টাইটান বিপর্যয়: যেভাবে বেঁচে গেলেন মার্কিন ব্যবসায়ী

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ০৩:৫২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
গভীর এক শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসী। প্রায় ৯৬ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর জানা গেল, আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে ছোট্ট সাবমেরিন টাইটান। সেইসঙ্গে সলিল সমাধি হয়েছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া পাঁচ পর্যটকের। তবে এ যাত্রায় অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যবসায়ী।
টাইটানের বিপর্যয় থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ওই ধনকুবেরের নাম জে ব্লুম। টাইটানে করে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার ইচ্ছা ছিল তারও। এ জন্য তিনি রেজিস্ট্রেশনও করেছিলেন। তবে সাবমেরিনটির নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করেন। সফরটি বাতিল না করলে এখন তিনিও থাকতেন আটলান্টিকের তলদেশে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাওয়া ওই যাত্রীদের তালিকায়।
লাস ভেগাসের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জে ব্লুমকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার এ যাত্রায় টাইটান সাবমার্সিবলে দুটি আসনের টিকেট কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার উদ্বেগ এবং সময়সূচি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে অভিযানে যোগ দিতে অস্বীকার করায় এ যাত্রায় বেঁচে ফেরেন তিনি।
পাঁচ আরোহী নিয়ে আটলান্টিকের তলদেশে গিয়ে নিখোঁজ সাবমেরিন টাইটানের দুর্ভাগ্য যখন অনেকটা নিশ্চিত, তখন ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে ব্লুম জানান, তাকে কিছুটা কম দামে এই যাত্রার দুটি আসনের টিকিট কিনতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
ব্লুম বলেন, ‘ওশানগেট এক্সপিডিশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও স্টকটন রাশ, যিনি টাইটানিক ধ্বংসস্তূপের কাছে যাওয়ার পথে নিহত পাঁচজন টাইটান আরোহীর একজন। ফেব্রুয়ারিতে স্টকটনের সঙ্গে তার সরাসরি দেখা হয়েছিল। তখন তারা এ ধরনের অভিযাত্রা নিয়ে কথা বলেন।’
বৃহস্পতিবার ব্লুম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘স্টকটন আমাকে এবং আমার ছেলে শনকে তার সাথে মে মাসে টাইটানিকের ডাইভে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে ১৮ জুন পর্যন্ত ডাইভ বিলম্বিত হয়।’
‘আমি টাইটান যাত্রার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে স্টকটন আমাকে বলেছিলেন এটি হেলিকপ্টারে উড়ে যাওয়া কিংবা স্কুবা ডাইভিংয়ের চেয়েও অনেক বেশি নিরাপদ। বেসামরিক সাবমেরিনে ৩৫ বছরে কারও আহত হওয়ার উদারহরণ নেই।’
‘আমি নিশ্চিত যে, তিনি যা বলছিলেন তা তিনি সত্যিই বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু তার বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে’ যোগ করেন এই ধনকুবের।
লাস ভেগাসভিত্তিক এই ব্যবসায়ী বলেছেন, তিনি রাশকে শেষবার দেখেছিলেন মার্চ মাসে। রাশ তাকে লুক্সর হোটেল এবং ক্যাসিনোতে টাইটানিক প্রদর্শনীতে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর লুক্সর ফুডকোর্টে এই অভিযাত্রা ও নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়। পরে রাশ তাকে একটি ছবির বই উপহার দিয়েছিলেন, সেখানে তার ও পল হেনরি নাজোলের স্বাক্ষর ছিল।
ব্লুম বলেছেন, ‘আমি তাকে জানিয়েছিলাম, সময়ের কারণে এবার হচ্ছে না। পরে আমাদের জন্য প্রস্তাবিত দুটি আসনে শাহজাদা দাউদ ও তার ১৯ বছরের ছেলে সুলেমান দাউদ গিয়েছে।’
১০০ বছরের বেশি সময় আগে ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় সেই সময়ের সর্ববৃহৎ জাহাজ টাইটানিক। জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে গত রোববার পর্যটকদের নিয়ে ডুব দিয়েছিল ডুবোযান টাইটান।
আটলান্টিকের গভীরে ডুব দেওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় টাইটানের সঙ্গে পানির ওপরে থাকা নিয়ন্ত্রক জাহাজ ‘পোলার প্রিন্সের’ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পর থেকে চলছিল টাইটানের উদ্ধার অভিযান।
চার দিনের শ্বাসরুদ্ধকর তল্লাশি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড জানায়, ভয়ংকর বিস্ফোরণে ভেঙে পাঁচ টুকরো হয়ে গেছে টাইটান। আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের পাশেই পাওয়া গেছে টাইটানের ধ্বংসস্তূপ। তবে এর টাইটানের পাঁচ আরোহীর মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন কোস্টগার্ড।