তারার বন্ধু যারা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
বন্ধু মানে আস্থা, বন্ধু মানে সাহস। একজন প্রকৃত বন্ধু পাশে থাকলে পৃথিবী জয় করা সম্ভব। জাতিসংঘ জুলাইয়ের ৩০ তারিখ বন্ধু দিবস পালন করলেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগস্টের প্রথম রবিবার বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়। শোবিজ তারকাদের কয়েকজন জানিয়েছেন তাদের বন্ধুত্বের গল্প
শর্মিলী আমার বন্ধু হলেও আপা বলে ডাকত
দিলারা জামান, অভিনেত্রী
আমার বন্ধু শর্মিলী আহমেদ। আমার বন্ধু আমায় ছেড়ে চলে গেছে। এই কষ্টটা এখনো সামলে উঠতে পারিনি। শর্মিলী আমার স্বামীর বন্ধুর পতœী ছিলেন। কিন্তু সেভাবে পরিচয় ছিল না ওর সঙ্গে। আশি সালের দিকে ওর সঙ্গে দেখা হয় রামপুরা বিটিভি সেন্টারে। এর আগেও দেখা হয়েছিল কয়েকবার। সুসম্পর্কটা তৈরি হয় সেদিন থেকেই। ও এসেছিল নাটকের কাজে। সঙ্গে ওর মা ছিল। ওর মা আমাকে বুকে জড়িয়ে বললেন, তোমরা পাঁচ বোন। আজ থেকে ও তোমাদের আরেকটা বোন। সেই থেকে শর্মিলী আমাকে বড় বোনের মতো মানত। তখন থেকেই ওর সঙ্গে আমার সখ্য। ওরা তখন রামপুরা থাকত। ৬-৭ বছর আগে ওখান থেকে উত্তরায় চলে আসে। ওর বাসা ছিল ১২ নম্বরে। আর আমার বাসা ১১ নম্বরে। কাছাকাছি থাকার কারণে সম্পর্কটা গভীর থেকে গভীরতর হয়। খুব খারাপ লাগছে ওর জন্য। একটা অসুখ শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছিল, এটি আমরা জানতেই পারিনি। এমনকি ও নিজেও জানত না। সব সময়ই কথা হতো ওর সঙ্গে। মারা যাওয়ার দুদিন আগেও কথা হয়েছিল। অসুস্থ হওয়ায় কেমোথেরাপি নিচ্ছিল, কেমো নেয়া শেষ হলে দেখা করার কথা ছিল। ঈদের সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকবে, তখন দুজনে বাইরে ঘুরব প্ল্যান করে রেখেছিলাম। কিন্তু ঈদের আগেই সে চলে গিয়েছিল। শর্মিলী সবার কাছে একজন প্রিয় মানুষ ছিলেন। আমি ওকে শর্মিলী নামেই ডাকতাম। ও আমাকে আপা বলে ডাকত।
কাজ করতে গিয়েই নাদিয়ার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়
ফারজানা ছবি, অভিনেত্রী
আপনার যে কোনো সংকটের কথা যাকে নির্দ্বিধায় বলা যায়, যার কাছে আপনার কোনো ভয় নেই, সে-ই হচ্ছে আপনার বন্ধু। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হচ্ছে আমার মা এবং আমার বোন। আমার জীবনের যে কোনো সংকটে তারা ছায়া হয়ে পাশে থাকেন। আমার শাশুড়ির কথা না বললেই নয়। তার সঙ্গে আমার আড্ডা দিতে ভালো লাগে। যার সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালো লাগে সে নিশ্চয়ই বন্ধুর মতোই হবেন। আমার হাজবেন্ড তন্ময় সরকারের সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব তৈরি হয় অনার্সে পড়ার সময়। আমরা ক্লাসমেট ছিলাম। এরপর আমাদের মাঝে একটা ভালোবাসার সম্পর্ক হয়। পরবর্তীতে আমরা বিয়ে করি। তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা ভার্সিটি লাইফের মতো এখনো জোরালো। স্কুল লাইফ থেকে এখন অবধি যার সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক আছে সে হচ্ছে ডা. শাওলি সরকার। ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। ওকে আমি আঁখি বলে ডাকি। এখনো আমাদের সম্পর্কটা ছোটবেলার মতোই আছে। পরবর্তীতে কলেজ লাইফে এসে আরেকজন বন্ধু পাই। ওর নাম শারমিন জামান লোপা। লোপা আমার পাশে ছায়ার মতো লেগে আছে। আমার অনেক বেশি বন্ধু নেই। তবে যে কয়েকজন আমার বন্ধু হয়ে ওঠে, তাদের সঙ্গে আজীবনের একটা সখ্য থাকে। প্রফেশনাল লাইফে দুজন মানুষ আমার বন্ধু হয়ে ওঠেন। একজন হচ্ছে সুমনা সোমা, অন্যজন নাদিয়া আফরিন। সোমা আমার থেকে বয়সে বড়। