মনমোহন সিং ঘুরিয়ে দেন ভারতের অর্থনীতির মোড়

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : সংগৃহীত
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। প্রধানমন্ত্রী পদে তারই উত্তরসূরি, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাত ১০টা ৩৭ মিনিটে টুইট করে এ খবর জানিয়েছেন। মনমোহন সিংয়ের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তার স্ত্রী গুরচরণ সিং এবং তিন কন্যা আছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার কিছুক্ষণ আগেই দিল্লির এইমস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়- মনমোহন সিং এদিন সন্ধ্যায় বাড়িতেই অজ্ঞান হয়ে যান। বাড়িতেই তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। পরে তাকে এইমস হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। কিন্তু সব প্রচেষ্টা করা সত্ত্বেও তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনা যায়নি। রাত ৯টা ৫১ মিনিটে তিনি মারা গেছেন।
ড. মনমোহন সিং ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল- এই ১০ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এর আগে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। সেই সময়েই ভারতের অর্থনীতির উদারীকরণের যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও, সেটির বাস্তবায়ন করেছিলেন পেশা ও শিক্ষায় অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং।
৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক : সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে ভারত সরকার ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। বাতিল করা হয়েছে সব ধরনের সরকারি অনুষ্ঠান। সরকার ঘোষণা করেছে যে ড. মনমোহন সিংয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আজ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করা হবে। শেষকৃত্যের পর মনমোহনের অস্থি নিয়ে যাওয়া হবে কংগ্রেসের সদর দপ্তরে। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর শোকবার্তা আসা শুরু হয়ে যায়। শোকবার্তা দিতে থাকেন সেলিব্রেটিরাও। প্রথম শোকবার্তাটি অবশ্য দেন মনমোহন সিংয়েরই উত্তরসূরি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড় থেকে শুরু করে কংগ্রেস এবং তাদের বিরোধী দলগুলোর অনেক রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীই শোক জানিয়েছেন। শোকবার্তা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও।
মনমোহন সিংকে শ্রদ্ধা জানাতে গতকাল শুক্রবার সকালে তার নয়াদিল্লির বাসভবনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নড্ডাও মনমোহনের বাড়িতে
পৌঁছান। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মরদেহ প্রণাম করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তারা। রাজনৈতিক দূরত্ব ভুলে শুক্রবার সকাল থেকে ওই বাড়িতে একে একে জড়ো হন শাসক ও বিরোধী দলের নেতারা।
প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে : ড. মনমোহন সিংই ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। জওহরলাল নেহরুর পরে ড. মনমোহন সিংই প্রথম ভারতীয় নেতা, যিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর সম্পূর্ণ মেয়াদ পূর্ণ করার পরে দ্বিতীয়বার আবারো নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন। এদিকে ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পরে যে শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় প্রায় তিন হাজার শিখ নিধন হয়েছিল, যে দাঙ্গায় অভিযোগের আঙ্গুল ওঠে তারই দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, সেই ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই ক্ষমা চেয়েছিলেন মনমোহন সিং।
দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে অবশ্য বারবার তার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। কিছুটা সেসব অভিযোগের কারণেই ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তার দল কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করা হয়।
জন্ম, অর্থনীতিতে উচ্চ শিক্ষা : মনমোহন সিংয়ের জন্ম ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত পাঞ্জাব প্রদেশের এক ছোট্ট গ্রামে। সেই সময়ে ওই গ্রামে না ছিল বিদ্যুৎ, না ছিল সুপেয় পানির ব্যবস্থা। এরকমই একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা মনমোহন সিং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপরে ডি ফিল উপাধি পান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
