রপ্তানি বাড়লেও শঙ্কা কাটেনি

মরিয়ম সেঁজুতি
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : সংগৃহীত
নানা অস্থিরতার মধ্যেও পোশাক খাতে রপ্তানি আয় বাড়ছে। তবে এ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি আনলেও চাপমুক্ত হতে পারেননি পোশাক মালিকরা। কারণ, গত বছরের তুলনায় এবার রপ্তানি বাড়লেও এ খাতের উদ্যোক্তাদের আয় বাড়েনি; উল্টো খরচ বেড়েছে। এখন পর্যন্ত অক্টোবর মাসের বেতন দিতে পারেনি কয়েকটি পোশাক কারখানা। সরকার নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার পরও বেতনভাতা সংক্রান্ত নানা সমস্যায় কাটছেই না শিল্প খাতের অস্থিরতা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, এর নেপথ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং সদ্য ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধন রয়েছে। এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুৎ ও কাঁচামাল সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া এবং দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে বিপুলসংখ্যক শিল্প মালিকের ব্যাংক হিসাব জব্দের কারণে ব্যবসা গুটিয়ে যাওয়াও এ খাতে অস্থিরতা সৃষ্টির বড় কারণ।
তৈরি পোশাক কারখানাসহ উৎপাদনমুখী অন্যান্য শিল্পের অস্থিরতা কাটিয়ে দ্রুত স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন শিল্প খাত সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে অস্থিরতা কমে এসেছে। তবে পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি মনে হলেও সেটাকে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা হিসেবে বিবেচনা করার মতো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। তারা মনে করেন, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে আরো মনোযোগ দিতে হবে। কারণ দ্রুত এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে না পারলে দেশে বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে শ্রমিক অসন্তোষের তীব্রতা বেড়ে যাওয়া ও উৎপাদন ঘাটতির কারণে দেশি উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, হঠাৎ করে একসঙ্গে এতো ব্যয় বাড়লে পোশাক কারখানাগুলোর ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ ক্রমান্বয়ে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই বেশি প্রত্যাশা করলে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি হবে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের এ সদস্য (অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব) বলেন, কারখানা যদি বন্ধ হয়ে যায়; তাহলে মালিক-শ্রমিক সবারই আয়ের জায়গায় আঘাত আসবে। তাই সরকার যে বেতন বাড়ানোর কথা বলছে- সেটাকে সাধুবাদ জানানো উচিত। তিনি বলেণ, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট হয় ৪ শতাংশের মতো, সেখানে পোশাক খাতে ৯ শতাংশ- এটা খুবই ভালো। শ্রমিকরা মূল্যস্ফীতির কথা বলছেন, কিন্তু তা সাময়িক বিষয়, আবার নেমেও যাবে। সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এত বেশি প্রত্যাশা করা ঠিক হচ্ছে না। হাফিজুর রহমান বলেন, এমনিতেই পোশাক খাতে বার বার অস্থিরতার কারণে ক্রয়াদেশ অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। সুতরাং শিল্পটির স্বার্থেই বিষয়টিকে সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে হবে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তৈরি পোশাক শিল্প হচ্ছে সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো; রপ্তানি খাতে সর্বাধিক আয় এবং সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকারী শিল্প খাত এটি। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮২ শতাংশ আসে এ খাত থেকে এবং ৮১ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ হয় টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে। তাই দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ও প্রসারে পোশাক খাতের ভূমিকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ যাত্রা শুরুর পর থেকেই নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে এ খাতকে।
দীর্ঘদিন ধরে এ শিল্পকে ঘিরে