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা জমে উঠেছে দুর্দান্ত। আমরা একই প্রফেশনে আছি, কিন্তু কেউ কাউকে ঈর্ষা করি না। ‘ও আমার চক্ষু নাই’ ধারাবাহিক নাটকে কাজ করতে গিয়ে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। আমাদের জার্নিটা থেমে যায়নি এখনো। ২০২০ সালের দিকে নাদিয়া আফরিনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়। আমরা দুজন কাছাকাছি বয়সের। ও ডকুমেন্টারি এবং ফিকশন ডিরেকশন দেয়। ওকে আমি রেখা বলে ডাকি। আমি ওর একটা ডকুমেন্টারিতে কাজ করি। এটার শুটিং করতে গিয়ে প্রথম দিন আমাদের দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কারণটা ছিল ওইদিন অনেক বেশি রাত হয়ে গিয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম ওর সঙ্গে আর যোগাযোগ হবে না, কাজ হবে না। কিছুদিন পর নাদিয়া আমাকে ফোন করে। তারপর থেকে আমাদের মাঝে মধ্যে কথা হতে থাকে। একসময় ওর সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়। পরবর্তীতে ওর সঙ্গে আমার অনেক কাজ হয়েছে। সব সময় অপেক্ষায় থাকি কখন দুজনের একসঙ্গে কাজ হবে। একসঙ্গে কাজ হলে দুজন কাছাকাছি থাকা হয়, আড্ডা হয়।
মিডিয়াতে সজল ভাইয়া আমার বন্ধু
বিদ্যা সিনহা মীম, অভিনেত্রী
মিডিয়াতে আমার বন্ধু সজল নূর ভাইয়া। আমার ক্যারিয়ার যখন শুরু হয় তখন থেকেই ভাইয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ১৪-১৫ বছর হবে আমাদের বন্ধুত্ব। এত বছর পরও সম্পর্কটা আগের মতোই মজবুত আছে। আমার সব কথা ওনার সঙ্গে শেয়ার করি। আমরা একসঙ্গে অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। আমি কোনো একটা ভুল করলে সজল ভাই সেটি সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন। আমার ভালো কাজকে অ্যাপ্রেশিয়েট করেন তিনি।
সজল ভাইয়ার সঙ্গে আমার অনেক মজার স্মৃতি আছে। একবার একটা নাটকের শুটিং করতে গিয়ে মজার ঘটনা ঘটে। আমরা যেখানে শুটিং করছি তার পাশের একটা বিল্ডিংয়ে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে। ওই অনুষ্ঠানে গান গাইছিল একজন নারী কণ্ঠশিল্পী। আমরা শুটিং করতে করতে যখন বাড়ির নিচে নামলাম তখন সজল ভাই আমার হাত ধরে দৌড়াচ্ছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করছি কী হয়েছে। তখন বললেন, তুই আয়। পরে দেখি বিয়ে বাড়ির ওই বিল্ডিংয়ের লিফটে উঠে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের মধ্যে ঢুকে গেছেন আমাকে নিয়ে। তখন সজল ভাই বিয়ে বাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞেস করছেন, আচ্ছা এটা রফিকের বিয়ে না? এ কথা শুনে আমি থ হয়ে গেছি। পরে মেয়ের বাবা বলছেন, না বাবা এটা ওর বিয়ে। পরে আমরা সরি বলে ওখান থেকে যখন চলে যাচ্ছি এমন সময় মেয়ের বাবা-মা বলছেন, না না তোমরা যেও না। তোমরা যেহেতু আসছ মেয়েকে হলুদ দিয়ে যাও। আমি তো হাসি থামাতে পারছিলাম না তখন। পরে আমরা স্টেজে উঠে হলুদ মাখানো শেষ হলে ওনারা খাবার খেয়ে যাওয়ার অনুরোধ করতে লাগল। তখন সজল ভাইয়া বললেন, না, আমাদের আরেকটা বিয়ে আছে। ওই বিয়েতে যেতে হবে। লেট হয়ে যাবে।