যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে এই স্টারমার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেল লেবার পার্টি। ৩৮১টি আসনে জয় পেয়েছে দলটি। অন্যদিকে নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দল কনজারভেটিভ পার্টির। এই পার্টি পেয়েছে ৭১টি আসন।
এ জয়ের মধ্য দিয়েই লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। নিজের আসনে জয়ের পর স্টারমার বলেছেন, ‘পরিবর্তনের সূচনা হলো এখান থেকেই.. এটা আমাদের জন্য দেয়ার সময়’।
যুক্তরাজ্যে টানা ১৪ বছর পর ক্ষমতা থেকে সরে গেল কনজারভেটিভ পার্টি। এরইমধ্যে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির জয় স্বীকার করে নিয়ে দলটির নেতা কিয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাক।
ভোটের মাঠে লেবার পার্টির এমন সাড়া জাগানো সাফল্যের নায়ক স্যার কিয়ার স্টারমারের জন্ম রাজধানী লন্ডনে। যুবক অবস্থায় তিনি ছিলেন উগ্র বামপন্থী। ১৯৬২ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে একজন, স্টারমার বেড়ে ওঠেন দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের সারে-তে। তার বাবা কারখানার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক হিসেবে কাজ করতেন এবং মা ছিলেন নার্স।
১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির স্থানীয় যুব শাখায় যোগ দেন স্টারমার। কিছু সময়ের জন্য উগ্র বামপন্থী একটি পত্রিকার সম্পাদনাও করেছিলেন। কিয়ার তার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি শিক্ষা লাভ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন। লিডস এবং অক্সফোর্ডে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ব্যারিস্টার হিসেবে মানবাধিকার নিয়ে কাজও করেছেন।
সেই সময় ক্যারিবিয়ান এবং আফ্রিকার দেশগুলিতে মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্তির জন্য তিনি কাজ করেন। ১৯৯০-এর দশকে একটা বিখ্যাত মামলায়, তিনি দু'জন ইকো-অ্যাক্টিভিস্ট বা পরিবেশ আন্দোলনকারীর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন যাদের বিরুদ্ধে ‘ম্যাকডোনাল্ডস’ মামলা করেছিল।
২০০৮ সালে, স্যার কিয়ার পাবলিক প্রসিকিউশনের ডিরেক্টর এবং ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যার অর্থ, তিনি ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের সবচেয়ে সিনিয়র প্রসিকিউটর সরকারি কৌঁসুলি ছিলেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি চাকরি করেন। ২০১৪ সালে তাকে নাইট উপাধি দেয়া হয়েছিল।
তিনি প্রথমবার সংসদে যান ২০১৫ সালে। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর লেবার পার্টির নেতা হওয়ার সুযোগ পান স্যার কিয়ার। লেবার পার্টির জন্য সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল এটা। ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে হেরেছিল ওই দল, যা জেরেমি করবিনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে।
লেবার পার্টির নেতা হিসেবে ২০২০ সালের এপ্রিলে দায়িত্ব নেন স্টারমার। এসময় জেরেমি করবিনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। দায়িত্ব নিয়ে দলকে যুক্তরাজ্যের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেন স্টারমার। কয়েক বছরের মাথায় ভোটের লড়াইয়ে এর সুফল পেলেন তিনি।
স্টারমার সমর্থকদের চোখে একজন বাস্তববাদী মানুষ এবং ভরসা করার মতো রাজনীতিবিদ। সমালোচকদের অনেকের মতে, স্টারমার চৌকস নন; বরং তিনি অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়া একজন রাজনীতিক। তিনি একজন দক্ষ ফুটবলারও। ক্লাব ফুটবলে আর্সেনালের ভক্ত তিনি। ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়ায় অবদান রাখায় ‘নাইট’ উপাধি পেয়েছেন স্টারমার।
এদিকে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় ইসরায়েলি অভিযান এবং সে দেশের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেন স্যার কিয়ার।
তার সিদ্ধান্ত অনেক ফিলিস্তিনপন্থী ভোটারদের ক্ষুব্ধ করেছিল। লেবার পার্টির বহু সাংসদ যারা সেই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন, তাদের বিদ্রোহের সম্মুখীন হতে হয়েছিল স্যার কিয়ারকে।
তবে সম্প্রতি তাকে অন্য কথা বলতে শোনা যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ডাক দিয়েছিলেন এমন যুদ্ধবিরতির যা স্থায়ী হবে। এবং জোর দিয়ে বলেছিলেন, এখন এটাই হওয়া উচিত!
সম্প্রতি স্টারমার বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে যেসব মানুষ আসছেন, তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না।’ কনজারভেটিভ সরকারের রুয়ান্ডা অভিবাসী প্রত্যাবাসন প্রকল্পের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
স্টারমারের এমন মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়ে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি সম্প্রদায়। প্রতিবাদ জানানো হয়। এমন মন্তব্যে বিপাকে পড়েন এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা। এবার লেবার পার্টির আটজনসহ সব মিলিয়ে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক ভোটে লড়েছেন।
আরো পড়ুন: যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ জয়, প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন স্টারমার
তুমুল সমালোচনার মুখে সুর নরম করেন স্টারমার। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বাংলাদেশকে আলাদাভাবে বোঝাতে চাইনি। আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও আমাদের দেশের প্রতি বাংলাদেশি কমিউনিটির অবদানকে আমি ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করি।’
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর স্টারমারকে ডাউনিং স্ট্রিটে আরও কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে। ভোটের আগে তিনি এক শব্দের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার করেছেন। তা হচ্ছে-পরিবর্তন।
জনগণের জন্য সরকারি সেবার মান কমে যাওয়া এবং জীবনযাত্রার মান নিয়ে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছেন স্টারমার। বলেছেন, লেবার পার্টি পরিবর্তন আনবে। যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন, তা থেকে শিগগিরই উত্তরণের কোনো জাদুমন্ত্র তার কাছে নেই।