কর্পোরেট কৃষির বিরুদ্ধে আফ্রিকান কৃষকদের বিপ্লব

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৪ এএম

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলায় ক্রিটের বাড়ির উঠোন বাগানে কৃষিচাষ। ছবি: সংগৃহীত
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ছোট কৃষকেরা বড় কর্পোরেট কৃষির বিরুদ্ধে এক বিপ্লব গড়ে তুলছে। জলবায়ু সংকট, সংঘাত এবং বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর শিল্পজাত কৃষি কার্যক্রমের প্রভাবের মুখে ছোট কৃষি ও প্রথাগত কৃষি পদ্ধতির দিকে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই, কৃষির টেকসই পদ্ধতি ব্যবহার করে অধিকতর বৈচিত্র্যময় এবং স্থিতিশীল ফসল উৎপাদন করে নিজেদের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন তারা। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
ইথিওপিয়ার আসমেলাশ ড্যাগনে একজন পরিবেশবিদ। তিনি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেন কীভাবে রাসায়নিক সার এবং পাম্প করা পানি ছাড়া বৈচিত্র্যময় কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। তার মতে, প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে শুধুই কৃষকেরা ভালো ফসল পাচ্ছেন এমন নয়, বরং তারা খাদ্য উৎপাদনের জন্য নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসছেন। আসমেলাশ ড্যাগনে বলেন, বড় কোম্পানিগুলো বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করে এবং এটি তাদের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে এমন প্রথাগত পদ্ধতি আছে যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে আসছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার থেম্বা চাউকে লিম্পোপো অঞ্চলে স্থানীয় জনগণকে নিজেরাই খাদ্য উৎপাদনের গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন। কোভিড মহামারির সময় তিনি দেখেছিলেন, মানুষ বাজারনির্ভর হওয়ায় খাদ্যের জন্য অর্থনৈতিক সংকটে পড়ছে। তিনি কমিউনিটি গার্ডেন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন, যেখানে মানুষ নিজ নিজ খাদ্য উৎপাদন শিখতে পারছে। চাউকে বলেন, আমরা শিখেছি কীভাবে আমাদের নিজস্ব খাবার উৎপাদন করতে হয়, বিশেষ করে যখন মহামারিতে মানুষ ঘরে থাকতে বাধ্য হয়েছিল এবং খাদ্যের প্রাপ্যতা সংকুচিত হয়েছিল।
লেসোথোর রান্না বিশেষজ্ঞ স্কা মুটিন প্রথাগত বেসোথো খাদ্য সংস্কৃতিকে সংরক্ষণে কাজ করছেন। তিনি দেখেছেন, তার দেশের মানুষেরা ধীরে ধীরে মাংস এবং ফাস্ট ফুডের দিকে ঝুঁকছে, ফলে বেসোথোদের প্রথাগত খাবারের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। স্কা মুটিন এখন প্রথাগত খাবার আবার প্রচলিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, সরঘামকে (এক ধরনের শস্য) এখনও গরীব মানুষের খাবার মনে করা হয়। কিন্তু আমরা এখন এগুলো পুনরুদ্ধার করছি এবং এগুলো বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছি।
উগান্ডার স্টিফেন কাটঙ্গলে তার পিতার পরিত্যক্ত জমিতে কফি চাষ শুরু করেন। তবে কফি চাষের মাধ্যমে খুব বেশি লাভবান হতে না পেরে, তিনি ফসলের বৈচিত্র্য আনার জন্য এক নতুন পদ্ধতি চালু করেন। কাটঙ্গলে বলেন, আমাদের উচিত পূর্বের বনভূমিকে রক্ষা করে তা আরো বৃদ্ধি করা, যাতে আমরা পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারি।
এই ছোট কৃষকদের সাফল্য কেবল তাদের নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তাই নিশ্চিত করছে না, বরং পরিবেশেরও উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। স্লো ফুড ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি এডি মুকিবি বলেন, বড় কৃষি কোম্পানিগুলোর প্রচারণা আমাদের ক্ষতি করছে, কারণ তারা নিজেদের লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার কথা নয়।
আরো পড়ুন: ফিলিপাইনে ডিজিটাল সেবায় ১২ শতাংশ ভ্যাট আরোপ
আফ্রিকার এই ছোট কৃষকদের বিপ্লব প্রমাণ করছে, টেকসই কৃষি পদ্ধতি এবং প্রথাগত জ্ঞানই ভবিষ্যতের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় কার্যকর হতে পারে।