করোনার ভয়ে ছেলেকে নিয়ে ৩ বছর ঘরবন্দী মা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩, ০৬:৫৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ভারতে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। একজন তরুণ ভারতীয় মা তার ছেলেকে নিয়ে টানা তিন বছর ঘরে তালাবন্দী অবস্থায় ছিলেন। তার ধারনা, ঘর থেকে বের হলে তাঁর ছেলে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে, এই ভয়ে তিনি ছেলেকে নিয়ে তিন বছর ঘরবন্দী ছিলেন।
ভারতের নয়া দিল্লির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর গুরগাঁওয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘরবন্দী ওই নারীর নাম মুনমুন মাঝি। বর্তমানে তার বয়স ৩৬ বছর এবং তার ছেলের বয়স মাত্র ১০ বছর। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের উদ্ধার করেতে সক্ষম হয়েছে। খবর ওডিটিসেন্ট্রালের।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানায়, উদ্ধারের এক সপ্তাহ আগে মুনমুন মাঝির স্বামী সুজন মাঝি পুলিশের কাছে গিয়ে বিষয়টি বিস্তারিত জানান। সুজন মাঝি পেশায় একজন প্রকৌশলী। তিনি পুলিশকে বলেন, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে তিন বছর ধরে স্বেচ্ছায় ঘরের ভেতর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। লক ডাউন শেষ হওয়ার পর তিনি কাজের প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হন। এরপর তার স্ত্রী তাকে আর ঘরে ঢুকতে দেননি।
সুজন মাঝি জানান, তিনি এত দিন ঘরের বাইরে দরজার সামনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাদ্য সামগ্রী রাখতেন। নিজে থাকতেন বন্ধু ও আত্মীয়দের বাড়িতে। তিনি ভেবেছিলেন, শিগগিরই তাঁর স্ত্রীর বোধোদয় হবে এবং তিনি ঘরে ফিরতে পারবেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও তিনি বাড়ি ফিরতে পারেনি। তাই বাধ্য হয়ে অন্য একটি বাসা ভাড়া নেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রথমে ঘটনাটি বিশ্বাস করিনি। পরে ওই নারীকে (মুনমুন মাঝিকে) ভিডিও কল করি। তিনি বলেন, আমরা একদম সুস্থ আছি। কিন্তু ভিডিওতে আমরা দেখতে পাই, শিশুটির চুল বড় হয়ে কাঁধ পর্যন্ত নেমে এসেছে। করোনা মহামারির শুরুর সময় তার বয়স ছিল সাত। এখন সে ১০ বছর বয়সী বালক। তিন বছর ধরে সে তার মা ছাড়া আর কাউকে দেখেনি। ছেলেটি দেয়ালে আঁকাআঁকি করেছে।

ছেলেটির মা করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ছেলেটির মা আমাদের বলেছেন, ঘর থেকে বের হলেই আমার ছেলের করোনা হবে। আমি আমার ছেলেকে ঘর থেকে বের হতে দেব না।
সাংবাদিকদের পুলিশ বলেন, আমরা কয়েক দিন ধরে মুনমুন মাঝির সঙ্গে কথা বলতে থাকি। এক সময় তাঁকে থানায় আসার ব্যাপারে বোঝাতে সক্ষম হই। তিনি আজ থানায় এসেছিলেন, কিন্তু সঙ্গে তাঁর ছেলে ছিল না। পরে আমরা তাঁকে নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করি এবং মা ও ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করাই।
পুলিশ ও শিশু কল্যাণ দলের সদস্যরা ওই ঘরে গিয়ে দেখেন, পুরো ঘর নোংরা হয়ে আছে। তিন বছর ধরে পরিষ্কার করা হয়নি। কাপড়ের স্তূপ, চুল, খাদ্য সামগ্রীর খালি প্যাকেট ইত্যাদি ময়লা আবর্জনায় ঘর ভর্তি ছিল।
সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর প্রবীণ কুমার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ঘরের ভেতর এতটাই আবর্জনা ছিল যে আরও কিছুদিন এভাবে থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।
গুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. বীরেন্দর যাদব বলেন, নারীটির মানসিক সমস্যা রয়েছে। তাঁদের দুজনকেই মানসিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে সুজন মাঝি তাঁর পরিবারকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত। তিনি পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সুজন মাঝি বলেছেন, এখন তাঁদের চিকিৎসা চলছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।