ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য এখন ইয়াহিয়া সিনওয়ার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ পিএম

হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় ১ বছর ধরে হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই কৌশলী নেতা এখনো সবার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের সেই ভয়াবহ হামলার পর থেকে তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে। হামলা ও জিম্মির ঘটনার পেছনে মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিনওয়ার, তাই ইসরায়েলের কাছে সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছেন তিনি। ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক মানুষ। হামলার পরপরই অন্তত ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। পরবর্তীতে তাদেরকে বন্দী করে রাখা হয়। ইসরায়েল এখন মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে সিনওয়ারকে ধরার। কারণ তারা মনে করছে, সিনওয়ারকে ধরতে পারলেই এই সংঘাতের মোড় হয়ত ঘুরে যাবে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সিনওয়ার ২২ বছর ইসরায়েলের কারাগারে কাটিয়েছেন। সেখানে হিব্রু ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ইসরায়েলি সমাজ এবং তাদের মানসিকতা গভীরভাবে অনুধাবন করেছেন। এর ফলে তিনি ইসরায়েলের আচরণ ও কৌশল সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। গাজার ভূগর্ভস্থ টানেলের বিশাল নেটওয়ার্কে লুকিয়ে থাকায় তাকে খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। এই টানেলগুলো প্রায় ৫০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত, এবং সেগুলো একটি শহরের মতোই জটিল। ইসরায়েলের উন্নত প্রযুক্তি, যেমন গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রাডার এবং ড্রোন ব্যবহার করেও এখনো পর্যন্ত তারা নিওয়ারের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি।
সিনওয়ারকে ধরার চেষ্টায় ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের অনেক ঘাঁটি লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করেছে। কিন্তু ইসরায়েলের অনেক বড় বাঁধা হচ্ছে মানব ঢাল, কারণ সিনওয়ার তার আশেপাশে বেসামরিক মানুষদের রাখছেন, যা হামলাকে জটিল করে তুলছে। তবে তাতে থেমে নেই ইসরায়েল। অনেকেই মনে করছেন, সিনওয়ার ইলেকট্রনিক যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন এবং কেবল কুরিয়ারদের মাধ্যমে নির্দেশ পাঠাচ্ছেন, যেমনটা ওসামা বিন লাদেন করেছিলেন। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আশা করছে, হয়তো কোনো কুরিয়ারই তাদেরকে সিনওয়ারের কাছে নিয়ে যাবে।
ইসরায়েলের ইতিহাসে এমন লক্ষ্যবস্তুতে হামলার উদাহরণ অনেক রয়েছে। তারা মোহাম্মদ দেইফের মতো নেতাদেরও হত্যার চেষ্টা করেছে এবং সম্প্রতি তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছে। তবে সিনওয়ার আগের থেকে অনেক বেশি সাবধানী। তাকে ধরা বা হত্যা করা নিঃসন্দেহে ইসরায়েলের জন্য বড় এক বিজয় হবে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, তার মৃত্যু দিয়ে এই যুদ্ধ শেষ হবে না। হামাস একটি আদর্শিক সংগঠন, এবং সিনওয়ার না থাকলেও কেউ না কেউ এসে তার জায়গা নেবে।
আরো পড়ুন: গাজায় সংরক্ষিত এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৯
সিনওয়ার সম্ভবত গাজায় লড়াই চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। কেউ কেউ বলছেন, হয়তো তিনি পালিয়ে মিশর সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, সিনওয়ার গাজাতেই থাকবেন এবং শেষ পর্যন্ত লড়াই করে মারা যাবেন। ইসরায়েলের জন্য তাকে ধরার প্রয়াস খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার মৃত্যু বা বন্দিত্ব যুদ্ধ থামাবে, এমনটা ভাবা ভুল।