২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে বিশেষত মহিলাদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলের প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে ঢাকায় দুদিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অবস্ট্রেটিক ফিস্টুলা সার্জন্স (আইএসওএফএস)-এর ৯ম আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে আজ (বৃহস্পতিবার)। 

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল পাঁচটায় বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারের (বিআইসিসি) লিজান্ডারি হলে সম্মেলনটির উদ্বোধন উপলক্ষ্যে 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অবস্ট্রেটিক ফিস্টুলা সার্জন্স (আইএসওএফএস)-এর সভাপতি অধ্যাপক সায়েবা আকতার। 

'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দুদিনব্যাপী এই সম্মেলনটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য- প্রসবজনিত ফিস্টুলা সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি, উন্নত চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করা এবং এই রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যৌথ প্রচেষ্টা গড়ে তোলা। এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঁচ শতাধিক চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষক একত্রিত হবেন বলেও জানানো হয় এতে। 

এর আগে ওজিএসবি হাসপাতালে গত ৯ ডিসেম্বর (সোমবার) থেকে ১১ ডিসেম্বর (বুধবার) পর্যন্ত কনফারেন্স পূর্ববর্তী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানেও দেশ বিদেশের বিখ্যাত ফিষ্টুলা সার্জনরা অংশগ্রহণ করেন।  

আরো পড়ুন: ই-সিগারেট আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভার্চুয়াল বার্তা দিয়ে ফিষ্টুলা সার্জনদের অনুপ্রাণিত করেছেন এবং এই সম্মেলনের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক সোয়েবা আকতার বলেন, ইউএনএফপিএ ২০০৩ সাল থেকে ফিষ্টুলা নির্মূল বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত জোরালোভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন হাসপাতালও এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। বিশেষভাবে মামস ইন্সস্টিটিউট ফিষ্টুলা নির্মূলে অনেক কাজ করছে। এই পর্যন্ত ৪৯টি প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেছে। এছাড়াও ডিএমসিএইস, ল্যাম্ব হাসপাতাল, হোপ হাসপাতাল বিশেষভাবে কাজ করছে।

মহিলাদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা নিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রসবজনিত ফিস্টুলা একটি জটিল শারীরিক অবস্থা, যা সাধারনত দীর্ঘস্থায়ী বা জটিল প্রসবের কারণে নারীদের মূত্রনালী বা পায়ুপথের মধ্যে অস্বাভাবিক যোগাযোগের সৃষ্টি করে। এর ফলে রোগীরা মূত্র বা মল নিঃসরণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং সমাজের কাছে অপমানিত হন। এটি সাধারণত গরীব, প্রত্যন্ত এবং স্বাস্থ্য সেবা সংকটাপন্ন এলাকায় বেশি দেখা যায়। বিশ্বের নানা প্রান্তে, বিশেষত আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার কিছু অঞ্চলে, প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ নতুন ফিস্টুলা রোগী তৈরি হয়।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রসবজনিত ফিস্টুলা একটি গুরতর স্বাস্থ্য সংকট, যা নারীদের জীবনকে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আক্রান্ত নারীরা শুধু শারীরিক সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না, বরং অনেক সময় সমাজ ও পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, তাদের শীর্ষস্থানীয় পদ থেকে বিতাড়িত হতে হয় এবং নির্যাতনের শিকার হন।

আরো পড়ুন: ৪৭তম বিসিএসের আবেদন শুরু, তারিখ জানা গেল

রাষ্ট্রসহ এই রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে সোয়েবা আকতার বলেন, এই রোগটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। আমাদের এখন সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি এইখাতে সুযোগ সুবিধাগুলো বাড়াতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ফিস্টুলা নির্মূলে স্বাস্থ্যসেবার এই খাতে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি প্রত্যাশা করেন তিনি।

এসময় ফিস্টুলা নির্মূলে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। অনেক দেশে, বিশেষত উন্নয়নশীল এবং কম আয়ের দেশে, ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসা সেবা এখনও সীমিত। ফিস্টুলার কারণে নারীরা একদিকে যেমন শারীরিক সমস্যায় ভোগেন, অন্যদিকে তারা মানসিক ও সামাজিক নির্যাতনের শিকার হন। ফলে, শুধুমাত্র চিকিৎসা নয়, তাদের পুনর্বাসন ও সমাজে পুনঃপ্রবেশ নিশ্চিত করতে আশ্চর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সংবাদ সম্মেলনে ফিস্টুলা নির্মূলের জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়, এর মধ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন ঘটানো, প্রসবের সময় নারীদের পর্যাপ্ত মনিটরিং এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি অঞ্চলে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং হাসপাতালগুলোতে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা তৈরি করা, বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ এবং তা বৃদ্ধি করা, ফিনান্সিং এবং গবেষণা বাড়ানো, ফিস্টুলা নির্মূলের জন্য গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধন, নারী স্বাস্থ্য সেবার সম্প্রসারণ এবং ফিস্টুলা রোগীদের পুনর্বাসন এবং মানসিক সহায়তা প্রদান।