ভারতের কাশ্মীরে সুড়ঙ্গপথ উদ্বোধন করলেন মোদি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৬ পিএম

শত শত মানুষ প্রচণ্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে মোদির জনসভায় হাজির হন। ছবি : সংগৃহীত
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুড়ঙ্গপথ উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) কড়া নিরাপত্তার মাঝে কাশ্মীরের সোনামার্গ শহরে এই সুগঙ্গটির উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রায় ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের এই প্রকল্পে একটি দ্বিতীয় সুরঙ্গ এবং কয়েকটি সেতু আর উঁচু পাহাড়ি রাস্তা থাকবে, যেগুলো কাশ্মীরের সঙ্গে লাদাখের যোগাযোগ স্থাপন করবে। শীতল অঞ্চল লাদাখ- ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের মাঝখানে অবস্থিত এবং কয়েক দশক ধরে এ অঞ্চলটি বিতর্কের কেন্দ্রে।
সোনামার্গ শহরে অবস্থিত ৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুরঙ্গটি কাশ্মীর উপত্যকার দেবদারু গাছে ঢাকা পর্বত মালার শেষ প্রান্তে অবস্থিত। এর পরেই জজিলা পাহারের গিরিপথ পার হয়ে লাদাখের শুরু। এই সুরঙ্গ পথে পুরো বছর জুড়ে যাতায়াত করা সম্ভব করবে।
১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় সুরঙ্গ কঠিন জজিলা গিরিপথ পাশ কেটে যাবে এবং সোনামার্গের সঙ্গে লাদাখের যোগাযোগ স্থাপন করবে। দ্বিতীয় সুরঙ্গের কাজ ২০২৬ সালে শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন : ভারতে কুম্ভমেলা শুরু, আয় হতে পারে ২ লাখ কোটি টাকা
সোনামার্গ এবং লাদাখ ব্যাপক তুষারপাতের মুখে পড়ে, যার ফলে গিরিপথগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং এই দুই শহর বছরে প্রায় ছয় মাস আশেপাশের শহরগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কর্তৃপক্ষ এলাকায় পুলিশ এবং সেনা মোতায়েন করে বিভিন্ন মোড়ে একাধিক চেকপয়েন্ট স্থাপন করে। কয়েক জায়গায় সেনাবাহিনী স্নাইপার মোতায়েন করে এবং ড্রোন উড়িয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
শত শত মানুষ প্রচণ্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে মোদির জনসভায় হাজির হন। জনসভায় মোদি বলেন, এ ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প সড়ক যোগাযোগ উন্নত করবে এবং এ অঞ্চলে পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। ওই সভায় মোদির মন্ত্রীসভার কয়েকজন সদস্য এবং কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুরঙ্গ প্রকল্প সামরিক বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ফলে তারা লাদাখে কর্মকাণ্ড চালানর জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা পাবে। বেসামরিক লোকজনও লাভবান হবে, যেহেতু কাশ্মীর উপত্যকা এবং লাদাখের মধ্যে সাড়া বছর যাতায়াতের স্বাধীনতা তারা পাবে।
গত অক্টোবর মাসে, অস্ত্রধারীরা সুরঙ্গ প্রকল্পে কর্মরত অন্তত সাতজনকে হত্যা এবং পাঁচজনকে আহত করে। হামলার জন্য পুলিশ এই অঞ্চলে স্বাধীনতাকামীদের দোষারোপ করে।
নয়া দিল্লি ২০১৯ সালে সংবিধানে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে। এই সাংবিধানিক মর্যাদার ফলে কাশ্মীর একটি আধা স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যে হিসেবে গণ্য হতো, যার নিজস্ব সংবিধান ছিল এবং রাজ্যের জমি এবং কর্মসংস্থান সংরক্ষিত ছিল।
কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীর রাজ্যকে দু’ভাগ করে দুটি কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল–জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ সৃষ্টি করে। এই প্রথমবার ভারতে কোনো রাজ্যের মর্যাদা কমিয়ে কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়।
ভারত এবং পাকিস্তান প্রত্যেকে কাশ্মীরের একটি করে অংশ শাসন করে, কিন্তু দুজনই কাশ্মীরের পুরোটাই দাবি করে। কাশ্মীরের ভারত-শাসিত অংশে স্বাধীনতাকামীরা ১৯৮৯ সাল থেকে নয়া দিল্লির শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
কাশ্মীরের দুই অংশকে এক করে হয় পাকিস্তানের অধীনে নেয়া, না হয় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য বিদ্রোহীদের।