আলাস্কার দাম ৭২ লাখ, গ্রিনল্যান্ডের কত?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড কিনে নেয়ার গোঁ ধরেছেন আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নেয়ার আগে তার করা মন্তব্য ঘিরে দুনিয়াজুড়ে পড়ে গেছে শোরগোল। উত্তর মেরুর অন্তর্গত ওই দ্বীপের দাম চুকাতে কত ডলার খরচ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে? এখন এমন প্রশ্ন সামনে এসেছে।
এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এর চুলচেরা বিশ্লেষণ। এর আগে ১৮৬৭ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা কিনে নেয় আমেরিকা। এজন্য সে সময়ে ওয়াশিংটনের খরচ হয়েছিল ৭২ লাখ ডলার।
আলাস্কার চেয়ে আয়তনের নিরিখে গ্রিনল্যান্ড অনেকটাই বড়। আর তাই দ্বীপটি কেনার ক্ষেত্রে দাম ৫০ শতাংশ বেশি হবে বলে মনে করেন আর্থিক বিশ্লেষকরা।
আমেরিকার উত্তরে এবং কানাডার পশ্চিম প্রান্তে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪১২ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে আলাস্কার অবস্থান। সেখানকার তাপমাত্রা বছরের অধিকাংশ সময়েই থাকে হিমাঙ্কের নিচে। তবে কৌশলগত দিক থেকে আলাস্কা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এলাকাটিতে রয়েছে খনিজ তেলের ভাণ্ডার।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্পকে গ্রিনল্যান্ড কেনার কথা বলতে শোনা গিয়েছিল। কানাডার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডে রয়েছে স্বশাসিত সরকার।
তবে আন্তর্জাতিকভাবে ডেনমার্কের অধিকার এর ওপর স্বীকৃত। ট্রাম্পের প্রস্তাবে অবশ্য তাৎক্ষণাৎ না বলে দেয় কোপেনহেগেন।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডারিকসেন বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কেরও নয়। গ্রিনল্যান্ড হল গ্রিনল্যান্ডবাসীদের।
অন্যদিকে ট্রাম্প ‘অপারেশন গ্রিনল্যান্ড’-এর কথা বলতেই একরকম ফুঁসে ওঠেন সেখানকার প্রধানমন্ত্রী মুট এগেদে। পাল্টা হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, কেউ এই ভূমি কব্জা করবে, তা আমরা কখনোই বরদাশত করব না।
মজার বিষয় হলো, গ্রিনল্যান্ডে আমেরিকার সেনাবাহিনীর একটি বড় ঘাঁটি রয়েছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ন্যাটো জোটের অন্তর্গত ডেনমার্কের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো।
এমন পরিস্থিতিতে গ্রিনল্যান্ড বিবাদকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন-কোপেনহেগেনের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
১৯৪৬ সালে একবার গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল আমেরিকা। ওই সময়ে ১০ কোটি ডলারের সোনার বিনিময়ে দ্বীপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করতে চেয়েছিল ওয়াশিংটন। বর্তমানে ওই টাকার অঙ্ক ১৬০ কোটি ডলারের বেশি হবে। আর্থিক বিশ্লেষকদের কথায়, গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রকৃত খরচ স্পষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপটি কিনে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে ট্রাম্পের। সেটা তিনি আদৌ পাবেন কিনা, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে।
নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অবশ্য এ সবের তোয়াক্কা করছেন না। গ্রিনল্যান্ড কব্জা করতে প্রয়োজনে তিনি যে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে পারেন, এরই মধ্যে এ ইঙ্গিত দিয়েছেন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা।
উল্লেখ্য, এর আগে ১৯১৭ সালে ডেনমার্কের কাছ থেকে ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ কিনেছিল ওয়াশিংটন। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কোপেনহেগেন পেয়েছিল আড়াই কোটি ডলারের সোনা। বর্তমানে এর বাজারমূল্য প্রায় ৬১ কোটি ৬২ লাখ ডলার।
১৮০৩ সালে একইভাবে ফ্রান্সের কাছ থেকে লুসিয়ানা কিরে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এতে ওয়াশিংটনের খরচ হয়েছিল দেড় কোটি ডলার মূল্যের সোনা। আজকের দিনে যা প্রায় ৪১ কোটি ৮৮ লাখ ডলার।
তবে গ্রিনল্যান্ড ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রী জিন নোয়েল ব্যারট। ট্রাম্প এ ধরনের কোনো পদক্ষেপে গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।
পাশাপাশি বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতাকে সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যারট।