যে কারণে ক্ষমতা ছাড়তে হলো জাস্টিন ট্রুডোকে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:১১ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সোমবার (৬ জানুয়ারি) ৫২ বছর বয়সি ট্রুডো এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয়প্রধান—দুটি পদ থেকেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন। লিবারেল পার্টির ক্রমবর্ধমান দুরবস্থার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত এলো।
দেশটিতে আগামী অক্টোবরে নতুন নির্বাচনের কথা থাকলেও, তার ৯ মাস আগেই ট্রুডো নেতৃত্ব ছাড়লেন। ২০১৩ সালে যখন ট্রুডো দলটির দায়িত্ব নেন, তখনো লিবারেল পার্টি সংকটের মধ্যে ছিল। তবে ২০১৫ সালের নির্বাচনে তিনি দলকে পুনরুজ্জীবিত করে ক্ষমতায় আনতে সক্ষম হন। এরপর ২০২১ সালের নির্বাচনে দল পুনরায় জয়ী হলে তিনি আবারো প্রধানমন্ত্রী হন।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে, যা তার দলের ওপরও প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে পরাজয়ের পর দলীয় নেতাদের মধ্য থেকে ট্রুডোর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টিকে বড় পরাজয়ের মুখে পড়তে হতে পারে।
রয়টার্স জানিয়েছে, জাস্টিন ট্রুডোর গদি নড়বড়ে হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় প্রভাব রেখেছে। এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে নিজের অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের পেছনে লাগেন তিনি। ট্রুডো সরকারি ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও এটির বিরোধিতা করেন ক্রিস্টিয়া। এর পর তাদের দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড অর্থমন্ত্রীর পদ ছাড়েন। ওই সময় তিনি অভিযোগ করেন, দেশের ভালোর জন্য কাজ না করে ট্রুডো ‘রাজনৈতিক খেলা’ খেলছেন। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধের পর ট্রুডোর পদত্যাগের চাপ জোরালো হয়।
এ ছাড়া জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ ট্রুডোর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। যদিও ভোক্তার স্বার্থ ও ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে দেশটি বিপুল খরচ করে থাকে। তা সত্ত্বেও জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কমার অন্যতম আরেকটি বড় কারণ ত্রুটিপূর্ণ অভিবাসন নীতি। তার আমলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ কানাডায় এসেছেন; যা দেশটির আবাসনে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। চাহিদার তুলনায় আবাসনের সংখ্যা কম হওয়ায় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ।
এদিকে এনডিটিভি দাবি করেছে, ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ফলে ট্রুডোর এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তাদের মতে, ট্রুডো তাঁর ব্যর্থতা ঢাকতে স্বাধীন খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হরদ্বীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে আনেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রুডো জানান, এই শিখ নেতাকে হত্যায় ভারত সরকার জড়িত। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রুডো ভারত ইস্যু সামনে এনে ব্যর্থতা ঢাকা এবং শিখদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা করলেও বিষয়টি উল্টো হয়েছে। অনেক কানাডিয়ান মনে করেন, জাতীয় ইস্যু থেকে নজর সরাতে তিনি ভারতীয় ইস্যু নিয়ে মাতামাতি করছেন। ট্রুডোর ক্ষমতা ছাড়ার খবরে ভারতে উল্লাস চলছে।
কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর ছেলে হিসেবে জাস্টিন ট্রুডোর সফলতার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন অনেকেই। অবশেষে ৪৪ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সফল হয়েছিলেন ট্রুডো।
অন্যদিকে বিরোধী নেতা কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পোইলিভের সমালোচনা করেছেন ট্রুডো। তিনি বলেন, দেশটির জন্য বিরোধী নেতার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই বন্ধ করার কোনো মানে হয় না। আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ভবিষ্যতের আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। কিন্তু পোইলিভের সেই দৃষ্টিভঙ্গি নেই।