ঋণ খেলাপি কমাতে নতুন নীতিমালা করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১১:১৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপি কমাতে নতুন নীতিমালা জারি করেছে। নীতিমালায় নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে ঋণগ্রহীতার ব্যবসা, শিল্প বা প্রকল্প বন্ধ বা লোকসানে পড়লে ওই ঋণগ্রহীতাকে ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ করে এক্সিটের সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঋণগ্রহীতার ব্যবসা, শিল্প বা প্রকল্প কখনো কখনো বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে বন্ধ হয়ে যায় অথবা লোকসানে পরিচালিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা থেকে গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি আদায় বাধাগ্রস্ত হয়।
ফলে, ঋণ খেলাপি বা বিরূপ মানে শ্রেণিকৃত হয়ে যায়, যা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির পর্যায়ে পড়ে না। গ্রাহকের এমন আর্থিক অবস্থার কারণে ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা না থাকা এমন ঋণ এক্সিটের আওতায় আদায় বা সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
আরো পড়ুন: সোনালী লাইফের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের পুনর্বহালসহ ৬ দাবি
আরো পড়ুন: জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ল
এক্সিটের আওতায় ঋণ আদায় বা সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ব্যাংকগুলো এক্সিটের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি বা মানদণ্ড অনুসরণ করছে। তাই এসব সুবিধা দিতে একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রয়োজন। এ অবস্থা বিবেচনায় ঋণ আদায়ের মাধ্যমে ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ অব্যাহত রাখতে এবং ব্যাংকিং খাতে ক্লাসিফাইড ঋণ কমাতে একটি নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নির্দেশনাবলী হলো-
১. এই নীতিমালা এক্সিট প্রদানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে। এ নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংকসমূহ এক্সিট সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করবে যা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হবে। ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারণ করা নীতিমালায় এ সার্কুলারে উল্লেখিত শর্তের চেয়ে নমনীয় কোনো শর্ত যুক্ত করা যাবে না।
২. ভবিষ্যতে আদায়ের সম্ভাবনা কম এ ধরনের বিরূপমানে ক্লাসিফাইড ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে অথবা নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে প্রকল্প/ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে অথবা ঋণগ্রহীতার প্রকল্প/ব্যবসা বন্ধ করার ক্ষেত্রে নিয়মিত ঋণের এক্সিট সুবিধা প্রদান করা যাবে।
৩. বিদ্যমান ঋণস্থিতির ন্যূনতম ১০% ডাউন পেমেন্ট নগদে পরিশোধপূর্বক এক্সিট সুবিধা প্রাপ্তির আবেদন করতে হবে। ঋণগ্রহীতার আবেদন প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে ব্যাংক কর্তৃক তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটি কর্তৃক এক্সিট সুবিধা অনুমোদিত হতে হবে। তবে, মূল ঋণ অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত এক্সিট সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর দেয়া যাবে।
৫. এ সুবিধার আওতায় সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর- ৬ তারিখ: ২১ এপ্রিল ২০২২, বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নম্বর-১৮ তারিখ: ২৪ মে ২০২২ এবং তৎপরবর্তীতে জারিকৃত সার্কুলার লেটারের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে, মওকুফযোগ্য সুদ ভিন্ন ব্লকড হিসেবে স্থানান্তর করতে হবে এবং সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ/সমন্বয়ের পর ব্লকড হিসেবে রক্ষিত সুদ চূড়ান্ত মওকুফ হিসেবে গণ্য হবে।
৬. এক্সিট সুবিধার আওতায় এক বা একাধিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যাবে। একাধিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পরিশোধ সূচি নির্ধারণ করতে হবে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সাধারণভাবে ২ বছরের বেশি হবে না। তবে, পরিচালনা পর্ষদ যুক্তিসঙ্গত কারণ বিবেচনায় সর্বোচ্চ আরো ১ বছর সময় বৃদ্ধি করতে পারবে।
ইসলামি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক এ নীতিমালা অনুসরণ করে খেলাপিদের সুবিধা দিতে পারবে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।