চলছে বিশৃঙ্খলা ও নানা অস্থিরতা। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, পোশাক শ্রমিকদের সময়মতো বেতনভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করা, বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধে অনিয়ম ও বিলম্ব, পোশাক কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি, ভবন ও অগ্নি দুর্ঘটনার প্রকোপ, শ্রমিকদের প্রতি ব্যবসায়ী-মালিকদের অপেশাদার আচরণ, নকল ও নি¤œ মানের পোশাক রপ্তানি, নারী শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, কাঁচামাল আমদানি জটিলতা, অনাকাক্সিক্ষত শ্রমিক ছাঁটাই প্রভৃতি। বাংলাদেশের অর্থনীতি এ সোনার ডিম পাড়া হাঁসের কাছ থেকে না চাইতেই অনেক বেশি পেয়ে গেছে বলেই এর যতœ ও তদারকির ব্যাপারে উদাসীন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. গোলাম মোয়াজ্জেম ভোরের কাগজকে বলেন, ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি পোশাক খাতে সৃষ্ট অস্থিরতা বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে কমে এসেছে। তবে আমি মনে করি, সামনে আবারো নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠানেই সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো যারা রয়েছেন- তারা দেশে নেই। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেকেই দেশের বাইরে আছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর লেনদেনে সমস্যা হচ্ছিল, সেগুলো এখনো রয়ে গেছে। ফলে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা আবার নতুন করে সামনে আসতে পারে। সুতরাং সে জায়গায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এবং পোশাক খাতের সংগঠনগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, যে ১৮ দফার বিষয়ে শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে- সেটিও একটি আশার দিক। এখান থেকে হয়তো আগামীতে শুধুমাত্র বকেয়া পাওনাই নয়; মজুরি, বাৎসরিক সমন্বয়ের বিষয়সহ অন্য যে সমস্ত পাওনাদি রয়েছে- সেসব বিষয়ে শ্রমিকরা আশাবাদি হতে পারবে। তাই নজর রাখতে হবে- যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন যেন নিশ্চিত করা যায়।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিশ্ববাজারে আমাদের রপ্তানি বেড়েছে, এটা আশার দিক। তবে রপ্তানি বাড়ার এ ধারাবাহিকতা যেন থাকে- সেদিকে নজর রাখতে হবে। আমাদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাগুলো এখনো কাটেনি। আবার বাইরের যেসব দেশে পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে- তার অনেক দেশেই মূল্যস্ফীতির সমস্যা রয়েছে। সবকিছু মিলে পরিস্থিতি স্থিতিশীল মনে হলেও সেটাকে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করার মতো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি বলে মনে করেন এ গবেষক।
দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই ন্যূনতম মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস এ পোশাক খাতে শুরু হয় নতুন অস্থিরতা। এরপর জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া, দেশজুড়ে কারফিউ- সর্বোপরি ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে অস্থিরতা। ক্ষমতার পালাবদলে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিনের মধ্যে আবার পোশাক শিল্পে চলে চরম অস্থিরতা। হঠাৎ করেই হামলা চালানো হয় কারখানায়। ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বৃহস্পতিবারও ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বার্ষিক বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে অন্তত ২০টি কারখানায় আবারো সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গত চার মাসের তিন মাসই এ রকম অস্থিরতায় কেটেছে পোশাক খাত। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ রপ্তানি আদেশ চলে যায় অন্য দেশে। ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেক ক্রেতা মুখ ফিরিয়ে নেয়; থমকে যায় আমদানি-রপ্তানি। তবে পোশাক শিল্পের সে অস্থির ভাব এখন অনেকখানিই কমে এসেছে। সব শিল্প এলাকার সবগুলো গার্মেন্টস কারখানায় কাজ চলছে পুরোদমে। ফলে স্বস্তি ফিরে এসেছে শিল্প মালিক, শ্রমিক এবং বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে।
এরপরও এ খাতে অনেক সংকট রয়ে গেছে। কিন্তু এর মধ্যেও দেশের তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে। পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলে রপ্তানি তো বটেই, নতুন বিনিয়োগও বাড়বে বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, তৈরি পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে গ্যাস, বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন। কারাখানা চালু রাখতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া ক্রেতা আকৃষ্ট করতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান তারা। শিল্প মালিক এবং খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিগত তিন মাস পোশাক শিল্পে যে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছিল তার জন্য মজুরি বা শ্রমিক সংক্রান্ত ইস্যু ছিল কম, একটি পক্ষের ইন্ধনেই দেশের পোশাক শিল্প খাতকে অস্থির করে রাখা হয়েছিল।
পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ গত ১৯ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অন্তত ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বৃহত্তম দুই বাজার থেকে বসন্ত ও গ্রীস্ম মৌসুমের ক্রয়াদেশ আসাও বেড়েছে। সেসব পণ্যেরও জাহাজীকরণ শুরু হওয়ায় রপ্তানি বেড়েছে। বিশেষ করে বড়দিনসহ বিভিন্ন উৎসব রয়েছে। এছাড়া বিগত সময়ের ক্রয়াদেশগুলোও এ সময় সম্পন্ন হয়েছে। এসব কারণে রপ্তানি বেড়েছে। তবে ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে এ খাতের উদ্যোক্তারা প্রত্যাশিত মাত্রায় ঋণ পাচ্ছেন না, সেই সঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা পণ্য উৎপাদনকে ব্যাহত করছে।
এদিকে, নীতিগত সমস্যা, অর্থায়নে বাধা, অবকাঠামোর অভাব ও পোশাকবহির্ভূত রপ্তানিকারকদের দুর্বল দর-কষাকষির ক্ষমতাকে রপ্তানি আয়ের বাধা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। দেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে ১১৮ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৪৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। পোশাকবহির্ভূত পণ্যের রপ্তানি ৮১ কোটি ১০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০০ কোটি ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৬১১ কোটি ৭১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। এক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এছাড়া শুধু নভেম্বরে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৩০ কোটি ৬১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ২৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে হলে শুরুতেই অভ্যন্তরীণ সিস্টেমগুলো বদলাতে হবে। একই ধরনের কাজের জন্য কয়েক টেবিল দৌঁড়াতে হয়। এটা বন্ধ করা দরকার। সরকার ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। এর বাস্তবায়ন দরকার। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা হয়রানি থেকে মুক্তি পেলে বিনিয়োগ বাড়বে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানির চিত্র দেখে উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরছে। বেশ কয়েক মাস ধরে নেতিবাচক অবস্থা থেকে এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে। এটা ভালো খবর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্ডারের অনেক পণ্য পাঠানো যায়নি। সেগুলো এখন পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি বাড়ার পেছনে এটি অন্যতম একটি কারণ।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নতুন নতুন অর্ডার আসছে। কিন্তু কম দামে পণ্য নিতে চাচ্ছে। শ্রমিক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে কিছু ক্রেতা। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বিশ্বনেতারা বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং কারখানায় গ্যাস সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আমরা ভালো অবস্থায় আছি। গ্যাস সরবরাহ আরো বাড়লে আমাদের রপ্তানি আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল এ বিষয়ে বলেন, কয়েক মাস পর রপ্তানি বাড়ছে- এটা ভালো খবর। তবে ‘রপ্তানির ভলিউম’ বাড়লেও কারখানার মালিকদের আয় বাড়েনি। বরং সুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ আরো বেড়েছে। তিনি বলেন, কিছু দিন আগের অস্থিরতার সুযোগে বিদেশি ক্রেতারা পণ্যের দাম কমিয়ে দিয়েছে। তবে যারা বায়ারদের লিডটাইম পূরণে বিমানে পণ্য পাঠিয়েছে তাদের আর্থিক লোকসান গুনতে হয়েছে। মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আমাদের রপ্তানিতে যে পরিমাণ রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল ভুল তথ্য সংশোধনের কারণে তা বছরের শেষ তিন মাসে তিন বিলিয়নের নিচে নেমে এসেছিল। সেই সময়ে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোসহ কয়েকটি কারণে আমরা কিছুটা চাপে ছিলাম। একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিতেও মন্দাভাব ছিল। এসব কারণে সবকিছু নিয়ে রপ্তানির গ্রোথ নেগেটিভ ছিল। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে চাঙ্গা ভাব রয়েছে। ফলে আমাদের রপ্তানিতেও সেই গ্রোথের প্রভাবে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের সঙ্গে তুলনা করার কারণে মনে হচ্ছে আমরা অনেক ভালো করেছি, আসলে তা নয়। কাগজে কলমে বাড়লেও আমাদের গ্রোথ স্বাভাবিক রয়েছে।
এ ব্যবসায়ী বলেন, পোশাক খাতে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। মাঝে মনে হয়েছিল অস্থিরতা অনেকটাই কেটেছিল। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। বেতন বাড়ানো নিয়ে আলাচনা হলো। শ্রমিক প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে সবার সম্মতিতে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হলো। এখন আবার এ বেতন কাঠামো মানছে না। পুরোটাই পরিকল্পনামাফিক এসব হচ্ছে বলে নিজের ধারণার কথা জানান এ ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেন, সবার আগে কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ অবকাঠামোরও উন্নয়ন দরকার।