তার কন্যা দমান সিং বাবার সম্বন্ধে একটি লেখায় জানিয়েছিলেন কেমব্রিজে পড়াশোনা করার সময়ে অর্থ সংকটে দিন কাটত পরবর্তী সময়ে ভারতের অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়া মনমোহন সিংয়ের।
ডিম সেদ্ধ করা বা টিভি চালাতেও পারতেন না : দমান সিং তার একটি বইতে লিখেছেন, পড়াশোনা আর থাকা-খাওয়ার জন্য বছরে তার ৬শ পাউন্ডের মতো খরচ হত। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি যে বৃত্তি পেতেন তা ছিল প্রায় ১৬০ পাউন্ড। বাকি খরচের জন্য তার বাবার ওপরে নির্ভর করতে হত তাকে। তিনি খুব সচেতনভাবে কিপটে হয়ে জীবনযাপন করতেন। ডাইনিং হলে বেশ সস্তায়, ২ শিলিং ৬ পেন্সে খাবার পাওয়া যেত।
দমান সিংয়ের এটাও মনে আছে যে তার বাবা বাড়ির ব্যাপারে একদম অসহায় ছিলেন। না পারতেন একটা ডিম সেদ্ধ করতে, না চালাতে পারতেন টেলিভিশন।
ভারতের অর্থনীতির মোড় ঘোরানো : শিক্ষায় আর পেশায় অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং রাজনীতির ময়দানে পরিচিত হন ১৯৯১ সালে, ভারতের অর্থমন্ত্রী হিসেবে। সেই সময়ে ভারতের অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল।
হঠাৎ করেই মন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি একসময়ে ছিলেন সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা আর ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’র গভর্নর। এখনো এমন ভারতীয় নোট দেখতে পাওয়া যায়, যদিও খুবই কম, যেখানে রিজার্ভ ব্যাংকের নোটে তার সই থাকত গভর্নর হিসেবে। একটা সময়ে রিজার্ভ ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধান হিসেবে কলকাতাতেও কাজ করেছেন মনমোহন সিং।
নরসিমা রাওয়ের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরে তার প্রথম ভাষণে তিনি ভিক্টর হুগোর বিখ্যাত উক্তি উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘যদি একটি ভাবনার আসার সময় হয়ে গিয়ে থাকে, তাকে পৃথিবীর কোনো শক্তিই আটকাতে পারে না।’ সেটিই ছিল ভারতের এক উচ্চাভিলাষী এবং অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সংস্কারের শুরুর ইঙ্গিত।
এরপরেই শুরু হয় করের হার কমানো, ভারতীয় টাকার অবমূল্যায়ন, সরকারি সংস্থাগুলোর বেসরকারিকরণ আর বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়ার মতো কর্মসূচিগুলো। তার সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থনীতি সত্যিই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে, মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হয় আর গত শতাব্দীর ’৯০-এর দশকে প্রবৃদ্ধির হার লাগাতার উঁচুর দিকেই থাকে।
‘অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ : মনমোহন সিং খুব ভালো করেই জানতেন যে তিনি রাজনীতিবিদ নন। তার কথায়, একজন রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা যায়, কিন্তু সেটা হতে হলে তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটে জিততে হবে!
ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন ১৯৯৯ সালে। কিন্তু হেরে যান তিনি। এরপরে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন আসাম থেকে।
এরপর এল ২০০৪ সালের নির্বাচন। কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল, কিন্তু কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী পদ নিতে অস্বীকার করলেন। সম্ভবত তিনি যেহেতু জন্মসূত্রে ইতালীয়, তাই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে, এটা ভেবেই সম্ভবত তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চাননি। সমালোচকরা এও বলে থাকেন যে মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়কালে সোনিয়া গান্ধীই ছিলেন আসল ক্ষমতার উৎস। মনমোহন সিংয়ের নিজের কোনো ক্ষমতাই ছিল না বলে মনে করেন সমালোচকরা।
পরমাণু চুক্তি ও বামপন্থিদের সমর্থন প্রত্যাহার : ড. মনমোহন সিংয়ের প্রথম ৫ বছরের মেয়াদকালে সবচেয়ে বড় জয়টা ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে পারমাণবিক প্রযুক্তি পাওয়ার জন্য একটি চুক্তি সই করা। তবে ওই চুক্তির জন্য মূল্য চোকাতে হয়েছিল তাকে- ভারতের কমিউনিস্ট দলগুলো ওই চুক্তির বিরুদ্ধে পথে নেমেছিল এবং সবশেষে সরকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্যান্য দলের কাছ থেকে সমর্থন জোগাড় করতে হয় কংগ্রেসকে আর এজন্য ভোট কেনা-বেচার অভিযোগও ওঠে দলটির বিরুদ্ধে।
মনমোহন সিংকে অবশ্য জোট সরকার চালাতে বারবারই বেশ বেগ পেতে হয়েছে। বিশেষ করে গলার জোর তোলা, কখনো কখনো রাজ্যভিত্তিক জোট-সঙ্গী দল এবং তাদের সমর্থকদের উচ্ছৃঙ্খল কার্যকলাপ বারবার বিব্রত করেছে মনমোহন সিং এবং তার সরকারকে। তিনি অবশ্য সবসময়েই ঐকমত্যের ভিত্তিতেই চলার চেষ্টা করেছেন। তার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ সবসময়েই থেকেছে যে তিনি খুব নরম প্রকৃতির মানুষ আর সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। তবে তার সততা বা বুদ্ধিমত্তার কারণে সবাই তাকে সম্মান করে এসেছেন।
