×

সরকার

এক দশক ধরে নিপীড়ন ও নিগ্রহের শিকার যেই মেধাবী ডিপ্লোম্যাট

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৫ পিএম

এক দশক ধরে নিপীড়ন ও নিগ্রহের শিকার যেই মেধাবী ডিপ্লোম্যাট

১৭তম বিসিএসের পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা ডঃ মোঃ তৌহিদুল ইসলাম

   

আওয়ামী শাসনামলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সেরা এক কর্মকর্তা বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন ও নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ওই কর্মকর্তাকে হেনস্তা করা ও তার পদায়ন ঠেকাতে তার অফিসে কর্মরত এক নারী কর্মীর শ্লীলতাহানির চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগও আনা হয়েছিল। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ওই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর এখনও সেই পুরনো ভিত্তিহীন অভিযোগকে সামনে এনে আটকে দেয়া হচ্ছে তার বিভিন্ন পদায়ন।

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর এখন তার সহকর্মীদের মধ্যে স্বৈরাচারী সরকারের ঘনিষ্ঠ একদল অফিসার মেধাগত যোগ্যতায় তার পদায়ন ও পদোন্নতি ঠেকানো যাবেনা বলে জেনে পুরাতন বানোয়াট কল্প কাহিনী আবারও সামনে এনে তাকে কর্মজীবন ও সামাজিকভাবে নাজেহাল করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বছরের পর বছর ধরে দেশের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল এই কূটনৈতিক কর্মকর্তাকে এভাবেই অবদমিত করে রাখা হয়েছে। নিপীড়ন ও নিগ্রহের শিকার এই কর্মকর্তা পররাষ্ট্র ক্যাডারের অন্যতম মেধাবীদের একজন হিসেবে পরিচিত। যিনি বিসিএস পরীক্ষায় শুধু তার ব্যাচের নয়, সব ক্যাডারের সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৭তম বিসিএসের পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা ডঃ মোঃ তৌহিদুল ইসলাম। 

তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক শেষে পররাষ্ট্র ক্যাডারের যোগদান করেন। এরপর বিশ্ব বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করেন। তিনি চার বছরেরও বেশি নিউইয়র্কের বাংলাদেশ মিশনে কাজ করার পর অর্থনীতি ও উন্নয়ন কমিটিতে দেশের প্রথম এবং একমাত্র নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট। সম্প্রতি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তৌহিদুল ইসলাম সিঙ্গাপুরে চার বছরেরও অধিক সময় ধরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিমধ্যে তিনি অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে পদন্নোতি পেয়েছেন এবং উচ্চতর গ্রেডে রাষ্ট্রদূত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। আর এই সময়ে সেই পুরাতন চক্র তার পদায়ন ঠেকাতে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

অপপ্রচারের শুরু হয় যেভাবে 

তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রথম মিথ্যা অভিযোগ রচনা শুরু হয় ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে ইতালি পোস্টিংয়ের ২ সপ্তাহের মধ্যেই। তৎকালীন সরকার ঘনিষ্ঠ একজনকে ইতালি পাঠানোর চক্রান্তে ড. তৌহিদকে ঢাকায় ফেরত নেওয়ার জন্য একজন নারী কর্মীকে ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে অপপ্রচার করা হয়। মন্ত্রণালয়ের আদেশ মেনে ড. তৌহিদ ঢাকায় ফিরে মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। এ সময় তিনি কর্তৃপক্ষ বরাবর এই মিথ্যা ঘটনার তদন্তের দাবি জানান। তদন্তে অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, কিন্তু মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনদের একটি গ্রুপের ইন্ধনে কোনোদিন এই তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে আনা হয়নি। বরং মাঝে মধ্যে বিশেষত তার পোস্টিং বা প্রমোশনের সময় আসন্ন হলে অপপ্রচার শুরু হয়। অবশেষে ৫ আগস্ট এর পর সেই মিথ্যা অভিযোগের রিপোর্ট খারিজ করে দেয়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনটি এখন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের হাতে এসেছে।  

১২ মে ২০১৪ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক (প্রশাসন) আল্লামা সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের অভাবে তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়াতে অভিযোগ সমূহ প্রত্যাহার করত: এ অবস্থাতেই মামলাটি নিষ্পন্ন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এসব বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা অপপ্রচার হয়েছে। গত ১০ বছর নানা ভাবে তিনি অন্যায়ের শিকার হয়ও পেশাদারিত্বের সাথে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করে গেছেন। 

এর পর ড. তৌহিদের পোস্টিং এর সময় এলেই স্বৈরাচারী সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ পূর্বের অসত্য মিথ্যা অভিযোগটি আবার সামনে নিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, এসব অভিযোগের ইংরেজি অনুবাদ করে বিভিন্ন দূতাবাসে পাঠিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। এমনকি ২০১৮ সালে নেদারল্যান্ডসে রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাব পাঠানো হলে নেদারল্যান্ডসের তৎকালীন ঢাকার রাষ্ট্রদূতকে মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ মহল থেকে কিছু অসাধু কর্মকর্তা এসব মিথ্যা প্রতিবেদন পাঠিয়ে তার নিয়োগ অনুমতির পত্র গ্রহণ না করতে প্ররোচিত করে। স্বাভাবিকভাবেই ডাচ সরকার সিদ্ধান্ত নিতে বিষয়টির সত্য মিথ্যা যাচাই করতে চায়; এ সুযোগে কুচক্রী মহল প্রচার করে দেয় ডাচ সরকার তাঁকে গ্রহণ করছে না। এটি একটি সর্বৈব মিথ্যা, কারণ ডাচ সরকার কখনো তাকে প্রত্যাখ্যান করে নি।

তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনাটি বানোয়াট। আমরা রিপোর্টে লিখেছি যে, এ ঘটনার সাথে অভিযুক্ত কূটনীতিকের কোন সম্পর্ক নাই। যদিও রিপোর্টে যাই থাক না কেন রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাতেই এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আশা করা যায়, আগস্ট প্রকাশের পর এই মেধাবী কর্মকর্তা দেশে-বিদেশে ন্যায়বিচার পাবেন এবং নতুন সরকার তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App