হলফনামায় সম্পদের যে বিবরণ দিলেন মোদি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
আটবছর আগে এক ডিসেম্বরে মোদি ভারতে নোটবন্দি ঘোষণা করেছিলেন। বিরোধীরা এসময় মোদির এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলো, কিন্তু মোদি ছিলেন নির্বিকার।
এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন- ‘বিরোধীরা ভয় পাচ্ছে তাদের অবৈধ কালো টাকা হারানোর। কিন্তু আমি তো ফকির, ঝোলা নিয়ে এসেছি আবার ঝোলা নিয়েই চলে যাব। আমার তো কিছুই নেই।
কিন্তু বুধবার (১৫ মে) নিজেরে সেই ঝোলাটি নির্বাচন কমিশনের সামনে উপুড় করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তাতে দেখা যাচ্ছে তিনি মোটেই ফকির নন। বরং তার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় কয়েক কোটি টাকা। নিজের ব্যাংক হিসেবেই রয়েছে কোটি টাকা।
আগামী ১ জুন ভোটে বারাণসী থেকে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের নিজের যোগ্যতা, সম্পত্তি, আয়কর রিটার্ন, ঋণ (থাকলে) এবং অপরাধের ইতিহাসের (থাকলে) বিশদ হলফনামার মাধ্যমে জানাতে হয় কমিশনের কাছে। সোমবার (১৩ মে) দেশে চতুর্থ দফার ভোট চলাকালীন মোদিও নিজের হলফনামা জমা দিয়েছেন। তাতেই প্রকাশ্যে এসেছে তার সম্পত্তির বিস্তারিত হিসাব।
হলফনামায় মোদি জানিয়েছেন, তার বাড়ি-গাড়ি কিছুই নেই। যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন সরকারি বাংলোয় থেকেছেন। ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত নয়াদিল্লির ৭, লোক কল্যাণ মার্গের সরকারি বাসভবনে থাকেন। যদিও মোদির ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের হলফনামা বলছে, গুজরাতের গান্ধীনগরে তার একটি বাড়ি ছিল। পাঁচ বছর আগে সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের সেই বাড়ির দাম ছিল ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। মোদী জানিয়েছিলেন, ওই বাড়ি তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পাননি। ২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমমন্ত্রী হওয়ার পরে কিনেছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালের হলফনামায় ওই বাড়ির উল্লেখ থাকলেও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ওই বাড়িটি তিনি বিক্রি করেছেন কি না, তারও উল্লেখ নেই হলফনামায়।
২০১৯ সালের হলফনামা বলছে মোদীর মোট অস্থাবর সম্পত্তি ১ কোটি ৪১ লক্ষ ৩৬ হাজার ১২০ টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা স্থায়ী আমানত হিসাবে স্টেট ব্যাঙ্কের একটি অ্যাকাউন্টে রক্ষিত রয়েছে। মোদীর সাম্প্রতিক হলফনামা বলছে, ৫ বছরে ওই অ্যাকাউন্টেই মোদীর জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্টেট ব্যাঙ্কে মোদীর একটি সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৭৩ হাজার ৩০৪ টাকা। আরো একটি অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৭০০০ টাকা এবং স্থায়ী আমানত হিসাবে রয়েছে ২ কোটি ৮৫ লক্ষ ৬০ হাজার ৩৩৮ টাকা।
২০১৯ সালের হলফনামা অনুযায়ী মোদীর জীবন বিমার পলিসি ছিল ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৩৪৭ টাকার। এ ছাড়া তার নামে কেনা ছিল কিছু শেয়ারও। ছিল ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৪৬৬ টাকার ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট। ২০২৪ সালের হলফনামায় অবশ্য বিমা বা শেয়ারের কোনও উল্লেখ নেই। মোদীর ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটের জমার অঙ্ক শুধু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লক্ষ ১২ হাজার ৩৯৮ টাকা।
তবে মোদীর ঘোষণা মতে তার আয়ের সূত্র দুটি। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার বেতন এবং ব্যাঙ্কে জমা অর্থ থেকে আসা সুদ। মোদী হলফনামায় জানিয়েছেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবর্ষে ২৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮০ টাকা উপার্জন করেছেন তিনি। ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৭৯ টাকা আয়কর দিয়েছেন সেই উপার্জনের ভিত্তিতেই।
এ ছাড়া মোদীর হাতে নগদ রয়েছে ৫২ হাজার ৯২০টাকা। ৪৫ গ্রাম ওজনের চারটি সোনার আংটিও রয়েছে। যার মূল্য ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭৫০ টাকা। সব মিলিয়ে ৩ কোটি ২ লক্ষ টাকা ৬ হাজার ৮৮৯ টাকার সম্পত্তি রয়েছে মোদীর।
কিছু স্থাবর সম্পত্তি ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। তবে দশ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকায় বেতনের টাকা সুদ মিলিয়ে অনেকটাই জমেছে। তবে হিসাব বলছে, ওই দুই ক্ষেত্র ছাড়াও কিছু টাকা এসেছে। হতে পারে সেটা অতীতের সম্পত্তি বা বিনিয়োগ থেকে এসেছে। তবে সব মিলিয়ে প্রায় ড কোটি টাকার মালিককে কি কোনভাবে ‘ফকির’ বলা যায়!
তবে বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে মোদি এই অর্থেই ‘ফকির’ যে, তার আগে-পিছে কেউ নেই।