এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানানো হয় গত এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) আইএমইডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১৭.৯৭ শতাংশ। তবে এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে গত ১২ বছরে বা এক যুগে কোনো অর্থবছরেই এ সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ২০ শতাংশের কম ছিল না।
এতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই-ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র ৫০ হাজার ২ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ১৭.৯৭ শতাংশ।
আইএমইডির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১২-১৩ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত কোনো অর্থবছরেই প্রথম ৬ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ২০ শতাংশের কম হয়নি। এর মধ্যে গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২২.৪৮ শতাংশ। তার আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৩.৫৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪.০৬ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৩.৮৯ শতাংশ।
এছাড়া ২০১৯-২০, ২০১৮-১৯ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে যথাক্রমে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২৬.৫৯, ২৭.৪৫ ও ২৭.০২ শতাংশ। আর ২০১৬-১৭, ২০১৫-১৬, ২০১৪-১৫, ২০১৩-২০১৪ ও ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের একই সময় এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল যথাক্রমে ২৭.২০, ২৩.৫৪, ২৭.৬৭ শতাংশ, ২৫ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ।
এদিকে গত ডিসেম্বর মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৫.৬৭ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। আর গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময় অর্থাৎ নভেম্বরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৫.৪২ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়নের এই ধীরগতি সম্পর্কে সম্প্রতি রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঐতিহাসিকভাবে অর্থবছরের শুরুতে দেশে এডিপি বাস্তবায়নের গতি ধীর থাকে। এর কারণ হিসেবে বর্ষা মৌসুম, প্রকল্প পরিকল্পনায় ধীরগতি, অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, লোকবল নিয়োগে ধীরগতিকে দায়ী করা হয়। এর সঙ্গে চলতি বছর যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও নানা অস্থিরতা।
গত সরকারের চলতি অর্থবছরের বাজেটকে অত্যন্ত উচ্চাভিলাসী উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এই বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাবে না। তাই বাজেটে এডিপির আকার কাটছাঁট করা প্রয়োজন। তবে নানা অস্থিরতায় এখনো এডিপির আকার কাটছাঁট না করতে পারায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীরগতিতে চলছে। তবে এবার বড় পরিমাণেই কাটছাঁট হতে পারে। কারণ চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়েও ধীরগতি চলছে।
তিনি বলেন, মূলত এডিপি বাস্তবায়ন দুটি জিনিসের ওপর নির্ভর করে। প্রথমত সরকার রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে কতটা জোগান দিতে পারবে সেটি; দ্বিতীয়ত বিদেশি দাতা গোষ্ঠীর অর্থছাড়ের ওপর। এ দুটি জিনিস নিশ্চিত না করতে পারলে এডিপি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এ বছর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই বিষয় দুটি বুঝে উঠতে খানিকটা সময় লেগেছে। তাই বাস্তবায়নেও শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে।
নানা খাতে সংস্কার চলছে; এডিপি বাস্তবায়নে কী কী সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার হয়তো সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে এখনো চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে যাতে বিলম্ব না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগে থেকেই পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।
মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাজস্ব ঘাটতি থাকায় কোনো বছরই শতভাগ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এবারও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে এবার মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপ থাকায় এডিপি অবশ্যই কাটছাঁট করতে হবে।