আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন
বাংলাদেশে প্রভাব বাড়াতে সক্রিয় চীন

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে চীন কার্যত নিশ্চুপ। অথচ নীরব থেকেই চিন ‘দুই দেশের মানুষের মধ্যে আদানপ্রদান’-এর নামে বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট বলে ভারতের কূটনীতিক ও গোয়েন্দারা মনে করছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামিক সংগঠনের সঙ্গে চীনের ‘দৌত্য’ ও বিএনপি-র কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতার চিন সফরে সতর্ক নয়াদিল্লিকে।
বড়দিনের আগে চিনে বাংলাদেশের নয়া রাষ্ট্রদূত নাজমুল ইসলাম চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এশীয় বিষয়ক বিভাগের প্রধান নিউ জিনসংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২০২৫-এ চিন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী। তাই চীন ২০২৫-কে ‘চীন-বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আদানপ্রদানের বছর’ বলে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ঢাকার সঙ্গে শীর্ষ স্তরে আদানপ্রদানে বেজিং তৈরি। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে চীন প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ভাগ করতে চায়। যা দেখে ভারতের গোয়েন্দা কর্তা ও কূটনীতিকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার পতনের পরে বাংলাদেশে ‘ভারত বিরোধী’ মনোভাব তৈরি হলেও সে দেশের মানুষের মধ্যে ‘চীন বিরোধিতা’ দেখা-শোনা যায়নি। তাকে কাজে লাগাতে সক্রিয় বেজিং।
এক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্তা বলেন, সাধারণত মনে করা হয়, পাকিস্তান বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে। বাস্তবে পাকিস্তানের সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই। আড়ালে চিন বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। চীন এখন সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া জগৎ ও তরুণদের মধ্যে আদানপ্রদান বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে। তৎপর ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
কূটনীতিকদের মতে, গত মাসে ঢাকায় চীনের দূতাবাসে এক অনুষ্ঠানে জামায়তে ইসলামী, হেফাজত-ই-ইসলাম, খিলাফত মজলিস, নিজাম-ই-ইসলাম পার্টির মতো প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছিলেন। জামায়াতের প্রধান শফিকুর রহমান সেখানে হাজির ছিলেন। এই সংগঠনগুলির একটি দল চীন সফরে যাচ্ছে। তার আগে বিএনপি-র চার শীর্ষ নেতা চীন ঘুরে এসেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কূটনীতিক বলেন, অগস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে চীন চুপ। তারা নিজেকে নিরপেক্ষ দেখাতে চাইছে। কিন্তু চীন নিঃশব্দে শিকড় ছড়ানোর চেষ্টা করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বড় দেশগুলির মধ্যে ভারসাম্যের সম্পর্কের কথা বলেছেন।
বাংলাদেশের উপর চাপ তৈরি করতে চীনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল, ৬০০ কোটি ডলারের ঋণ। অগস্টে সরকার পতনের ঠিক আগেই হাসিনা চীন সফরে যান। তিনি এই ঋণের একাংশ আর্থিক অনুদান হিসেবে চেয়েছিলেন। চীন প্রাথমিক ভাবে মাত্র ১৩ কোটি ডলারের মতো আর্থিক অনুদানে রাজি হয়। কিন্তু হাসিনা সরকার পতনের তা আটকে গিয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করছে, এই ঋণের বোঝাকেও চীন হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাবে। সামগ্রিক কৌশলগত সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরির পরে বাংলাদেশ চীন থেকে বিপুল যুদ্ধাস্ত্রও আমদানি করেছে। বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে চীনের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার বৈঠকের পরে চীন বিবৃতিতে জানায়, তারা এ বার ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে সহযোগিতা বাড়াতে চায়। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, চীন যে ভাবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই কৌশল নিচ্ছে।