আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন মানিকগঞ্জের দেবজ্যোতি

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০১:১১ পিএম

আবৃত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন মানিকগঞ্জের দেবজ্যোতি রায় বিশাল। ছবি : ভোরের কাগজ
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২৪ এ বাংলা কবিতা আবৃত্তিতে ‘ঘ’ বিভাগ থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন সরকারি বাঙলা কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও মানিকগঞ্জের সন্তান দেবজ্যোতি রায় বিশাল।
বাঙলা কলেজ সূত্রে জানা যায়, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ এ ক্যাম্পাস, উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ের গণ্ডি কৃতিত্বের সাথে পাড়ি দিয়ে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় দেশ সেরা আবৃত্তিকারের সাথে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এ প্রতিযোগিতায় বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ জোহরা দ্বিতীয় এবং চট্রগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী শুভ্রা চক্রবর্তী তৃতীয় স্থান দখল করেছেন।
এসময় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের আবৃত্তিশিল্পী, প্রশিক্ষক ও নাট্যনির্দেশক মীর বরকত, আবৃত্তি সংগঠন উদ্ভাসন-এর সভাপতি তামান্না তিথি, কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের সহ সভাপতি এনামুল হক বাবু।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, এমপি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোলেমান খানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, গ্রামের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও তাদের চাওয়াটাকে যদি আমরা প্রত্যাখ্যান করি, শিক্ষাকে যদি অভিজাত মানসিকতা সৃষ্টির একটা প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, তাহলে সেটা সমাজ ও রাষ্ট্রে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। সমাজের সবার লক্ষ্য যদি হয় গাড়ি- ঘোড়ায় চড়া, তাহলে গাড়ি তৈরি করবে কে? শুধু অভিজাত ও উচ্চ প্রশাসনিক পদ দিয়ে সমাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করা সম্ভব নয়। এজন্যই আমরা শিক্ষায় রূপান্তরের পথে হাঁটছি।
শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগের লক্ষ্যে শিক্ষাক্রমের রূপান্তর করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তত্ত্বীয় জ্ঞানের প্রায়োগিক দিকটা শেখালে শিক্ষা আনন্দময় হয়ে ওঠে। এজন্য শিক্ষাক্রম রূপান্তরের চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষকদেরও সেভাবে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক পরিবর্তনটা এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আজকে একজন শিক্ষার্থী যা শিখছে, ভবিষ্যতে তার প্রয়োজন নাও হতে পারে। ভবিষ্যতে নতুন যা আসবে, তা শেখার মানসিকতা থাকতে হবে।
প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমানে আমরা নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিশেষায়িত জ্ঞান দেয়ার চেষ্টা করছি। অথচ আমাদের প্রয়োজন উচ্চশিক্ষায় বিশেষায়িত জ্ঞান দেয়া। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় আমরা গতানুগতিক শিক্ষা দিচ্ছি। এটা থেকেও আমরা বেরিয়ে আসতে চাই।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম সামসুন নাহার এমপি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে পুরস্কার গ্রহণ করে দেবজ্যোতি রায় বিশাল জানান, এ পুরস্কার প্রাপ্তিতে তিনি অনেক আনন্দিত। এ বিজয়ের অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে তার বাবা সাংবাদিক সুরেশ চন্দ্র রায় ও মা গঙ্গা রানী সরকারের ঐকান্তিক অনুপ্রেরণা। এবং শিক্ষাগুরু সায়মা ফিরোজ মিতা ও শাহনাজ কাউসারের সঠিক দিক নির্দেশনা। এ অর্জনে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি জানিয়েছেন অশেষ কৃতজ্ঞতা। আগামীর সুদূর পথের যাত্রী হিসেবে তিনি সবার আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
আরো পড়ুন : ঢাবির ক্যান্টিনের তরকারিতে মিলল টাকা, মুহূর্তেই ভাইরাল
মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন জাহিদ জানান, দৈনিক ভোরের কাগজের মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি সুরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে বিশাল রায়ের এ সাফল্যে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। বিশালকে যোগ্য করে গড়ে তোলার পেছনে যাদের অবদান রয়েছে তাদেরকেও তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সরকারি বাঙলা কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সায়মা ফিরোজ মিতা দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, জাতীয় পর্যায়ে প্রথম হওয়া বেশ কষ্টসাধ্য একটি বিষয়। আমাদের কলেজ থেকে এবছর দেবজ্যোতি রায় বিশাল জাতীয় পর্যায়ে আবৃত্তিতে প্রথম হওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। বিশাল অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন ছেলে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিনা পরিশ্রমে অনেক মেধাবিরাও ঝড়ে যায়। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করলে তার আশানুরূপ একটি ফল অবশ্যই পাওয়া যায়। বিশাল তার এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করেন এই বিভাগীয় প্রধান।