সীমান্তের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, সীমান্ত এবং দেশের জনগণকে জানান, তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সীমান্ত পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ অংশের সব বিওপিতে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদেরও সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নাফ নদীতে টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গোয়েন্দা কার্যক্রমও তীব্র করা হয়েছে। বিজিবি ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক টহল চালাচ্ছে, পাশাপাশি কোস্টগার্ড, আনসার ও পুলিশও একইভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
টেকনাফের দমদমিয়া বিওপির নিকটবর্তী এলাকায় তাৎক্ষণিক ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা আরো বলেন, দীর্ঘসময় ধরে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ও দাঙ্গা হয়। সর্বশেষ গত ৮ ডিসেম্বর মংডু টাউনশীপ দখলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটার এলাকা আরাকান আর্মির দখলে।
এছাড়া সীমান্তের ওপারে প্রায় গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন সময় ক্ষুদ্র ও ভারী অস্ত্রের ফায়ারের গোলা এপারে এসে পতিত হয়। আমাদের দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমরা প্রথম থেকেই মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় জীবন রক্ষার্থে এবং যুদ্ধাহত কিছু মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে আগমন করলে নিতান্ত মানবিক কারণে তাদের গ্রহণ করা হয়। এছাড়া আরাকান আর্মির তীব্র আক্রমণে মিয়ানমার জান্তা সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৮৭৬ জন সদস্য বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করে। তাদের বিজিবি আটক করে হেফাজতে রেখে আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্তবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিজিবি ও অন্য বাহিনী সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সাথে দায়িত্বপালন করছে।
সীমান্তের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ২০১৭ সালে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দেয়। এরপর ২০২৪ সাল পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর অগোচরে আরও ৫০-৬০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের রেজিস্ট্রেশন এখনো হয়নি। প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে বিভিন্ন সময় সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী প্রতিনিয়ত আসতে চেষ্টা করে। কিন্তু সব বাহিনীর আন্তরিক অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে বাধা পেয়ে, মরিয়া অসাধু দালাল চক্রের সহায়তায় কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। যেভাবে হোক দালাল চক্র প্রতিহত করতে হবে। সবার আন্তরিক সহায়তা ছাড়া এটা অসম্ভব। কারণ স্থানীয়রাই জানবেন কোন দালাল কোন পথে হাঁটছে।
উপদেষ্টা বলেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক, অবৈধভাবে আর কোনো মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সীমান্তে উদ্ভব যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সবসময় প্রস্তুত। আপনারা অবগত আছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা গত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন এবং মিশরের কায়রুতে ১১তম জি-৮ সম্মেলনে যোগ দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা টেকনাফ পৌঁছান। পরে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি। এসময় বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন।