বাইডেনের বিদায়ে খুব ‘বিপদে’ জেলেনস্কি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৪১ পিএম

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিদায়ের পর থেকে প্রচণ্ড চাপে আছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই জেলেনস্কিকে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেয়ার পর ট্রাম্প ইউক্রেন ইস্যুতে আগের অবস্থানে অনঢ়। খবর আরব নিউজের।
এ কারণে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনায় তার দেশকে বাদ দেয়া হলে এর পরিনতি কিয়েভের খুব বিপজ্জনক হবে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
একইসঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনার জন্য কিয়েভ এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে আরো আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জেলেনস্কি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়া যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নিতে বা কোনো ধরনের ছাড় নিয়ে আলোচনা করতে চায় না।
জেলেনস্কি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার জ্বালানি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি এবং ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর প্রতি অব্যাহত সমর্থনের মাধ্যমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারেন।
ইউক্রেনের রাজধানীতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি মনে করি এগুলোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
গত শুক্রবার পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক করার আগ্রহের কথা জানানোর পরই এসব কথা বললেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
ট্রাম্প বলেছেন- তিনি পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন এবং তারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। ওয়াশিংটন মস্কোর সঙ্গে গুরুপূর্ণ আলোচনা করছে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প।
আরো পড়ুন : পুতিনের সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প
জেলেনস্কি বলেন, তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের ছাড়া ইউক্রেন নিয়ে কথা বলা সবার জন্য বিপজ্জনক।
তিনি বলেন, তাদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তবে সেই আলোচনাগুলো একেবারেই সাধারণ স্তরের। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, আরো বিস্তারিত আলোচনার জন্য শিগগিরই ট্রাম্প ও তার ব্যক্তিগতভাবে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ট্রাম্প তার শপথ গ্রহণের পর প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করেছিলেন উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, আমাদের এই বিষয়ে আরো কাজ করা দরকার।
প্রায় তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ এখন এক সন্ধিক্ষণে। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে অনেক দূরত্ব রয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি কীভাবে হবে তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া ধীরে ধীরে সাফল্য অর্জন করে চলেছে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীতে তীব্র জনবল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ ইউক্রেনীয় সেনা তাদের জীবন পুনর্গঠনের জন্য যুদ্ধে বিরতি চান।
প্রায় প্রতিদিনই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে রাশিয়ার হামলার কারণে পুরো শহর অন্ধকারে ডুবে গেছে।
দেশটির পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় লাখ লাখ ইউক্রেনীয় বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারছে না। ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। এই অঞ্চলগুলোতে ইউক্রেনীয় পরিচয়ের যে কোনো চিহ্ন দ্রুত মুছে ফেলতে চাইছে মস্কো।
দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পরই ইউক্রেনের সঙ্গে তার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কও এক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় ট্রাম্পের সঙ্গে প্রাথমিক ফোনালাপে জেলেনস্কি বলেছিলেন, দুজনেই একমত হয়েছেন-ট্রাম্প জিতলে যুদ্ধের অবসানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য তারা সাক্ষাৎ করবেন।
আরো পড়ুন : ইউক্রেনে রাশিয়ায় ভয়াবহ হামলা, নিহত ১৫
জেলেনস্কি বলেন, কিন্তু ট্রাম্পের ইউক্রেন দূত কিথ কেলগের পরিকল্পিত সফর আইনি কারণে স্থগিত করা হয়েছিল। এরপরে হঠাৎ মার্কিন সাহায্য বন্ধ করে দেয়া হয়, যার ফলে ইউক্রেনীয় সংস্থাগুলো প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
দ্রুত যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত দিয়ে জেলেনস্কি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, প্রথমত এবং সর্বাগ্রে, আমাদের অবশ্যই তার সঙ্গে একটি বৈঠক করতে হবে এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর আমাদের রাশিয়ানদের সঙ্গে আলোচনায় এগিয়ে যাওয়া উচিত। আলোচনার টেবিলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং রাশিয়ানদের দেখতে চাই।
সত্যি বলতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিও সেখানে থাকা উচিত। আমি মনে করি এটি ন্যায্য, কার্যকর হবে। কিন্তু এটি কীভাবে হবে আমি জানি না।