উত্তর গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ চরম খাবার সংকটের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, শুধু রুটি খেয়ে বেঁচে আছেন তারা। তাদের কাছে ফল, সবজি আর মাংস একদম ফুরিয়ে আসছে। শুধু কি তাই? সেখানে বাজারে যেসব খাবার পাওয়া যাচ্ছে, তাও আবার কিনতে হচ্ছে চড়া দামে ।

এছাড়া যুদ্ধ শুরুর আগে সেখানে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিলো প্রায় এক ডলার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০ ডলারে । প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৭০ ডলার চাইছেন বিক্রেতারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা নগরীতে থাকেন ছয় সন্তানের মা উম মোহাম্মেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষুধার্ত, কিন্তু বিশ্ব আমাদের কথা ভুলে গেছে।’ তিনি জানান, ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বোমাবর্ষণের মুখে বেশ কয়েকবার ঘর ছাড়তে হয়েছে তার পরিবারকে। আশ্রয় নিয়েছেন জাতিসংঘ পরিচালিত বিদ্যালয়ের আশ্রয়শিবিরে।

এই নারী আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে শুধু ময়দা ও রুটি আছে। কিন্তু রুটির সঙ্গে খাওয়ার মতো কিছুই নেই। তাই শুধু রুটি খেয়ে থাকতে হচ্ছে।’

আরো পড়ুন: ঈশ্বরকে নিয়ে রসিকতা করা যাবে!

গত শুক্রবার (১৪ জুন) প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিস ও আল-কারারা এলাকায় উড়োজাহাজ থেকে সহায়তার বাক্স ফেলা হয়েছে।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস গত বুধবার (১২ জুন) সতর্ক করে বলেছেন, গাজার জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটা অংশ এখন বিপর্যয়কর ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।

মে মাসের শেষের দিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে গাজা উপত্যকায় তাজা খাবার সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক দাতব্য কর্মীরা এ কথা জানান।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া বিভিন্ন পোস্টে গাজাবাসী খাবারের চড়া দামের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন। তারা বলেছেন, ইসরায়েল ও পশ্চিম তীর থেকে নিয়মিত দামে খাবার কিনে তা গাজায় এনে চড়া দামে বিক্রি করছেন।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় বাজার নজরদারি ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার সুযোগ কিছু ব্যবসায়ী কাজে লাগাচ্ছেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

উম মোহাম্মেদ বলেন, ‘এখানে কোনো মাংস নেই। সবজি নেই। যদি কিছু পাওয়াও যায়, তবে তা কিনতে অবিশ্বাস্য দাম দিতে হচ্ছে।’

এদিকে ইসরায়েল বলছে, গাজার বেসামরিক মানুষদের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার কাজে কোনো ধরনের বাধা দেয়া হচ্ছে না। কোনো সীমা বেধে দেয়া হয়নি। বরং জাতিসংঘ খুব ধীরগতিতে সহায়তা সরবরাহ করছে। এমনকি সংস্থাটির কার্যক্রম অপর্যাপ্ত।