম তৈরি হয়। কেননা আগে থেকে জানানো হয়েছিল সেখানে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের ছোট একটি অংশকে আনা হবে।
যে কারণে বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত হয়। সেখানে থাকা অনেককে স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার কারণেই শনিবার অনেকের মুক্তি সম্ভব হয়েছে।
আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম, যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেস্তে যেতে পারে এই আশঙ্কায় আমরা ঘুমাতেও পারিনি। আমরা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের প্রার্থনা ছিল যুদ্ধবিরতি বজায় থাকুক, গাজা পুনর্নির্মাণ হোক এবং সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হোক, সেখান থেকে বলছিলেন এক ব্যক্তি, যিনি ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার সময় আটক হওয়া একজন স্বজনের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন।
শনিবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যাদের মুক্তি দিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলিদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিরা যাদের কোনো বিচার কিংবা অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছিল। ফিলিস্তিনি বন্দি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল যেসব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিচ্ছে তাদের মধ্যে ২৯ জন পশ্চিম তীরের এবং সাতজন জেরুজালেম ও আশপাশের এলাকার।
২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবরের পর গাজা থেকে আটক হওয়া ৩৩৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে বলেও সংস্থাটি জানিয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি ইসরায়েলিদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার দায়ে দণ্ডিত হলেও বেশিরভাগই যুদ্ধকালীন সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা বিচার হয়নি।
হামাস ও ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির দিনে হিব্রু ভাষায় একটি বিবৃতি দিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়। এই বিবৃতিতে তিনজন ইসরায়েলি বন্দি মুক্তির বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'এখনো গাজায় আটক থাকা বন্দিদের মুক্ত করতে ইসরায়েল সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে'।
এছাড়াও বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে যে হামাস এই সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের চেষ্টা করেছিল এবং ভুয়া অভিযোগের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, গাজার অভ্যন্তরে ও আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর উপস্থিতি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের "স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন অবস্থান"র কারণে বন্দিমুক্তি অব্যাহত রয়েছে।
বিবৃতির শেষে বলা হয়েছে, 'ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে গাজায় আটক সব বন্দিকে যত দ্রুত সম্ভব মুক্ত করা যায়'। ইসরায়েল বলছে, গাজায় থেকে আটক যে সব বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের অবস্থা ছিল 'অকল্পনীয়'।
শনিবার হামাস যে কয়েকজনকে মুক্তি দেয় তাদের মধ্যে একজন আর্জেন্টাইন-ইসরায়েলি বন্দি ইয়ায়ার হর্ন। মুক্তির পর তিনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে পৌঁছান। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে মি. হর্নকে "অবর্ণনীয় পরিস্থিতিতে আটক রাখা হয়েছিল।
ইসরায়েলের সরকারি এক্স (টুইটার) একাউন্টের একটি পোস্টে জানানো হয়েছে, হর্ন ও তার ভাই ইতানকে ৭ই অক্টোবর 'নৃসংসভাবে' অপহরণ করা হয়েছিল এবং তাকে প্রায় ৫০০দিন 'অকল্পনীয়' অবস্থায় আটকে রাখা হয়।
হর্ন মুক্তি পেলেও ইতান এখনও হামাসের হাতে বন্দি রয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে তার মুক্তি নির্ধারিত কোনো সময় নেই। হামাস জানিয়েছে যে আলোচনার বাইরে অন্য কোনো উপায়ে বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে যে আজকের বন্দিমুক্তি প্রমাণ করে যে শুধুমাত্র আলোচনা এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মেনে চললেই কেবল গাজায় আটককৃত বন্দিদের মুক্তি সম্ভব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজাবাসীকে স্থানান্তরের যে কথা বলেছেন সেই প্রসঙ্গ টেনে হামাস বলছে, আমরা সারা বিশ্বকে বলছি, জেরুজালেম ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে হামাস জানিয়েছিল যে তারা বন্দিদের মুক্তি দেবে না। এর কারণ হিসেবে ইসরায়েল তিন সপ্তাহের পুরোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলেও অভিযোগ করে হামাস।