বন্দর অবকাঠামো ও জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান নৌ উপদেষ্টার

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক রয়েছে। দেশের সম্ভাবনাময় জাহাজ শিল্পখাতে সিঙ্গাপুর বিনিয়োগ করতে পারে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে উভয় দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এসময় তাদের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভুশি নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এসময় ইরানের রাষ্ট্রদূত বর্তমান সরকারের প্রতি ইরান সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার আগ্রহের কথা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ এবং ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাদৃশ্য বিদ্যমান। এই সম্পর্ক প্রতিনিয়ত আরো সুদৃঢ় হচ্ছে। ইরান বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানি করে থাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ইরান থেকে লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে।
ইরানি রাষ্ট্রদূত বলেন, বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর মাধ্যমে দুই দেশের জনগণই উপকৃত হতে পারবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা ইরানের আগ্রহকে স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশ সরকার সবসময় আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিবহনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখেই জাহাজ পরিচালনা করে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যে বাণিজ্যের অন্যতম অংশীদার। আমদানি-রপ্তানি সম্প্রসারণে উভয় দেশেরই অনেক সুযোগ রয়েছে।
উপদেষ্টা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুই দেশেই ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আরো পড়ুন : মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাণিজ্য সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা
সাক্ষাৎকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, মঙ্গলবার বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের অনাবাসিক হাইকমিশনার ডেরেক লোহ ইউসে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে করেন। উপদেষ্টা সিঙ্গাপুরকে বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামোর উন্নয়ন ও জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানান। উভয়ই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার সূচনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আশা করেন এফটিএ দুই দেশের মধ্যে অধিকতর অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা সহজতর করবে।
উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে হাইকমিশনারকে অবহিত করেন। বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় সিঙ্গাপুরের সহায়তা কামনা করে বলেন, বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় সিঙ্গাপুরের চমৎকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দর যথা বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে শিপইয়ার্ড নির্মাণ, মোংলা বন্দরকে আধুনিকীকরণসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বন্দরসমূহের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে সিঙ্গাপুরকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের জাহাজ শিল্পখাতে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। দেশের সম্ভাবনাময় জাহাজ শিল্পখাতে সিঙ্গাপুর বিনিয়োগ করতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের মেগা সম্প্রসারণ প্রকল্প বে টার্মিনাল নির্মাণে বাংলাদেশকে ৬৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ৬৫ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই টার্মিনালটি নির্মিত হলে বাংলাদেশের বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে। বন্দরের কার্যক্ষমতা বাড়লে আমদানি ও রপ্তানি ব্যয় অনেকাংশে কমে আসবে। এই প্রকল্পের আওতায় দুটি কনটেইনার টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং একটি তেল ও গ্যাস টার্মিনাল উন্নয়নের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এটিকে গ্রীনপোর্ট হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বে টার্মিনাল বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর অবকাঠামোর আধুনিকীকরণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে একটি আন্তর্জাতিক মানের শিপইয়ার্ড/ডকইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনার সরকারের রয়েছে। এছাড়া, মোংলা পোর্টকে আধুনিকীকরণ করতে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। চীন দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের সহায়তা করছে। ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সহায়তায় আরেকটি প্রকল্প দ্রুতই আলোর মুখ দেখবে।
বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।