আইরিশ বীর ববি স্যান্ডসের প্রতি ইরানিদের শ্রদ্ধা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১১:১১ এএম

ছবি: সংগৃহীত
আইরিশ বীর ববি স্যান্ডস ছিলেন একজন স্বাধীনতাকামী। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে আয়ারল্যান্ডকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। শতাব্দীর সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী অনশন ধর্মঘটের সূচনা করে তিনি ব্রিটিশ আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যদিয়েই জীবন উৎসর্গ করেন। ববি স্যান্ডস'র পুরো নাম রবার্ট জেরার্ড স্যান্ডস। উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে তার জন্ম। ১৮ বছর বয়সেই তিনি আইরিশ লিবারেশন আর্মিতে যোগ দেন। এরপর তিনি কয়েকবার গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি হন।
ববি স্যান্ডস ঔপনিবেশিকতা এবং ব্রিটিশ সরকারের আচরণের প্রতিবাদে বন্দিদের পোশাক পরতে অস্বীকার করেছিলেন। ১৯৮১ সালের মার্চে কারাগারে অনশন শুরুর আগে তিনি নানা ভাবে প্রতিবাদ-মুখর হয়েছেন। তবে মার্চ থেকে তিনি কারাবন্দিদের সঙ্গে অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড থেকে দখলদার ব্রিটিশ সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন।
ঔপনিবেশিকতা বিরোধী এই বীরের নামে ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। এই রাস্তাটি ব্রিটিশ দূতাবাসের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। দূতাবাসের প্রধান ফটকটি এই এই রাস্তাতেই। কিন্তু ব্রিটিশ দূতাবাস রাষ্ট্রীয় কাজে বারবার 'ববি স্যান্ডস' নামটি লিখতে রাজি নয়। এ কারণে তারা 'ফেরদৌসি' স্ট্রিটে দূতাবাসের আরেকটি ফটক খুলেছে। এর মাধ্যমে তারা 'ববি স্যান্ডস' স্ট্রিটকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। ববি স্যান্ডস'র মূল লক্ষ্য ছিল উত্তর আয়ারল্যান্ডে ব্রিটিশ বাহিনীর দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো। জেলে যাওয়ার পর তিনি কারাবসিবন্দিদের দুর্দশা দেখে সেখানেও গড়ে তুললেন আন্দোলন।
দাবি তুললেন বন্দিদেরকে জোর-জরবদস্তি করে কাজ করানো যাবে না এবং সাপ্তাহিক অধ্যয়ন ও স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিতে হবে। রাজবন্দিদেরকে সাধারণ অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। ব্রিটিশরা ববি স্যান্ডস'র দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি, পাল্টা জবাব হিসেবে তিনি ব্রিটিশদের দিলে ঐতিহাসিক শিক্ষা। প্রজাতন্ত্রের দাবি তোলার অপরাধে যারা কারাগারে ছিলেন তাদেরকে সঙ্গে পর্যায়ক্রমিক অনশন ধর্মঘট শুরু করলেন।
এভাবে গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলেন তারা। দাবি পূরণ না হওয়ায় তিনি অনশন অব্যাহত রাখলেন। ৬৬ দিন অনাহারে থেকে ১৯৮১ সালের ৫ মে ববি স্যান্ডস মাত্র ২৭ বছর বয়সে কারা-হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ক্যাথলিক চার্চের প্রতিনিধিরা ববিকে অনশন শেষ করার অনুরোধ জানালে তিনি বলেছিলেন, অনশন বন্ধ করার জন্য আমাকে চাপ দেয়ার পরিবর্তে ব্রিটিশ সরকারকে আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়ার জন্য চাপ দিন।
ববি স্যান্ডসকে 'আইরিশ বীর' হিসেবে অভিহিত করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, আমরা তাকে শুধু একজন সংগ্রামী হিসেবে দেখি না, আমরা ববি স্যান্ডসের নিস্তব্ধ ঠোঁটের বার্তা শুনেছি এবং সেটাকে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই বার্তা হলো বিশ্ব আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের পতনের বার্তা।
ববি স্যান্ডসের ব্যক্তিত্ব ইরানিদের কাছে এতটাই পছন্দনীয় যে, তেহরানের উত্তর অংশে অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁর নামকরণ করা হয়েছে তার নামে। ববি স্যান্ডস ও তার সহযোদ্ধাদের অনশনের ঘটনার ভিত্তিতে ২০০৮ সালে নির্মিত হয়েছে 'হাঙ্গার' নামের একটি সিনেমা। স্টিভ ম্যাককুইন এই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন যা সর্বত্রই প্রশংসিত হয়েছে। 'হাঙ্গার' সিনেমাটি স্বাধীনতার ক্ষুধাকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধারণ করেছে বলে বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করেছেন।