কিছু কিছু সমালোচক বলে থাকেন, তিনি ভারতের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন অর্থনৈতিক সংস্কার করেছিলেন যে গতিতে, সেটা কিছুটা শ্লথ হয়ে গিয়েছিল তার প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়ে।
‘দুর্বলতম প্রধানমন্ত্রী’ : বিজেপির নেতা ও ভারতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আদভানি একবার মনমোহন সিংকে দেশের ‘দুর্বলতম প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। জবাবে তিনি বলেছিলেন যে তার সরকার যে অঙ্গীকার করেছিল, সেসব পূরণ করতে এবং দেশ ও মানুষের কল্যাণে সর্বতোভাবে নিজেদের উজার করে দিয়েছে।
তবে, তার দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়ে আগেকার সাফল্যগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে। তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা একের পর এক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হতে থাকেন। সেই সব কথিত দুর্নীতির পরিমাণ লাখ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছায়। বিরোধীরা স্তব্ধ করে দেয় পার্লামেন্টের কাজকর্ম। ফলে দেশটির অর্থনৈতিক ঊর্ধ্বগতি কিছুটা থমকে যায়।
বাস্তববাদী বিদেশ নীতি : দুই পূর্বসূরির পথ অনুসরণ করেই এক বাস্তববাদী বিদেশ নীতি নিয়ে চলতেন মনমোহন সিং। পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, যদিও সেই প্রক্রিয়া ভেস্তে দেয়ার জন্য যেসব হামলা চালানো হয়, তার দায়ভার গিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপরে। এই সব হামলা চরম পর্যায়ে পৌঁছে ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাই হামলার সময়ে।
অন্যদিকে তিনি চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলার লক্ষ্যে নাথু লা দিয়ে তিব্বতের সঙ্গে ৪০ বছর ধরে বন্ধ থাকা পুরনো একটি ব্যবসায়িক রুট ফের চালু করেছিলেন। আবার আফগানিস্তানকে বাড়তি আর্থিক সহায়তাও দিয়েছিলেন তিনি। তিনিই ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি আগের প্রায় তিন দশকের মধ্যে প্রথমবার আফগানিস্তান সফর করেছিলেন।
সামাজিক মাধ্যমে সামান্য কিছু ফলোয়ার : একজন শিক্ষাবিদ ও সাবেক আমলা মনমোহন সিং নিজের পড়াশোনা নিয়ে থাকতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। কোনো সময়েই তিনি নিজের পরিচয় নিয়ে উচ্চকিত ছিলেন না। তার সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলে আকর্ষণীয় কোনো পোস্ট যেমন থাকত না, তেমনই তার ফলোয়ারের সংখ্যাও ছিল খুবই সীমিত। তবে স্বল্প কথার, শান্ত একজন এমন একজন ব্যক্তিকে পছন্দ করতেন বহু মানুষ।
বেআইনিভাবে কয়লা খনির বরাদ্দ দেয়া নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা অর্থমূল্যের কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে তাকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি নিশ্চুপ থাকার যুক্তি দিয়েছিলেন এভাবে যে, চুপ করে থাকাটা ‘হাজার শব্দ দিয়ে জবাব দেয়ার থেকে ভালো’।
আবার ২০১৫ সালে যখন আদালত তাকে ডেকে পাঠায় ফৌজদারি ষড়যন্ত্র এবং দুর্নীতির অভিযোগে, দৃশ্যতই মনোক্ষুণ্ন মনমোহন সিং সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে তিনি ‘আইনি বিচারের জন্য প্রস্তুত’ আর ‘সত্যের জয় হবে’।
প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ থেকে সরে যাওয়ার পরে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা হিসেবে দলের দৈনন্দিন কাজকর্মে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি, যদিও বয়স সবসময়ে তার সঙ্গ দিত না।
বিবিসিকে দেয়া এক বিরল সাক্ষাৎকারে ২০২০ সালের আগস্টে ড. মনমোহন সিং বলেছিলেন যে করোনা ভাইরাসের মহামারির প্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে ভারতকে ‘অতি দ্রুত’ ৩টি জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেছিলেন- মানুষের হাতে সরাসরি নগদ সহায়তা পৌঁছিয়ে দিতে হবে, ব্যবসাবাণিজ্যের জন্য মূলধনের জোগান দিতে হবে আর আর্থিক খাতকে পুনর্গঠিত করতে হবে।
মনমোহন সিংকে ইতিহাস মনে রাখবে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে যিনি ভারতকে অর্থনৈতিক আর পারমাণবিক একঘরে হয়ে যাওয়ার থেকে উদ্ধার করেছিলেন। যদিও ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন যে তার বোধহয় আরো আগেই অবসর নেয়া উচিত ছিল। তবে মনমোহন সিং ২০১৪ সালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমি আশা করব যে সমসাময়িক গণমাধ্যম এবং সংসদের বিরোধী দলগুলোর তুলনায় ইতিহাস আমার প্রতি বেশি সদয় হবে।