বোতলজাত সয়াবিন তেলের হঠাৎ সংকট

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : সংগৃহীত
বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে রাজধানীর বাজারে। কয়েকটি দোকানে পাওয়া গেলেও বেশি দাম হাঁকাচ্ছে বিক্রেতারা আমদানিকারকরা জানান, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে তেল সরবরাহ কমেছে। তবে খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, রমজান আগে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আরো এক দফা দাম বাড়াতে সরবরাহ ঘাটতি তৈরি করেছে আমদানিকারকরা। অন্যদিকে সবজির বাজারেও আসেনি স্বস্তি। শীতকালীন সবজির সরবরাহ ভালো থাকলেও বেশির ভাগের দাম ৮০ টাকার উপরে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা, মোহাম্মদপুর, বসিলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ মুদি দোকান ঘুরেও পাওয়া যায়নি বোতলজাত সয়াবিন তেল। এক ও আধা লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট বেশি। কিছু দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল থাকলেও তা খুবই সীমিত। এক বা তিন লিটারের বোতল একেবারেই নেই। অনেক দোকানি শুধু নিয়মিত ও পরিচিত ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৭ টাকা, দুই লিটার ৩৩৪ টাকা ও ৫ লিটার ৮১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি দোকানে প্যাকেটজাত সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে। সেই দোকানগুলোতে নির্ধারিত দামে বা কিছুটা বাড়তি দামে তেল বিক্রি করা হচ্ছে।
দুই একটি দোকানে পাওয়া বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে রূপচাঁদা এক লিটার সয়াবিন তেলের গায়ের দাম ১৬৭ টাকা, দুই লিটার ৩৩৪ টাকা ও পাঁচ লিটার ৮১৮ টাকা। বেশির ভাগ দোকানে এ দামের চেয়ে ৫-১০ টাকা বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে বাজারে খোলা পাম অয়েল ১৬০-১৬২ এবং সয়াবিন ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট সবচেয়ে বেশি। ফলে বিক্রেতারা পর্যাপ্ত তেল পাচ্ছেন না। কিছু বিক্রেতার অভিযোগ, রমজান মাস শুরুর আগে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আরো এক দফা দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করে নিতে চাইছে কোম্পানিগুলো। মোহাম্মদপুর বাজারের মুদি দোকানদার রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে কোনো সয়াবিন তেল বাজারে ঢুকছে না। দাম বাড়ানোর জন্য কোম্পানি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।
বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্প্রতি পাম ও সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার। এতে প্রতি কেজি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক-কর ১০ থেকে ১১ টাকা কমানো হয়। তবুও সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়েনি। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের এক মুদি দোকানি নাম প্রকাশ না করে বলেন, অনেক দোকানে সয়াবিন তেল নেই। অনেকেই আবার মজুত করছেন, যেন দাম বাড়লে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। এসব কারণে ভোজ্যতেলের সংকট তৈরি হয়েছে।
এদিকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে তেল সরবরাহ কমেছে বলে দাবি তেল আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। তারা বলছেন, বিশ্ববাজারের হিসাবে লিটারে ১০-১৩ টাকা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় আমদানি কমেছে ২০ শতাংশের মতো। টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম গণমাধ্যমে জানান, সরকার শুল্ক-কর যা কমিয়েছে, তার চেয়ে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে বেশি। কোম্পানিগুলো লোকসানের ঝুঁঁকিতে থাকলেও সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে।
রাজধানীর কাঁচাবাজারে শীতের সবজি ভরপুর হলেও চড়া দাম। ৮০ টাকার উপরে বেশির ভাগ সবজি। বাজারে নতুন আলুর কেজি ১২০ টাকা আর করলার কেজি ১০০ টাকা। এছাড়া বরবটি, বিচিওয়ালা শিম, টমেটো, গাজর ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি নতুন আলু ১২০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, করলা ও শিম ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে প্রতি পিস ফুল কপি, বাঁধা কপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচা টমেটো ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, শালগম ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম কিছুটা কমলেও মাংসের দাম অপরিবর্তিত। বাজারে গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এদিকে গত সপ্তাহের মতো বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
এদিকে কারওয়ান বাজারের মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়, যেখানে গত সপ্তাহেও ছিল ৭০০ টাকা পর্যন্ত। শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এছাড়া পাঙাশ ১৭০-১৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০ টাকা, কই ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।